এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ নভেম্বর : নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের এক মহিলা বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজের চাপের জেরে আত্মঘাতী হয়েছেন । দু’পাতার সুইসাইড নোটে তিনি নিজের মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ি করে গেছেন । আজ শনিবার মৃতা রিঙ্কু তরফদার(৫৪) নামে ওই বিএলও-এর ঝুলন্ত দেহ নদীয়ার চাপড়া ব্লকের বাঙালঝি গ্রামে নিজের বাড়ির শোবার ঘরে দেখতে পায় পরিবারের লোকজন । মহিলার সুইসাইড নোটটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি “উদ্বেগ” প্রকাশ করে লিখেছেন,’আজ কৃষ্ণনগরে আরও একজন বিএলও, একজন মহিলা প্যারা-শিক্ষিকা, যিনি আত্মহত্যা করেছেন, তার মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এসি ৮২ চাপড়ার ২০১ নম্বর পার্টের বিএলও, শ্রীমতি রিঙ্কু তরফদার, আজ তার বাসভবনে আত্মহত্যা করার আগে তার সুইসাইড নোটে (কপিটি এখানে সংযুক্ত) নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করেছেন। আর কত প্রাণ যাবে? এই এসআইআর-এর জন্য আরও কতজন মারা যেতে হবে? এই প্রক্রিয়ার জন্য আমরা আরও কত মৃতদেহ দেখতে পাব? এটি এখন সত্যিই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে!!’
জানা গেছে,মৃতা রিঙ্কু তরফদারের আদি বাড়ি নদিয়ার চাপড়া ব্লকের বাঙালঝি গ্রামে। তবে গত ১৫ বছর হয়েছে কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলায় নতুন বাড়ি করে বসবাস কর ছিলেন৷ সেখানেই থাকতেন স্বামী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে । তিনি পার্শ্বশিক্ষিকার চাকরি করতেন চাপড়া বাঙালঝি স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে। চাপড়া বাঙালঝির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ২০১ নম্বর বুথে বিএলও-এর দায়িত্ব পান তিনি । পরিবারের দাবি, গননা ফর্ম বিতরণের পর সংগ্রহের কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন রিঙ্কুদেবী । কিন্তু তিনি কম্পিউটার ব্যবহারে সেভাবে অভ্যস্ত না হওয়ায় ডিজিটাইজেশনের কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল । এনিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন তিনি । কাজে ত্রুটিবিচ্যুতি হলে জেলে যেতে হবে, এই আশঙ্কায় রিঙ্কুদেবী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি পরিবারের৷
সুইসাইড নোটে রিঙ্কু তরফদার লিখে গেছেন, ‘আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী । আমি কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না, খুবই সাধারণ মানুষ । কিন্তু এই অমানুষিক কাজের চাপ আমি নিতে পারছি না । আমি একজন পার্শ্বশিক্ষিকা, বেতন পরিশ্রমের তুলনায় খুবই কম । কিন্তু আমাকেও এরা ছাড় দিল না৷’ প্রথম পৃষ্ঠার একবারে উপরে তিনি লিখে গেছেন, ‘আমি বাঁচতে চাই । আমার পরিবারে কোন অভাব নাই । কিন্তু এই সামান্য চাকরিটার জন্য এরা আমাকে এইভাবে ভরাডুবির মাধ্যমে মরতে বাধ্য করল ।’
উল্লেখ্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বারবার অভিযোগ করছেন যে বিহার সরকার ১০০০ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর দিচ্ছে না । যে কারণে বিএলওদের উপর চাপ পড়ে যাচ্ছে । মৃতা রিঙ্কু তরফদারের পরিবারও প্রশ্ন তুলেছেন যে প্রশাসনের শীর্ষ পদে যারা কর্মরত আছেন তাদেরকে ডিজিটাইজেশনের দায়িত্ব না দিয়ে কেন কম্পিউটারে অনভ্যস্ত বিএলও-দের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ?
Author : Eidin.

