এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাবনা,০৩ ডিসেম্বর : নামাজে অসুবিধার সৃষ্টি করার অজুহাতে ১০ কুকুর শাবককে বস্তায় ভরে জলে ডুবিয়ে মারলো বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদীর নিশি বেগম নামে এক মহিলা । খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে কুকুর মা ফিরে এসে শিশুসন্তানদের দেখতে না পেয়ে পাগলের মত গোটা এলাকায় ছুটাছুটি করে৷ সন্তানদের খোঁজে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল মা কুকুরটি। উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় তলায় এ দৃশ্য দেখা গেছে। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে নেটিজেনরা ।
গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মা কুকুরটি উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় তলায় ইউএনওর ঘরের সামনে ঘুরঘুর করছে। মা কুকুরকে সেখান থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি কয়েকজন কর্মচারী। দুপুর ১২টার দিকে কুকুরটিকে নিচে নামান কয়েকজন। বিকেল পর্যন্ত কুকুরটি উপজেলা পরিষদের আশপাশে ঘুরঘুর করছিল।
নিষ্পাপ ৮টি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যাকারী নিশি বেগম ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্ত নিশি বেগমের স্বামীকে তার বরাদ্দকৃত সরকারি বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে তার কোয়াটার থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷।
কুকুরছানা হত্যাকারী অভিযুক্ত নিশি বেগম সাফাইয়ে বলেন, বাচ্চাগুলো এবং কুকুরটি আমার কোয়াটারের সিঁড়ির পাশে থাকত। বাচ্চাগুলো আমাদের নামাজের খুবই ডিস্টার্ব করত, তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি গাছের পাশে রেখে আসি। এরপর হয়তো কোনোভাবে পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। আমি নিজে বাচ্চাগুলোকে পুকুরে ফেলে দিইনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, এটা খুবই অমানবিক। মা কুকুর ইতোমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে আমাদের লোকজন চিকিৎসা দিয়েছে। প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এর অধীনে কুকুরছানা হত্যার অপরাধে মামলার একটি বিধান রয়েছে। কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি বেগমের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এটি চরম অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ। শাস্তিস্বরূপ ওই কর্মকর্তাকে এক দিনের মধ্যে সরকারি কোয়ার্টার ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মা কুকুরটির চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে নামাজের অসুবিধার অজুহাতে কুকুর শাবক হত্যার ঘটনা এই প্রথম নয় বাংলাদেশে । এর আগেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে । প্রতিবাদ করলে উলটে প্রতিবাদীদের হুমকি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।।

