এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৪ নভেম্বর : ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে সাধারণত সরকারি কর্মীদের নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন । তবে সরকারি কর্মীর অপ্রতুলতার কারনে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগের কথা বলা হয়েছে । কিন্তু রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে যে অনেক জায়গায় সরকারি কর্মী থাকলেও চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে ভোটের কাজে ৷ এমতবস্থায় এসআইআর প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে একটি সংস্থার মাধ্যমে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (ডিইও) ও সফ্টওয়্যার ডেভেলপারের কাজের জন্য চুক্তি করেছে কমিশন । সেই সাথে বেসরকারি আবাসনে ভোটকেন্দ্র তৈরির বিষয়েও কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলে খবর । আর এতে বেজায় চটেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি কমিশনের বিরুদ্ধে বিজেপিকে সন্তুষ্ট করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন । অন্যদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য নাম না করে “আই প্যাক”-এর মাধ্যমে ডিইও এবং বিএসকে কর্মী নিয়োগ করে এসআইআর প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন মমতা ব্যানার্জিকে ।
আজ সোমবার দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের উদ্দেশে দেওয়া চিঠিতে মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন,’প্রিয় শ্রী জ্ঞানেশ কুমার, আমি আপনাকে দুটি বিরক্তিকর কিন্তু জরুরি ঘটনা সম্পর্কে লিখতে বাধ্য হচ্ছি, যা আমার নজরে এসেছে এবং যা আপনার তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের দাবি রাখে: ১) পশ্চিমবঙ্গের সিইও কর্তৃক জারি করা প্রশ্নবিদ্ধ আরএফপি সম্প্রতি জানা গেছে যে পশ্চিমবঙ্গের সিইও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের (ডিইও) নির্দেশ দিয়েছেন যে তারা এসআইআর-সম্পর্কিত বা অন্যান্য নির্বাচন-সম্পর্কিত ডেটা কাজে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং বাংলা সাহিত্য কেন্দ্র (বিএসকে) কর্মীদের নিয়োগ না করতে। একই সাথে, সিইওর অফিস এক বছরের জন্য ১,০০০ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ৫০ জন সফটওয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের জন্য একটি অনুরোধের প্রস্তাব (আরএফপি) জারি করেছে।এটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ। যখন জেলা অফিসগুলিতে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ পেশাদার এই ধরনের কাজ সম্পাদন করছেন, তখন একই কাজ পুরো এক বছরের জন্য বহিরাগত সংস্থার মাধ্যমে আউটসোর্স করার জন্য সিইওর উদ্যোগের কী প্রয়োজন? ঐতিহ্যগতভাবে, মাঠ অফিসগুলি সর্বদা প্রয়োজন অনুসারে তাদের নিজস্ব চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি কর্মী নিয়োগ করে। যদি জরুরি প্রয়োজন হয়, তাহলে ডিইওএস-এর কাছে এই ধরনের নিয়োগের সম্পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। তাহলে, কেন মাঠ অফিসগুলির পক্ষে সিইওর অফিস এই ভূমিকা গ্রহণ করছে? ইতিমধ্যে নিযুক্ত এবং প্রস্তাবিত সংস্থার মাধ্যমে নিযুক্তদের মধ্যে পরিষেবার শর্তাবলী বা চুক্তিগত বাধ্যবাধকতার মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আশা করা যায়? এই অনুশীলন কি কোনও রাজনৈতিক দলের ইচ্ছায় কায়েমি স্বার্থ পূরণের জন্য করা হচ্ছে? এই আরএফপি-এর সময় এবং পদ্ধতি অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের জন্ম দেয়৷’
প্রতিক্রিয়ায় অমিত মালব্য লিখেছেন,’আপনার চিৎকার করা চিঠির জবাব কখনও দেওয়া হবে কিনা অথবা কখন দেওয়া হবে তা সিইসি নির্ধারণ করার সময়, প্রথমে আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি স্পষ্ট করতে চাইতে পারেন : এটা আশ্চর্যজনক যে আপনি ডিইওদের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি আরএফপি জারি করার বিরোধিতা করছেন। এটা সর্বজনবিদিত যে আপনার রাজনৈতিকভাবে চুক্তিবদ্ধ একটি সংস্থা একাধিক সরকারি সংস্থায় প্রবেশ করেছে, অফিসিয়াল সভায় বসেছে এবং নিয়মিতভাবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছে। এমনকি এমন অভিযোগও রয়েছে যে এই সংস্থার সদস্যদের নীরবে ডিইও এবং বিএসকে কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাই আঙুল তোলার আগে, দয়া করে DEO এবং BSK অপারেটরদের নির্বাচন করার জন্য আপনি যে প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করেছিলেন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করুন। যদি CEO আজ RfP জারি করে থাকেন, তাহলে তিনি আপনার নিজস্ব আর্থিক নিয়ম অনুসারেই তা করেছেন। ন্যায্যতা এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য তৈরি পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য আপনার চিৎকার করার কোনও কারণ নেই – যে নীতিগুলির প্রতি আপনি কখনও কোনও সম্মান প্রদর্শন করেননি । রেকর্ডের জন্য, বিহার এই সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে DEO নিয়োগ করেছে, এবং অন্যান্য রাজ্যগুলিও একই কাজ করছে। তাই আমাদের তৈরি ক্ষোভ থেকে মুক্তি দিন।’
মমতা ব্যানার্জি দ্বিতীয় যে বিষয়টি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠিতে লিখেছেন, সেটি হল : ‘বেসরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সের ভেতরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব আমার নজরে আরও এসেছে যে নির্বাচন কমিশন বেসরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সের ভেতরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কথা বিবেচনা করছে এবং জেলা প্রশাসকদের সুপারিশ প্রদান করতে বলা হয়েছে।’ তিনি লিখেছেন,’কোনও সরকারি বা আধা-সরকারি জায়গাতেই ভোটকেন্দ্র হওয়া প্রয়োজন। বেসরকারি কোনও ক্ষেত্র সাধারণ ভাবেই এই কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। এর নেপথ্যে একটা যুক্তিযুক্ত কারণও রয়েছে। মূলত, এই সকল জায়গাগুলিতে নিয়ম লঙ্ঘনের সম্ভবনা বেশি থাকে।’ কিন্তু এরপরেও কেন কমিশন কীভাবে বেসরকারি আবাসনে ভোটকেন্দ্র তৈরির কথা ভাবছে, তা নিয়েই চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী। দাবি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের হস্তক্ষেপের।
এই বিষয়ে অমিত মালব্য লিখেছেন,’দ্বিতীয়ত, যেকোনো প্রাঙ্গণকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করা যেতে পারে যদি তা সকল ভোটারের জন্য ভোটদানের সুবিধা নিশ্চিত করে। দিল্লি এবং অন্যান্য স্থানে বহুতল ভবনেও একই রকম বুথ স্থাপন করা হয়েছে। তাহলে হঠাৎ করে কেন আপনাকে বিরক্ত করছে যে নির্বাচন কমিশন ভোটদানকে আরও সুবিধাজনক করার জন্য অতিরিক্ত বুথ তৈরি করছে বলে ? বিদ্যমান ভোটারদের কাছ থেকে কোনও বুথ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। তাহলে ব্যাখ্যা করুন: আপনাকে ঠিক কী বিরক্ত করছে – ভোটদানের সুবিধা বৃদ্ধি, নাকি আপনি যে আখ্যানটি তৈরি করার চেষ্টা করছেন তা ধোপে টিকছে না বলে ?’

