এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ ডিসেম্বর : নওসাদ সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট ও আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই- ইত্তেহাদুল মুসলিমীনর প্রভাব এরাজ্যের মুসলিমদের মধ্যে যথেষ্ট আছে । পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক প্রথম দলের একমাত্র বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি নিজে হলেও তেলেঙ্গার হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক ওয়াইসির দলের এরাক্যে কোনো সাংবিধানিক প্রতিনিধি নেই । তবে বিহারে ৫ আসনে জিতে উজ্জীবিত ওয়াইসি পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ভোটে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ার করার ডাক দিয়ে রেখেছেন । তার টার্গেট মূলত মুসলিম অধ্যুষিত মালদা,মুর্শিদাবাদের মত জেলাগুলি । এখন এই দুই মুসলিম দল যদি ভোটার ময়দানে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপায় তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম ভোটব্যাংকে বড়সড় থাবা বসাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । বিগত তিন মেয়াদের রাজত্বে মূলত মুসলিম ভোটের উপর একছত্র আধিপত্যের কারনে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শি অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছেন মমতা ব্যানার্জি । কিন্তু বিজেপি যেভাবে হিন্দু ভোটব্যাংককে একজোট করে ফেলেছে,তারপর যদি নওসাদ সিদ্দিকি ও আসাদুদ্দিন ওয়াইসিরা মুসলিম ভোটব্যাংকে থাবা বসায় তাহলে মমতার চতুর্থ বারের মত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যেতে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল । এমতাবস্থায় তৃণমূলের প্রথম কাজ হল, তাদের কোর ভোটব্যাংক অর্থাৎ মুসলিম ভোটারদের ভাগ না হতে দেওয়া ।
তাই নওসাদ সিদ্দিকি ও আসাদুদ্দিন ওয়াইসির প্রভাব কমাতে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরকে মমতা ব্যানার্জি খুব সন্তর্পনে ব্যবহার করছেন বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপির যুবমোর্চার সহ-সভাপতি ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি এই বিষয়ে এক্স-এ একটা বড়সড় পোস্ট করেছেন । তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ — নাটকটা বুঝতে শিখুন, ভাবতে শিখুন । হুমায়ুন কবীরকে ঘিরে তৃণমূলের হঠাৎ ‘কঠোরতা’ নিয়ে রাজ্যে নতুন এক রাজনৈতিক নাটক সাজানো হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে—এই নাটকের স্ক্রিপ্ট অনেক আগেই লেখা হয়েছিল।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছিলেন, তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ব বাংলার ‘ব’ বসালেই মানুষও সেই প্রতীক মাথায় নিয়ে ঘুরবে। বাস্তব কিন্তু অন্যরকম।
বাবরি নিয়ে তাঁর অবস্থান সকলেই জানে—হুমায়ুন সেখানে নতুন কিছু বলেননি। অথচ যখন তিনি হিন্দুদের ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেওয়ার মতো ভয়ংকর উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন, তখন মমতার পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ? তাঁর মূল্যবান সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক।’
আজ হুমায়ুন কবিরকে আজীবন সাসপেন্ড করার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন,’আজ হঠাৎ কঠোরতা কেন?কারণ সংখ্যালঘু সমাজের বড় অংশ এখন বুঝতে পারছে—মমতার আমলে তাদের অবস্থার কোনও প্রকৃত উন্নতি হয়নি। সেই ভোটভিত্তি ক্রমশ অন্যদিকে সরে যাচ্ছে। আর ঠিক এই পরিস্থিতিকে ঠেকাতেই হুমায়ুনকে কেন্দ্র করে নতুন নাটক নামানো হয়েছে।এই নাটকের উদ্দেশ্য মাত্র একটাই—সংখ্যালঘু ভোটকে এক জায়গায় আটকে রাখা,যাতে তারা বিকল্প শক্তির দিকে না যায়।’
তরুনজ্যোতির কথায়,’হুমায়ুনের সাম্প্রতিক ‘অভিযোগ’- গুলোও এই স্ক্রিপ্টেরই অংশ—তিনি বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মসজিদ তৈরিতে বাধা দিচ্ছেন, সরকারি টাকায় মন্দির হচ্ছে, এমনকি দাবি করছেন—মমতা তাঁকে খুন করাতে পারেন।আর অন্যদিকে বলছেন—ডাইরেক্ট বিজেপির কেউ মুখ্যমন্ত্রী হলে তাঁর আপত্তি নেই! বক্তব্য যত নাটকীয়, এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ততটাই স্পষ্ট।’
তিনি মনে করছেন,’ইতিমধ্যে ISF এবং AIMIM বিভিন্ন এলাকায় সদস্যসংখ্যা বাড়াচ্ছে—এটাই তৃণমূলের প্রকৃত ভয়। তাই সংখ্যালঘু ভোটভিত্তি ধরে রাখতে এখন হুমায়ুন জরুরি চরিত্র। এবার আসা যাক ফিরহাদ হাকিমের কথায় । হুমায়ুনকে বহিষ্কার করতে প্রেস কনফারেন্স করলেন ফিরহাদ হাকিম।
কিন্তু এই হাকিমকেই কি আমরা চিনি না? “যারা ইসলাম নিয়ে জন্মায়নি তারা দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। “পশ্চিমবঙ্গের ৫০% এর বেশি মানুষ একদিন উর্দুতে কথা বলবে।” “Dawat-e-Islam”–এর মতো বক্তব্য।
এসব কি ধর্মনিরপেক্ষতার উদাহরণ? তবুও আজ তিনি বলছেন—হুমায়ুন নাকি ধর্মনিরপেক্ষতাকে আঘাত করেছেন! সত্যি বলতে—পুরোটাই সাজানো নাটক। তৃণমূলের রাজনৈতিক খেলা—হিন্দু ও মুসলমান দুই পক্ষের সাথেই প্রতারণা । হিন্দুদের সামনে এক নাটক,মুসলমানদের সামনে আরেক নাটক। হিন্দুদের বোকা বানানোর জন্য একরকম স্ক্রিপ্ট,আর মুসলমানদের বছরের পর বছর টুপি পরিয়ে, ভয়ের রাজনীতি দেখিয়ে ধরে রাখার জন্য আরেক স্ক্রিপ্ট। আজকের পুরো ঘটনাই সেই বড় রাজনৈতিক খেলাটার নতুন অধ্যায়। নাটক চলছে… শেষ দৃশ্য এখনও সামনে আসেনি।’।

