এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৫ নভেম্বর : শ’খানেকের জনতা বাজনা বাজিয়ে দলবেঁধে সড়কপথ ধরে এগিয়ে আসছে ৷ মুহুর্মুহু পোড়ানো হচ্ছে আতসবাজি । তাদের উচ্ছ্বাস দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে যে তারা হয়ত বর বা কনেযাত্রীর অংশ । কিন্তু কাছে যেতেই ভুল ভাঙে । দেখা যায় যে ভিড়ের মাঝে বাঁশের দোলায় চাপিয়ে আনা হচ্ছে একটি মৃতদেহ । সাদা কাপড় ও ফুলে ঢাকা দেহটি বিচালির দড়ি দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা । অর্থাৎ এটি শবযাত্রা । মৃতদেহটি গ্রামের পাশে দাহ করতে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীরা । আজ শনিবার দুপুরে এমনই দৃশ্য দেখা গেলো পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার-কামারপাড়া রোডে । ভাতার গ্রামের বাউড়িপাড়ার বাসিন্দা মিলন সর্দার (৭৫) নামে এক মহিলা বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও রোগে ভুগে মারা গেছেন আজ ভোর রাতে । তাই বাউড়িপাড়ার পার্শ্ববর্তী সাহাদিঘি শ্মশানে বৃদ্ধার দেহটি দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু শোকের মধ্যেও আনন্দ উচ্ছ্বাস কেন ? উত্তরে বৃদ্ধার এক নাতি জানান যে এটিই ছিল তার ঠাকুমার শেষ ইচ্ছা ।
জানা গেছে,মৃতা মিলন সর্দারের চার ছেলে । তাদের মধ্যে বড় ছেলে অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও নাতি নাতনিরা রয়েছেন পরিবারে । দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বৃদ্ধা । তার উপর অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বেধেছিল । সব মিলিয়ে ভুগছিলেন অনেকদিন ধরে । শুক্রবার বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ বোধ করেন ওই বৃদ্ধা ৷ প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাতার ব্লক হাসপাতালে। সেখান থেকে চিকিৎসকরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দেন। কিন্তু আজ ভোর রাতের দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান । এদিন সকাল নটা নাগাদ বাড়িতে মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় । দুপুরে শবযাত্রা বের হয় ।
মৃতার নাতি সূর্য রাউত বলেন,’ঠাকুমার ইচ্ছা ছিল যে তাঁকে দাহ করতে আসার সময় যেন সকলে আনন্দ করে শ্মশানে নিয়ে যায় । এতে তাঁর আত্মার শান্তি পাবে । তাই আমরা ঠাকুমার শেষ ইচ্ছাপূরণের জন্য এভাবে দাহ করতে আসি।’
জানা গেছে, এদিন সকাল নটা নাগাদ বাড়িতে দেহ আনার পর বৃদ্ধার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কেউ শোক করেননি৷ পরিবর্তে মৃতার নাতিরা তাদের ঠাকুমার শেষযাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা চালান৷ ভাড়া করে আনা হয় ব্যাণ্ড পার্টি । কিনে আনা হয় প্রচুর আতসবাজি । এরপর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা মিলে বাজি ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস করতে করতে বৃদ্ধার দেহ বাঁশের দোলায় চাপিয়ে পার্শ্ববর্তী শ্মশানে নিয়ে যায় । স্থানীয় যুবক লোকনাথ সর্দার,মিলন সর্দাররা বলেন, ‘ঠাকুমা খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন৷ ব্যয়বহুল চিকিৎসা করার সামর্থ্য তো পরিবারের নেই ৷ আরও কিছুদিন ভুগলে আরও কষ্ট পেতেন৷ তাই মারা গিয়ে উনি রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৷’ তবে তারা আফশোস করে জানান, এত প্রবীণ পাড়ায় আর কেউ নেই । জানা গেছে,শবদাহ শেষে ভোজের আয়োজনও করেছিলেন মৃতার নাতিরা ।।
The report is written by journalist Dibyendu Roy. He has been associated with print and online media for more than two decades.

