ফের অবৈধ নাগরিকদের “পুশ ব্যাক” ইস্যুতে ভারত সরকারকে আক্রমণের জন্য বাংলাদেশকে সুযোগ করে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । গতকাল উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে প্রশাসনিক সভায় দাবি করেন যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যা করা হচ্ছে তা ‘বাড়াবাড়ি’। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। আমি রাজ্য পুলিশকে বলব, ভয় পাবেন না। একটু সক্রিয় হোন। তল্লাশি অপারেশনের ওপর জোর দিতে হবে।’ শুধু তাইই নয়, মমতা বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন । তিনি বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মহিলাদের এগিয়ে দিয়ে “প্রতিরোধ” গড়ে তোলার নামে কার্যত উসকানি পর্যন্ত দিয়েছেন । এদিকে মমতা ব্যানার্জির এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে “পুশ ব্যাক” ইস্যুতে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলি ।
আসলে, সুনালি খাতুন নামে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাসহ ৬ জনকে বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় । কিন্তু তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও পরিবারটির দাবি যে তারা ভারতীয় । অবশেষে মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় মানবিক কারনে আদালত তাকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় এবং মহিলাকে সম্প্রতি দেশে ফিরিয়েও আনা হয় । আর এটাকেই ইস্যু করে সোমবার কোচবিহার জেলায় প্রশাসনিক এক বৈঠকে মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেন যে “ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে” । যদিও এর আগেও তিনি একাধিক বার এই দাবি করেছিলেন । বিজেপি অভিযোগ করে যে মমতার “কোর ভোটব্যাংক” হল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। আর তাদের পুশ ব্যাক আটকাতেই এই মিথ্যা দাবি করেন তিনি ।
এদিকে সুনালি খাতুন নামে ওই মহিলাকে ফেরানোর বিষয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে “সত্য গোপন করার” অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি৷ তিনি বিষয়টি নিয়ে এক্স-এ লিখেছেন, ‘সুনালি খাতুন ফিরেছেন — কিন্তু সত্যিটা তৃণমূল চেপে যাচ্ছে। TMC এখন গল্প ছড়াচ্ছে যে “বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই নাকি বীরভূমের 6 জন বাঙালিকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল!” আর “বড় লড়াই করে সাংসদ সামিরুল ইসলাম তাদের ফেরত আনলেন!”
সত্য কী? পুরো ঘটনাটা মানবিক দৃষ্টিতে হয়েছে, রাজনৈতিক নয়। প্রথমে সুনালি খাতুনসহ ৬ জনকে নোটিশ করে শুনানির সুযোগ দেওয়া হয় । তদন্তের পর নিয়ম মেনে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠানো হয় । তারা দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করে — খারিজ ।
Supreme Court–এ যায় — আইনজীবী মামলাটা তুলে নেন । পরে High Court–এ নতুন মামলা । কলকাতা হাইকোর্ট ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় । কেন্দ্রীয় সরকার সেই নির্দেশকে Supreme Court–এ চ্যালেঞ্জ করে ।
Supreme Court কী বলেছে?
বিশেষ মানবিক কারণে — সন্তানসম্ভবা সুনালি ও তার শিশুকে আপাতত ভারতে ফিরিয়ে আনা । চিকিৎসা হোক । তাদের মামলা আবার শুনানি করা হোক । যদি তদন্তে তারা নাগরিক না প্রমাণিত হয়, কেন্দ্র সরকার আবার বাংলাদেশে পাঠাতে পারে । এটাই বাস্তব।
এটাই আদালতের ভাষা। এটাই সত্য।
তিনি লিখেছেন,তাহলে প্রশ্ন হলো—যদি এটাকে “তৃণমূলের বিশাল বিজয়” বলা হয়—তাহলে বাকি ৫ জন ফিরল না কেন? আরও যাদের পাঠানো হয়েছে, তারা ফিরছে না কেন? Supreme Court কি নাগরিকত্ব প্রমাণ ছাড়াই সবকেই ফিরিয়ে আনতে বলেছে? এই প্রশ্নগুলির জবাব সামিরুল ইসলাম বা তৃণমূল দেবে কি? নাকি আবার আবেগ-তামাশা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবে? সত্য একটাই — আদালত মানবিক কারণে ফিরিয়ে এনেছে। আইনি কারণে নয়।তৃণমূলের লড়াইয়ে নয়।
তবে বাস্তব যাই হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির এই বক্তব্যকে ফলাও করে প্রচার শুরু করেছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলি। সময়ের কন্ঠস্বর লিখেছে : ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যা করা হচ্ছে তা ‘বাড়াবাড়ি’।সোমবার (৯ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহারে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব কথা বলেন।বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। আমি রাজ্য পুলিশকে বলব, ভয় পাবেন না। একটু সক্রিয় হোন। তল্লাশি অপারেশনের ওপর জোর দিতে হবে।’
বাসিন্দাদের ওপর হয়রানির অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কোচবিহার একটি সীমান্ত জেলা। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে হবে। কোনো বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না। কেউ বাংলা বললেই সে বাংলাদেশি হয়ে যায় না। বাংলাদেশ একটি দেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ একটি রাজ্য। মমতা বলেন, উত্তর প্রদেশের অনেকে উর্দু বলেন। পাকিস্তানিরাও উর্দু বলেন। পাকিস্তানেও একটি পাঞ্জাব আছে। ভারতেও পাঞ্জাব আছে। দুই পাশের বাসিন্দারা পাঞ্জাবি বলেন। বাংলার বাসিন্দাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, অন্য কোনো রাজ্যের কোনো সংস্থা যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করে পশ্চিমবঙ্গে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। যদি কারও নাম (কোনো মামলায়) অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তবে তার তদন্ত করা উচিত। আসাম থেকে কয়েকজনকে বিদেশি আইন অনুযায়ী নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) সময় সব বিভাগকে বুথ স্তরের আধিকারিকদের (বিএলও) সঙ্গে সহযোগিতা করতে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন এবং জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন যেন নাম সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। অনেক নাম সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। অনেকে বাইরে (বাংলার বাইরে) বিয়ে করেছেন। এ ছাড়া পরিযায়ী শ্রমিকদেরও সমস্যা রয়েছে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে,ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে বলে আবারও মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যা হচ্ছে, তা বাড়াবাড়ি। সোমবার কোচবিহার জেলায় প্রশাসনিক এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে। মমতা আরও বলেন, কোচবিহার সীমান্ত জেলা। সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কেউ বাংলা বললেই সে বাংলাদেশি হয়ে যায় না।
তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশে অনেকেই উর্দুতে কথা বলেন, পাকিস্তানিরাও উর্দু বলেন। পাকিস্তানে পাঞ্জাব আছে, ভারতেও পাঞ্জাব আছে। কিন্তু শুধু বাংলার বাসিন্দাদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মমতার।এ অবস্থায় রাজ্য পুলিশকে ভয় না পেয়ে তল্লাশি অভিযান আরও জোরালো করার আহ্বান জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।।

