এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৩ সেপ্টেম্বর : সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পেরে বাঁকুড়ার এক প্রতিবন্ধী শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়াল ভাতারের সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের সদস্যরা । সোমবার ‘ভাতার পূর্ব বর্ধমান গ্রুপ’ নামে ওই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের একাধিক সদস্য গাড়ি ভাড়া করে বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার বড় গোবিন্দপুর (রাজখামার) গ্রামে গিয়ে কৃপাবিভা মাহান্ত(৭) নামে ওই শিশুর বাড়িতে যান । তাঁরা শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী ওই শিশুটির জন্য একটি নতুন হুইলচেয়ার নিয়ে যান । পাশাপাশি দুর্গোৎসবের জন্য পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য তাঁরা নতুন পোশাক উপহার দিয়ে আসেন । ভাতারের যুবকদের এই মানবিকতায় আপ্লুত শিশুটির পরিবারের লোকজন ।
জানা গেছে,গোবিন্দপুর (রাজখামার) গ্রামের বাসিন্দা পেশায় সাইকেলের মেকানিক মিলন মাহান্তর মেয়ে কৃপাবিভা । কৃপাবিভা ও তার যমজ বোন কৃতিরীপা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়াশোনা করে । মিলনবাবুর বাড়িতে রয়েছে তাঁর সাইকেল মেরামতির দোকানটি । সেই উপার্জনে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি অতিকষ্টে সংসার চালান ।
মিলনবাবু জানান,তাঁর মেয়ে কৃপাবিভা জন্মগত প্রতিবন্ধী । দু’পায়ের উপর কোনও জোর নেই । হাঁটু ছেঁচড়ে চলে । এছাড়া মুখ দিয়ে সারাক্ষণ লালা বের হয় । স্নায়ূরও সমস্যা রয়েছে তাঁর মেয়েটির । তিনি বলেন, ‘আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও মেয়ের যথাসম্ভব চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম । মেয়েকে বাঁকুড়া,ঝাড়গ্রাম এমনকি কলকাতাতে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করিয়েছি । কিন্তু চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আমার মেয়ে আর সুস্থ হবে না ।’ তিনি বলেন, ‘এই শারিরীক অবস্থার মধ্যেও মেয়ের পড়াশোনার অসম্ভব ঝোঁক । কৃতিরীপার সঙ্গে হাঁটু ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে সে স্কুলে যায় । হাঁটুর চামড়া কেটে রক্তারক্তি হয়ে গেলেও স্কুল যেতে ছাড়ে না কৃপাবিভা । তাই মেয়েকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার খুব ইচ্ছা করত । কিন্তু অর্থাভাবের কারনে মেয়েকে হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারিনি ।’
ভাতার পূর্ব বর্ধমান গ্রুপের এডমিন হুম কুমার রানা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে শিশুটির একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল । ওই ভিডিওর সুত্র ধরেই তার সম্পর্কে সবিস্তারে জানতে পারি । তবে ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলাম না । কারন ওই পোস্টে কোনও ঠিকানার উল্লেখ ছিল না । শেষে বর্ধমান শহরের বাসিন্দা অর্নব দাস নামে আমার এক বন্ধুর সহায়তায় শিশুটির ঠিকানা জানতে পারি । তারপর গ্রুপের নিজেদের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে মেয়েটির জন্য একটি হুইল চেয়ার ও পরিবারের জন্য কিছু উপহার সামগ্রী কিনে দিয়ে আসি ।’
কৃপাবিভার বাবা মিলন মাহান্ত বলেন, ‘এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বাসিন্দা হুম কুমার রানা ও অমিত সরকারবাবুরা এদিন এসে মেয়ের জন্য একটা নতুন হুইল চেয়ার কিনে দিয়ে গেছেন । সেই সঙ্গে বাড়ির সবার জন্য ওনারা পূজোর জামাকাপড়ও কিনে দিয়ে গেলেন । ওনাদের এই মানবিকতা আমরা কোনও দিন ভুলবো না । ইশ্বর ওনাদের মঙ্গল করুন ।’।