দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৩ সেপ্টেম্বর : উঠতে-বসতে-খেতে-শুতে গিয়ে আচমকা মুখ দিয়ে বেড়িয়ে পড়ছে অদ্ভুত শব্দ । তবে মুখের মধ্যে কোনও খাদ্যবস্তু রেখে দিলে বা কোনও খাবার খাওয়ার পর সাময়িক এই সমস্যা থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি মিলছে । কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার শব্দ বেড়িয়ে পড়ছে মুখ দিয়ে । এমনই এক “বিচিত্র রোগ”-এ ভুগছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বড়বেলুন গ্রামের বাসিন্দা বছর ৪৩ এর কেনারাম ঘোষ । তিনি জানান,চিকিৎসক দেখাচ্ছেন । ওষুধও খাচ্ছেন । কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না । এদিকে তাঁর এই অদ্ভুত শব্দের কারনে বিব্রত পরিবারের লোকজন । এছাড়া রাস্তা দিয়ে চলার সময় তাঁকে অনেকে হকার বলে ভুল করছেন । জানতে চাইছেন তিনি কি সামগ্রী বিক্রি করেন । এখন এই রোগ থেকে কোনও রকমে নিস্তার পাবার পথ খুঁজছেন ভাতারের ওই প্রৌঢ় ।
জানা গেছে,ভাতার থানার বড়বেলুম গ্রামে বড়বেলুন-১ পঞ্চায়েত কার্যালয়ের সামনেই বাড়ি কেনারাম ঘোষের । বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা বামাচরণ ঘোষ,স্ত্রী সুভদ্রাদেবী,ছেলে সুধাময়(২১) ও মেয়ে শিবানী(১৮) । সুধাময় ভূগোলে অনার্স স্নাতক । শিবানী এবারে মাধ্যমিক উত্তীর্ন হয়েছে । কেনারামবাবুর মা বিমলাদেবী সাড়ে ৪ বছর আগে মারা গেছেন ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন,একই রঙের জামা প্যান্ট ও পলিথিনের চটি পড়ে ঘুরে বেড়ান ওই ব্যক্তি । আর রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে একটানা তাঁর মুখ দিয়ে ‘এ-এ-ও-ও-উ-উ” জাতীয় শব্দ বের হয় । সোমবার দেখা গেল ময়লা চিকুটি জামা প্যান্ট পড়ে ভাতার বাজারের রামকৃষ্ণপল্লি এলাকায় বর্ধমান-কাটোয়া সড়ক পথ থেকে হেঁটে যাচ্ছেন কেনারাম ঘোষ । মাঝে মাঝেই তাঁর মুখ দিয়ে বেড়িয়ে পড়ছে ‘এ-এ-ও-ও-উ-উ” জাতীয় শব্দ । এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কেনারামবাবু বলেন, ‘বিগত ৭-১০ দিন ধরে আমার মুখ দিয়ে আচমকা এই শব্দ বেড়িয়ে পড়ছে । চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না । তবে খাওয়া দাওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য এই সমস্যা থাকে না । তারপর আবার শুরু হয় । এছাড়া যদি বিড়ি পান করি তাহলে কমে যায় । কিন্তু টানা বিড়ি পান করা সম্ভব নয় । তাই মুখে এক টুকরো শশা বা অন্য কিছু রেখে দিই ৷ তাতে কিছুটা কাজ হয় ।’
দেখুন ভিডিও :
তিনি বলেন, ‘ভাতার বাজারের এক চিকিৎসকের কাছে দেখিয়েছি । ওষুধও খাচ্ছি । কিন্তু সুরাহা কিছু হচ্ছে না ।’
তিনি জানান, তাঁর স্নায়ূর সমস্যা ছিল । ঘুম হত না ।প্রায় ৫ বছর ধরে তিনি এই সমস্যায় ভুগেছেন । শেষে গ্রামের বড় মা কালীর কাছে পূজো দিয়ে তিনি সুস্থ হন । কেনারামবাবু বলেন, ‘আমার আরএমপি (RMP),আইআরএমএ(Indian Rural Medical Association) এর ডিপ্লোমা আছে । প্রাইভেট প্রাকটিসও করি । ওই উপার্জনে ১৫ কাঠা জমিও কিনেছি । পৈতৃক দেড় বিঘা জমিও রয়েছে । ২ টি পুকুরের অংশ রয়েছে । এছাড়া ১১ কাঠা জমি ভাগে চাষ করি । চিকিৎসা ও চাসবাস করে সংসার চালাই । তবে বর্তমান সমস্যার কারনে রোগীদের সামনে আমায় লজ্জিত হতে হচ্ছে ।’
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উনি মানসিকভাবে অসুস্থ । ভাতার বাজারের জনৈক ব্যাবসায়ী শান্তি মালিকের কথায়, ‘কেনারামবাবু একজন শিক্ষিত মানুষ । উনি স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ করতেন । কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে সেই কাজ হাতছাড়া হয়ে যায় । তারপর থেকেই তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা যায় । তবে মুখে আওয়াজ করার লক্ষ্মণ ছিল না । সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে । ওনাকে ভালো জায়গায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত পরিবারের সদস্যদের ।’।