এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান)২৪ নভেম্বর : পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত নগরী মন্দারমণিতে সমুদ্রে একাই স্নান করতে নেমেছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের ২৪ বছরের যুবক স্বরাজ বসু ওরফে রানা । তারপর তিনি নিখোঁজ হয়ে যান । ভাতাড় বাজার রবীন্দ্রপল্লীর বাসিন্দা স্বরাজ বসুর বাবা-মা’য়ের কাছে খবর আসতেই তারা ছুটে যান মন্দারমণি । বুকে একরাশ আশা ছিল তাদের যে ছেলে জীবিত বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন । রাতভর সমুদ্র সৈকতে ছেলেকে হন্নে হয়ে খুঁজেছেন দম্পতি । কিন্তু আজ সোমবার সকালে জোয়ারে ভেসে এল তরতাজা যুবক ছেলের নিথর দেহ৷ সেই সময় যুবক স্বরাজের হাত দুটি ছিল বুকের কাছে জড়ো করা । মুখের মধ্যে লেশমাত্র ছিল না মৃত্যুযন্ত্রণার কোনও চিহ্ন৷ সদ্য গোঁফ গজানো যুবককে ওই অবস্থায় দেখে অনেকের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে৷ ছেলের নিথর দেহ দেখে শোকে কার্যত পাথর হয়ে যান বাবা-মা।
ভাতাড় বাজার রবীন্দ্রপল্লীর বাসিন্দা স্বরাজ বসুর বাবা পুলিশ অফিসার, মা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী । একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা-মায়ের চোখের মণি ছিলেন স্বরাজ। ছোট থেকেই অসম্ভব মেধাবী ছিলেন ওই যুবক। এলাকাতে মেধাবী ছাত্র বলেই খ্যাতি ছিল তার । ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেই কলকাতার একটা নামী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়ে যান স্বরাজ । ভালো বেতন । বন্ধুমহলে পরিচিত ছিলেন প্রতিভাবান, প্রাণবন্ত এবং মাঝে মাঝেই একটু বেশি সাহসী বলে। কখনও কখনও বেপরোয়াও হয়ে উঠতেন।
শনিবার কর্মস্থল থেকে চার বন্ধু ও এক বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে যান মন্দারমণি। বন্ধুদের দাবি, সবাই মিলে সৈকতে বসে গল্পগুজব করছিলেন তখন একাই সমুদ্রে স্নান করতে নামেন রানা । তারপর হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হয়ে যান । অনুমান যে ভাঁটার সময়েই সমুদ্রে নেমেছিলেন যুবক । ওই সময় জল সরে যায় গভীরের দিকে । টান থাকে প্রবল। সেই টানে দূরে চলে গিয়েছিলেন স্বরাজ। তারপরে আর উঠতে পারেননি । দু’দিন ধরে ভাঁটা-জোয়ারের খেলার মধ্যে দেহটি কখনও গভীরে, কখনও তীরে ভেসে আসে। তাই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । তবে সমুদ্রের কাছে পরাজিত হলেও, স্বরাজের দেহভঙ্গিই যেন বলছিল— শেষ মুহূর্তেও তিনি ছিলেন নির্ভীক। ময়নাতদন্তের পর ছেলের মৃতদেহটি ভাতারে বাড়ি ফিরিয়ে আনছেন শোকবিহ্বল রানার বাবা-মা । এই খবর আসতেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা ।।
।

