এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ নভেম্বর : গতকাল ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু তিনি সেখানে যান নি। কেন তিনি গেলেন না সে প্রসঙ্গে আজ সোমবার কলকাতা বিমানবন্দর তিনি বলেন, ‘কালকের অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ হলে আমি নিশ্চয়ই যেতাম, কিন্তু বিজেপির প্রোগ্রামে কীভাবে যাব? আমারও তো একটা আইডিওলজি আছে। আমি সব ধর্ম সব বর্ণকে সম্মান করি। কিন্তু এই শিক্ষা আমার পরিবার আমায় দেয়নি।’ পালটা প্রতিক্রিয়া শুভেন্দু অধিকারী বললেন, মুখ্যমন্ত্রীকে আমি হিন্দু বলেই মনে করি না ।’
আজ বিকেলে কলকাতার সল্টলেকে রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে মমতা ব্যানার্জির এই মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মঞ্চে বিজেপির কে ছিলেন ? কেউ চেয়ারে ছিলেন, কেউ মাটিতে বসেছিলেন । ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীকে যদি বিজেপি বলেন, তাহলে উনি বিজেপি । সাধ্বী ঋতম্ভরাকে যদি বিজেপি বলেন তাহলে উনি বিজেপি । যে সমস্ত সন্তরা ছিলেন, বক্তৃতা করেছেন তাদের যদি উনি বিজেপি ভাবেন তাহলে ওনারা বিজেপি । সনাতন সংস্কৃতিকে রক্ষা করার কাজ বিজেপি করার চেষ্টা করছে । তিনি কোন চশমা পরেছিলেন কালকে? কে খবর দিলেন ওনাকে ? আমরা তো হিন্দু হিসেবে গেছি । কেউ মন চেয়ে উঠিনি বক্তৃতাও করিনি । আমাদের অধিকারও ছিল।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আসল কথা উনি নিজে একজন হিন্দু বিরোধী । গীতা শব্দ টা ঠিক করে উচ্চারণ তিনি করতে পারবেন না । গীতার কতগুলো অধ্যায় আছে সেটাও যদি উনি বলে দিতে পারেন তাহলে অনেক কিছু হয়ে যাবে । অতএব উনি না গিয়ে ওই জায়গাটাকে পবিত্র রেখেছেন, এটা আমি একজন হিন্দু হিসাবে মনে করি । আর আয়োজকরা কেন ওনাকে ডেকেছিলেন সেটা আমি বলতে পারব না ওটা আয়োজকদের জিজ্ঞেস করাই উচিত।
তিনি বলেন,’আর মমতা ব্যানার্জিকে হিন্দুদের কোন কর্মসূচিতে ডাকাই উচিত নয় । কারণ মমতা ব্যানার্জি হিন্দুদের রীতিনীতি মানেন না । পিতৃপক্ষে কাঁচি নিয়ে ঘোরেন । অতএব এই মুখ্যমন্ত্রীকে আমি অন্তত হিন্দু বলে স্বীকার করি না। অন্য কেউ তার ব্যক্তিগত মত দিতে পারে । কিন্তু আমি অন্তত স্বীকার করি না ।’
বন্দেমাতরম গান নিয়েও “হিন্দু বিরোধী” মমতা ব্যানার্জিকে তুলোধুনো করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেব,’মুখ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় বন্দেমাতরম কে নিয়ে অনেকগুলি কথা বলে গেছেন । আমি গত কয়েকদিন ধরেই দেখছি, যেদিন বন্দেমাতরম এর স্বার্ধশতবর্ষ উদযাপিত হয় সেই দিন মমতা ব্যানার্জির মস্তিষ্কপ্রসূত রাজ্য সংগীত গাওয়ার নির্দেশনামা জারি করা হয়েছিল স্কুলগুলোতে । যাতে বন্দেমাতরম কাউকে গাইতে না হয় । এর মধ্যে দিয়ে তিনি বন্দেমাতরম, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র এবং সর্বোপরি ভারত মাতাকে অপমান করেছেন । বন্দে মাতরম হল সঞ্জীবনী মন্ত্র, এই মন্ত্র জাগরনের মন্ত্র, আর এই মন্ত্রকে তিনি কার্যত অপমান করেছেন ।’
তিনি বলেন,’আমি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছি । তিনি বারবার বলেছেন যে বন্দেমাতরম পুরোটা গাওয়া হয় না । কারণ সেখানে নাকি কিছু সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা আছে । ঠিক একইভাবে আজও উনি উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে বলেছেন যে বন্দেমাতরমকে পূর্ণাঙ্গ গাওয়া হয় না । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক করে দিয়েছিলেন কতটা গাওয়া হবে । এইটার মধ্য দিয়ে তিনি কি বলতে চেয়েছেন ? যে পোর্সেনটার কথা তিনি বলেছেন সেটা হল : তুমি বিদ্যা, তুমি ধর্ম
তুমি হৃদি, তুমি মর্ম/ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে/বাহুতে তুমি মা শক্তি/ হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি/তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে/ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরিনী ধারিনী/কমলা কমল দলবিহারিনী ।’
তিনি বলেন,’এই যে বন্দেমাতরম এর পূর্ণাঙ্গ অংশ, মা দুর্গার আরাধনা করা, মা দুর্গা শুধু সনাতনীদের আরাধ্য দেবী নন, মা দুর্গা শক্তি এবং আমাদের প্রেরণার আরাধ্যদেবী । তাই দুর্গোৎসবকে শারদোৎসবও বলা হয় । যাতে সর্ব ধর্ম সর্ব বর্ণ এই উৎসবে সামিল হয় ।’ মমতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি কি বলতে চেয়েছেন ? মন্দির মন্দির, মা দূর্গা, দশপ্রহরণীধারিণী, দুর্গতিনাশিনী,তুমি বা ভক্তি তুমি মা শক্তি প্রভৃতি এই কথাগুলো সাম্প্রদায়িক কথা ? এই মহিলাকে আপনি বাঙালি বলবেন ? এই মহিলাকে আপনি হিন্দু বলবেন ?’শুভেন্দু কটাক্ষ করে বলেন,’এবারে যেখানে ভোট প্রচার করতে যাবেন, গতবারে হুইল চেয়ার ছিল এবারে আশা করি ক্রাচ-ফ্রাচ জোগাড় করবেন । সেখানে এই গানটা ভালো করে ওনার কাছে বাজানো হবে ।’
তিনি বলেন,’মা দুর্গা সাম্প্রদায়িক ? দুর্গোৎসবে শুধু হিন্দুরা যোগদান করেন ? আপামর বাঙালি যোগদান করেন না ? অন্য ধর্মে বিশ্বাস করলেও দুর্গোৎসবে সামিল হন না ? পুজোতে হয়তো যান না । পুষ্পাঞ্জলি, সংকল্প আমরা করি । আরতি কেবলমাত্র আমরা সনাতন ধর্মীরা করি । কিন্তু উৎসব, প্রসাদ, আলোকজ্জ্বল মায়ের দর্শন এতো ভালো মণ্ডপ পুজোকে কেন্দ্র করে কালচারাল কম্পিটিশন-গান- আবৃত্তি-নাটক-নাচ-কবিতা এত কিছু হয় । মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্য কার্যত বন্দেমাতরম এবং ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের যে অপরূপ সৃষ্টি যার সঙ্গে মা দুর্গা, শক্তি এবং মন্দিরের সম্পর্ক রয়েছে তাকে অপমান করলে না একবার নয় বারে বারে ।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি জি কে আবারো ধন্যবাদ । আজ সংসদে মোদি জির বন্দেমাতরনের ব্যাখ্যা ভারতবাসীর বিশেষ করে বাঙালিরা হৃদয়ে গ্রহণ করেছে । তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রণাম এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি ।’ তিনি বলেন,’বন্দেমাতরমের মাধুর্য তার তাৎপর্য জাগরনের মন্ত্র একাত্মতার মন্ত্র আসমুদ্র হিমাচলকে এক সুতোতে বাধার মন্ত্র বিকশিত ভারতের মন্ত্র যা বাংলা সৃষ্টি করেছিল ।’।

