“পিরিতে মজিলে মন” দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা হঠকারিতায় এমন কিছু বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, যাতে তাদের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে মাথা ঠুঁকে ফাটিয়ে ফেললেও অতীতের অবস্থায় তারা আর ফের ফিরে আসতে পারে না । গভীর অন্ধকার ভবিষ্যৎ তাদের জীবনে গ্রাস করে । এমনই ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের নাটোরের অনিন্দিতা দাস ওরফে প্রিয়াঙ্কা নামে হিন্দু গৃহবধূর সঙ্গে । স্বামী ও এক শিশু পুত্রসন্তানকে ফেলে প্রেমের টানে কলেজের প্রেমিক মনিরুজ্জামান ওরফে রবিনের সঙ্গে পালিয়েছিল প্রিয়াঙ্কা । প্রেমিকের কথায় নিজের শিশুসন্তানকেও ত্যাগ করে ওই মহিলা । তারপর ধর্ম পরিবর্তন-নিকাহ করে প্রেমিককে । কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দ্বিতীয় স্বামী তাকে গভীর অন্ধকারে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় । নেটিজেনদের যাকে “হাতে হারিকেন ধরিয়ে” দেওয়া হিসাবে অবিহিত করেছেন ।
অনিন্দিতা দাস ওরফে প্রিয়াঙ্কার ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী, তার বাড়ি বাংলাদেশের নাটোরে । নাটোর এন এস গভর্মেন্ট কলেজে পড়াশোনা শেষে তিনি রাজশাহী কলেজে মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। অন্যদিকে মনিরুজ্জামান ওরফে রবিনের পড়াশোনা রাজশাহী কলেজে । বাংলাদেশের আমুনা টিভি (Amuna TV) নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলের গতকালের(২৪ নভেম্বর) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে মুসলিম ছেলে রবিনের। পিয়াঙ্কার একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। স্বামী নিয়ে তার সুখের সংসার ছিল। সেখান থেকে রবিনের স’ঙ্গে জ’ড়ি’য়ে পড়ে পরকীয়ায়। একটা সময় রবিন বলে তাকে মুসলিম হতে হবে তাহলে সে বিয়ে করবে। তিনি সেটাও মেনে নেয়। স্বামীকে ডিভোর্স দেন । রবিনের কথায় সন্তানকেও তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেয়। ঢাকায় একটি বাসা ঘরব করে থাকা শুরু করে এই দুজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,কিছুদিন পর রবিন তার গ্রামে চলে যায়। এরপর থেকে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দিশেহারা হয়ে রবিনের গ্রামের ঠিকানা বের করে সেখানে গিয়ে বিয়ের জন্য অনশন শুরু করে প্রিয়াঙ্কা । কিন্তু তার আসার কথা শুনে রবিন বাড়ি থেকে পালি/য়ে যায়। প্রথমে ঘরে থাকলেও পরে রবিনের মা ও বোন মিলে প্রিয়াঙ্কাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর প্রিয়াঙ্কা বাড়ির সামনে বসে শুরু করে অনশন। তিনি বলেছেন, আমার আর যাওয়ার জায়গা নেই। এখানে বসে থাকবে যতদিন রবিন না আসে। প্রিয়াঙ্কা গ্রামে আসার পর এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
অনেকে ঘটনাটি লাভ জিহাদ হিসাবে বর্ণনা করেছেন । তবে এই প্রবনতায় যেটা উল্লেখযোগ্য যে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ওই সমস্ত মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হয় । শুধু বাংলাদেশ নয়,ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে এমন অসংখ্য নজির সামনে এসেছে । যা ঘিরে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সম্পর্কের নামে প্রতারণা, প্রভাব বিস্তার, মানসিক নিয়ন্ত্রণ এবং ধর্মান্তরকে কেন্দ্র করে একাধিক তরুণীর জীবন বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করছেন—শিক্ষিত হিন্দু মেয়েরা আধুনিক জীবন, সম্পর্ক ও স্বাধীনতার প্রতি সজাগ হলেও প্রতারণামূলক সম্পর্কচক্রের কৌশল সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা সহজে টার্গেট হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ও ভারতে “লাভ জিহাদ”-এর সাম্প্রতিক কিছু নজির
বাংলাদেশের বরিশালের বাকেরগঞ্জে ঠিক এমনই আলোচনায় এসেছে সৃষ্টি সাহা নামের এক কলেজছাত্রীর ঘটনা। ৬ নভেম্বর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে সান মাঝি নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে করেছেন। পরিবারের দাবি—সম্পর্কের আড়ালে তাকে বিভ্রান্ত করা ও মানসিকভাবে প্রভাবিত করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সৃষ্টি স্থানীয় কলেজে পড়তেন এবং পরিবারের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের সেহোর জেলাতেও দেখা গেছে প্রায় একই ধরনের আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা। সেখানকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয় তরুণ মডেল খুশবু আহিরওয়ারের মৃতদেহ। মুসলিম যুবক মহম্মদ কাসিমের সঙ্গে লিভ–ইন সম্পর্কে ছিলেন খুশবু। পরিবারের অভিযোগ—সম্পর্কের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলা হয়েছিল এবং তার মৃত্যু সেই মানসিক চাপেরই করুণ পরিণতি। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই মডেলিং শুরু করেছিলেন হতদরিদ্র পরিবারের খুশবু, ভবিষ্যৎ নিয়ে তার বড় স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সম্পর্কের জটিলতায় তা ভেঙে পড়ে।
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে, যেখানে আইনজীবী শেখ মনোয়ার আলমের অফিস থেকে উদ্ধার হয় ল–কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সোনিয়া হালদারের ঝুলন্ত দেহ। প্রতিদিন প্র্যাকটিসের জন্য ওই আইনজীবীর কাছে যেতেন সোনিয়া, আর পরিবারের অভিযোগ—সেই সুযোগই দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। মাত্র ২১ বছর বয়সী সোনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া । যদিও এই ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ায় আসেনি । মূলত রাজ্য বিজেপি ঘটনাটি নিয়ে সোচ্চার হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ।।

