এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৫ নভেম্বর : মমতা ব্যানার্জিকে চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী করার শপথ নেওয়া পুলিশ কর্মীদের নির্বাচনী কাজ থেকে সরানোর জন্য কমিশনের কাছে আবেদন জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় সম্প্রতি আয়োজিত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে তাঁরা হলেন ডিসিপি, কলকাতা পুলিশ শান্তনু সিনহা বিশ্বাস, এসআই রাহুল আমিন আলি শাহ, কলকাতা পুলিশের ইন্সপেক্টর বিজিতাস্ব রাউতের বক্তৃতার ক্লিপিংস সাংবাদিক বৈঠকে তুলে ধরে এই দাবি জানান তিনি ।
প্রথমে স্ক্রীনে কলকাতা পুলিশের ডিসিপি শান্তনু সিনহা বিশ্বাসের ভিডিও রেকর্ড চালানো হয় । যেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘সামনে ইলেকশন আসছে । অনেকে অনেক কথা বলবে । ডিএ নিয়ে অনেক কথা চলছে । আপনারা শুনে রাখুন আমরা কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সেন্ট্রাল রেটে ডিএ আমাদের সকলের দাবি আছে । সকল একজোট হোন, এক ছাতার তলায় থাকুন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, আমাদের অভিভাবিকা, ভারতের কান্ডারী ; এই দপ্তরের কোন অসুবিধা থাকবে বলে আমি মনে করি না । সুতরাং আগামী দিনের তার আশীর্বাদে সমস্ত কিছু পূরণ হবে । আগামী দিন সেই ঋণ পরিশোধ করার দিন, আপনারা তৈরি হন ।’ এরপর তিনি “জয় জগন্নাথ” ও “জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন ।
এরপর এসআই রাহুল আমিন আলি শা’য়ের রেকর্ড চালানো হয় । তিনি বলেন,’উনি নারী উনি পারেন । আর আমরা পারি । তার ইচ্ছা,তার ভাবনা, বৃহত্তর পরিবারকে লড়াইয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । যিনি আমাদের কথা প্রতিনিয়ত ভাবছেন আগামী দিনে আমরা তাকে দেখতে পারি । সেই ভাবনা আজকের এই সম্মেলন থেকে আমরা নিয়ে যাব ।’
সব শেষে কলকাতা পুলিশের ইন্সপেক্টর বিজিতাস্ব রাউতের বক্তব্যের রেকর্ড চালানো হয় । তাকে বলতে শোনা যায়,২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এক একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ একশ্রেণীর সংবাদপত্র একশ্রেণীর কুচক্রী তারা আমাদের রাজ্যের ভালো চায়না । তারা পুলিশকে হেও প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, তারা আপনাদের মনোমল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে যে পুলিশের কাজ ভালো নয় ।’ শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে তিনি বলেছেন,’কাঁথিতে তার বাড়ির সামনে দিয়ে এসে দীঘাতে তার জবাবটা দিয়ে গেলাম । লড়াই কিন্তু শুরু হল । এই লড়াই চলবে ২৬ এর মে পর্যন্ত । যেদিন আমরা নবান্নে মমতা ব্যানার্জিকে চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাঠাতে পারবো সেই দিন আমাদের এই লড়াই শেষ হবে ।’
তার বক্তব্যের পর শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এই মালটার নাম হচ্ছে বিজিতাস্ব রাউত। একে বেআইনিভাবে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর করেছে।বিজিতাস্ব রাউতের কনস্টেবল থেকে ইনস্পেক্টর হয়েছে । প্রচুর জায়গা কিনেছে৷ মেয়ের চাকরি নিয়েছে । আমার কাছে সব তথ্য আছে৷ পরিনতি খুব খারাপ ।’ তিনি আরও বলেন,’প্রথমে যাকে দেখলেন সে ব্যাটা একটা ডাকাত । মমতার বাড়ির বাজারহাট করে । সাব ইন্সপেক্টর থেকে এসিপি হয়েছে । ওর নাম শান্তনু সিনহা বিশ্বাস। মমতার বাড়িতে সকালে মাছ, আলু, মুলো বাজার করে দেয় ।’
শুভেন্দু বলেন,’তারা শুধু পুলিশ মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন তাই নয়,তারা আগামী নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জিকে চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান । এই বক্তব্যর মধ্য দিয়ে তাদের নিরপেক্ষতা, দায়বদ্ধতা, এবং শৃঙ্খলাপরায়ন একটা সরকারি পরিচালিত একটা পুলিশ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত মর্যাদা নষ্ট করে তারা স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে একটা নজির সৃষ্টি করলেন । এটা কোথাও হয়নি ।’
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনারকে লেখা চিঠিতে ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সরকারি গাইড লাইনও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তাতে তিনি কলকাতা পুলিশের ৩২৪ জন, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ৫৯১ জন, মোট ৯১৫ জনের কথা উল্লেখ করেছেন । তিনি বলেন,এই সমস্ত পুলিশকর্তাদের মধ্যে এমনও পুলিশ রয়েছেন, যাঁরা ইউনিফর্ম পরেন না।
নির্বাচন হতে এখনও মাস ছয়েক দেরি রয়েছে। তবুও এত তাড়াতাড়ি কেন কমিশনকে চিঠি! সে প্রশ্নেরও উত্তর নিজেই দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন,’পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কোনও সদস্যকে মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট চালু হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রত্যাহার হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন ও নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে রাখা যাবে না। আমি তিন মাস আগেই নির্বাচন কমিশনকে জানালাম। তারা কী ব্যবস্থা নেবেন, সেটা তাঁদের ফুল বেঞ্চের ব্যাপার। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করবেন কিনা, সে ব্যাপারে ভাববেন।’ শুভেন্দু বলেন,’পুলিশের কিছু কাজ রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজ নয়। অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ আনবেন কিনা, তারা যাতে এ বিষয়ে পরিকল্পনা করার সময় পায়, তার জন্য আগে থেকএই জানানো হল । ফেব্রুয়ারি মাসে এমসিসি চালু হওয়ার পর এই বিষয়টা জানানো উচিত। কিন্তু তারা যাতে আগে থেকে পরিকল্পনা করতে পারে, তার জন্যই আগে জানানো।’।

