এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম (পূর্ব বর্ধমান),২০ নভেম্বর : ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে সেনা জওয়ান পদে যোগদান করেছিলেন । দেশ সেবার কাজে কোনো গাফেলতি ছিল না । যুদ্ধেও গিয়েছিলেন। কর্মজীবনে নির্ভিকভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন । তারপর ১৯৮৮ সালে অবসর নেন। এখন বয়স ৭৮ বছর । কিন্তু শরীরে কোথাও বার্ধক্যের ছাপ নেই । সমান শক্তসমর্থ তিনি । পেনশন পান ৷ আর তিনি হলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের কুমোরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন সেনাকর্মী বিপত্নীক বৃদ্ধ শান্তিকুমার দাস । কিন্তু গত বুধবার থেকে এই বৃদ্ধ এলাকায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন। কারন হঠাৎ করেই নিজের আগাম শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তিনি । সাদামাটা ভোজ নয়, রীতিমতো এলাহি আয়োজন । গোটা গ্রামজুড়ে নিমন্ত্রিত ।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই খেয়াল চাপলো মাথায় ? উত্তরে শান্তিকুমার যা জানিয়েছেন তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মত । কারন তার মনে একটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে কিছুদিন ধরে । আর সেটা হল, তিনি মারা যাওয়ার পর হয়ত ছেলেরা ঠিকমত শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না করে গচ্ছিত টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেবে । তাই আগাম নিজের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করে গেলেন বলে তিনি জানান । তবে এটাকে তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না বলে ‘জীবন মহোৎসব অন্নদান’ হিসাবে অবিহত করেছেন ।
কেতুগ্রামের কুমোরপুরের দাসপাড়ায় বাড়ি শান্তিকুমারবাবুর । স্ত্রী লক্ষীদেবী বছর আষ্টেক আগে মারা গেছেন । দুই ছেলের মধ্যে বড়ছেলে বাবলু চাষবাস করেন। ছোট ছেলে পূরণ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ভিনরাজ্যে থাকেন। বাড়িতে রয়েছেন পুত্রবধূ ও নাতিনাতনিরা । নিজেই রান্না করে খান। নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। মাঝেমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যান। তারমধ্যে শান্তিকুমারের সবচেয়ে বেশি শান্তির জায়গা বৃন্দাবন। মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে থাকেন৷ সৎ ও ধার্মিক মানুষ শান্তিকুমার । তবে ভীষণ জেদি। পরমুখাপেক্ষী হয়ে তিনি থাকতে চাননা। নিজে যেটা সিদ্ধান্ত নেন সেটাই করেন।
একদিন হঠাৎ তিনি ঘোষণা করেন যে নিজের আগাম শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ভোজের আয়োজন করবেন । আর এই সিদ্ধান্ত নিতেই আয়োজন শুরু করে দেন বৃদ্ধ শান্তিকুমার । বাড়ির সামনে খাটানো হল নিমন্ত্রিতদের খাওয়ানো জন্য সামিয়ানা । হালুইকর ভাড়া করে আনা হল।বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই দুদিন ধরে পেটপুরে গ্রামবাসীদের ভোজ খাওয়ালেন তিনি। নিজে নিরামিষাশী। কিন্তু গ্রামবাসীদের জন্য তিনি মাছ থেকে খাসির মাংস সবেরই ব্যবস্থা করেন।বুধবার মেনুতে ছিল ভাত,ডাল,বেগনি, পোস্ত,নবরত্ন তরকারি, মাছ,চাটনি,পাঁপড় , মিষ্টি ইত্যাদি। বৃহস্পতিবার খাসির মাংস ভাত খাওয়ান। ডাল, তরকারি, মিষ্টি,পাপড়,দই সবই ছিল। বুধবার থেকে এদিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুদিন ধরে গ্রামবাসীদের জন্য ভোজের আয়োজন করেন । নিমন্ত্রিত ছিলেন গ্রামের ১২০০ মানুষ । এমনকি নাতিদের আবদার মেনে ডিজেও ভাড়া করা হয়েছিল । খরচ হয়েছে সর্বসাকুল্যে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ।
আগাম শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ভূরিভোজনের আয়োজনের বাখ্যা দিতে গিয়ে শান্তিকুমার দাস বলেন,’গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে যেকোনও অনুষ্ঠানে আমার নিমন্ত্রণ থাকে। আমি সবার বাড়িতে খেতেও যাই। কিন্তু আমার মৃত্যুর পর বাড়ির লোকজন খাওয়াবে কিনা নিশ্চয়তা নেই। তাই আমি আগাম খাওনোর ব্যাবস্থা করে গেলাম ।’ তবে এই অনুষ্ঠানকে “শ্রাদ্ধানুষ্ঠান” বলতে আপত্তি রয়েছে তার । শান্তিকুমারবাবু বলেন, ‘শাস্ত্র বলছে, মানুষকে অন্নসেবা করালে পুন্য অর্জন হয়। বৃন্দাবনে গিয়ে এটাই শিখেছি। তাই শ্রাদ্ধ টাদ্ধ নয়, ‘জীবন মহোৎসব অন্নদান’ করে গেলাম জীবিত থাকতে থাকতে ।’।
