এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,১৪ নভেম্বর : বাংলাদেশের যশোরে একটা অদ্ভুত তালাকের খবর পাওয়া গেছে । যেখানে তিন বছর বয়সী মেয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত । এই রোগের প্রকোপে তার গোটা শরীরের চামড়া অস্বাভাবিক রকম সাধা হয়ে গেছে । আর এই কারনে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দুবাই পালিয়ে গেছে । এখন অন্ন সংস্থান করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে গেছেন শিশুটির মা মনিরা খাতুন ।
জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার বাউলিয়া চাঁদপাড়া গ্রামের মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে ২০২০ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কুয়াদা বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের মনিরা খাতুনের। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তাদের জন্ম হয় তাদের মেয়ে আফিয়া । শিশুটি ভূমিষ্ট হওয়ার পরেই চিকিৎসকরা জানান যে সে বিরল অ্যালবিনিজম রোগে আক্রান্ত । এই রোগের উপসর্গ হল গায়ের চামড়া অস্বাভাবিক রকম সাদা হয়ে যাওয়া।কিন্তু আফিয়ার গায়ের রং “অতি ফর্সা” হওয়ায় তাকে অস্বীকার করেন বাবা মোজাফফর। এমনকি স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে অন্য জায়গায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, মাস আষ্টেক আগে স্ত্রী মনিরাকে তালাক দিয়ে দুবাইয়ে পালিয়ে যায় মোজাফফর।
মনিরার অভিযোগ,’যখন বাচ্চা হয়েছে, মাতৃসেবাই হয়েছে। যখন বের হলাম সবাই বাচ্চাটাকে দেখল, কিন্তু ওর বাপ দেখল না। পরে আসল, দেখল কিন্তু কোলে নিল না। বাপেরাই তো প্রথমেই বাচ্চাকে কোলে নেয়। কিন্তু জন্মের পর বাচ্চাটাকে কোনোদিন কোলেই নেয়নি আমার স্বামী । আমি কোথায়? এই বাচ্চাটা এমন হয়েছে আমার মাও নেই, যাওয়ারও পথ নেই। আল্লাহ বাচ্চাটা দিয়েছে, এখন আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় যাব?’ তিনি আরও বলেন,’হঠাৎ করে বলতেছে, আমারে রাখবে না। কেন রাখবে না? বাচ্চা এমন হয়েছে বলে? বাচ্চাটা কি আমি সৃষ্টি করেছি? না সে করেছে? আল্লাহ সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ যদি এমন দেয়, সে অপরাধ কি আমার? পরে তালাক দিয়ে দিল। প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা দেবে বলেছিল, কিন্তু এক টাকাও দেয় না। অনেক কষ্টে জীবন যায়। রাতে ঘুমাতে পারি না। এমন ঘরে বাচ্চাটাকে নিয়ে রাতে থাকা যায় না। মানুষের কথাও শুনতে হয়। কপাল মন্দ আমার। এমন কপাল আল্লাহ যেন কারও না দেয়।’
ক্ষুব্ধ মনিরা বলেন,’বিদেশির মতো দেখে এই বাচ্চাটাকে নিয়ে এখন অমানবিক জীবন যাপন করি। বাপ বেঁচে থাকতেও বাপ নেই। ছোট্ট মেয়েটাকে দুই বেলা ভাত দিতে পারি না। অনেক সময় না খেয়েও থাকি; বাচ্চাটাও থাকে। আমার কষ্ট না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।’
এদিকে মা-মেয়ের এই দুর্দশা দেখে মোজাফফরের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রতিবেশীরা । তারা বলেন,’ওর গায়ের রং এমন হলো বলেই বাপ অস্বীকার করছে। বলেছে এটা আমার মেয়ে না। গায়ের রং ভিন্ন হলে সে কি মানুষ না? আল্লাহই তো সৃষ্টি করছে। যশোরে আরও অনেকের বাচ্চা এমন হয়েছে কেউ ফেলে যায়নি। কিন্তু এই মেয়েটার প্রতি অন্যায় বিচার হয়েছে।’ এক আত্মীয় বলেন, “বাচ্চাটা আমার ভাগ্নি। সে অনেক সময় না খেয়ে থাকে, তিন-চার দিন কেটে যায়। আমি জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করব, ডিএনএ টেস্ট করে যদি প্রমাণ হয় এই বাচ্চাটার বাবা মোজাফফর, তাহলে তার উত্তরাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মহম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন,’এই জেলার কোনো নাগরিক যদি গৃহহীন বা সমস্যায় থাকে, তা আমাদের করণীয়ের মধ্যে পড়ে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থাকার ব্যবস্থাও করা হবে।’ বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত মোজাফফরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলেও তারা ক্যামেরার সামনে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্য মতে, “অ্যালবিনিজম” নামের জেনেটিক সমস্যার কারণে আফিয়ার শরীরের রং অতি ফর্সা। এই রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে যশোরের ওই শিশুটির জীবন এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ।।
Author : Eidin.

