এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ নভেম্বর : যেভাবে কোভিডের সময় “মোদী ভ্যাসসিন” বলে নিজেই প্রথম টিকা নিয়েছিল, ঠিক তেমনি এসআইআর-কে এন আর সি বলে মানুষকে তাতিয়ে নিজেই প্রথম এনুমারেশন ফর্ম পূরন করেছেন মমতা ব্যানার্জি – আজ শনিবার কলকাতার সল্টলেকে রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । ইতিমধ্যে রাজ্যে ৪ নভেম্বর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে এসআইআর (SIR)-এর ফর্ম বিলি। পাশাপাশি এসআইআর (SIR)-এর বিরু রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । ইতিমধ্যে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার হাতে ফর্ম তুলে দিয়েছেন স্থানীয় বিএলও । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে বাংলার প্রত্যেকটা মানুষ যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ফর্ম পূরণ করছেন, ততক্ষণ তিনি এই ফর্ম পূরণ করবেন না ।
আজ শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’২০১৯ সালে কোভিডের সময়তে যখন ভারতের তিনটে ভ্যাকসিন বের হয়, তখন অখিলেশ যাদব, মমতা ব্যানার্জিরা “মোদি ভ্যাকসিন” বলেছিলেন । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের যখন ভ্যাকসিন আসে তখন সাধারণ মানুষ নেওয়ার আগে মমতা ব্যানার্জি প্রথম তার বাড়িতে ভ্যাকসিন নেন । যারা বলেছিলেন মোদী ভ্যাকসিন তারাই প্রথম ভ্যাকসিন টা নিয়েছে৷ অখিলেশও তাই করে । এস আই আর-এর ক্ষেত্রেও একই কাজ করছেন মমতা ব্যানার্জি । মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এখন নিজে প্রথম এস আই আর এর কাগজ হাতে নিয়েছেন । তারপরে আপনি মিথ্যাচার করছেন মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন ? সাথে সাথে একাধিক তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক সাংসদ, বিধায়ক,মন্ত্রী,প্রাক্তন মন্ত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে কম্পিটিশন করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেপেছে । তাদের নাম বলতে চাই না কারণ তারা নেতা নয়, কর্মচারী ।’ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধেই আজকে সকাল বেলার প্রত্যুষে প্রেস কনফারেন্স বলে তিনি জানান ।
তিনি বলেন,’তৃণমূল কংগ্রেস এসআইআরকে এনআরসি বলে মুসলিমদের তাতাচ্ছে। তারা হিন্দু শরণার্থীদেরকে ভুল বুঝিয়ে সিএএ-তে আবেদন করতে নিষেধ করছে। তারাই আজ এসআইআর-কে গ্রহণ করেছে । মমতা ব্যানার্জির বাড়িতে বিএলও গৌতম বাবু গিয়েছিলেন । প্রথমে নিরাপত্তা রক্ষীরা আটকে দিয়েছিল তাকে । কিন্তু গৌতম বাবু জোর করে ঢোকেন । তাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখা হয় । তারপর তিনি মমতা ব্যানার্জির হাতে ফর্ম দিয়ে আসেন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’তারপর মুখ্যমন্ত্রী হাতে ফর্ম নিয়ে ছবি প্রথম তৃণমূলের মুখপাত্র জাগো বাংলায় আসে । পাশাপাশি তৃণমূল অনুগামী কিছু সংবাদপত্রে সেই ছবি বের হয় । যিনি এসআইআর করতে দেবো না বলে হুমকি দিয়েছিলেন, সেই মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে বিএলও-এর কাছ থেকে এসআইআর ফর্ম নিলেন । ২৪ ঘন্টা ধরে ক্যাম্পেইন চলল৷ পরে জাগো বাংলা ডিলিট করে দিল খবরটা । মুখ্যমন্ত্রীর বলেন সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখে মিথ্যাচার হয়েছে, রাজ্যের সমস্ত মানুষের ফর্ম ফিলাপ করার পর তিনি তা পূরণ করে জমা দেবেন ।’
এরপর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন তোলেন,’সব ভোটার মানে কারা ? আমি বিরোধী দলনেতা হিসেবে আপনার কাছে দাবি করছি, বলুন সব ভোটার বলতে কারা? আপনি কি চান মৃত ভোটারের নাম রাখতে? আপনি কি চান ডবল ট্রিপল এন্ট্রি ভোটারের নাম রাখতে? আপনি কি চান অস্তিত্বহীন ভোটারের নাম রাখতে? আপনি কি চান ও ভারতীয়দের নাম রাখতে, বিশেষ করে বাংলাদেশী মুসলিম এবং মায়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে এখানে আসা রোহিঙ্গাদের ? আপনি কি চান এদেরকে রাখতে ? মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সব ভোটারের ব্যাখ্যা দিন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’পশ্চিমবঙ্গের মূল সমস্যা হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি । সাথে সাথে অনুন্নয়ন, বেকারত্বের চরম যন্ত্রণা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, শিল্পে মন্দা, কৃষকদের দুরবস্থা, সেচ ব্যবস্থা বিপর্যয় সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে তালা পড়ছে এবং সীমাহীন তোষণের রাজনীতি । আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে যে প্রচলিত ব্যবস্থা দেখে আসছি, এখানকার বড় অংশের মানুষ বলুন বা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার মিডিয়া বলুন, তাড়াতাড়ি তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন খবর দেখায় যার ফলে এখানকার মূল সমস্যা গুলো আড়াল হয়ে যায় । আর রাজ্যের শাসকগোষ্ঠীও এই বিষয়টা চান যে মূল বিষয়গুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরে যাক । দ্বিচারিতা মিথ্যাচার এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করে মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া, সাথে সাথে কিছু মানুষের মধ্যে ভুল তথ্য বা মিথ্যা প্রচার করে বিভ্রান্ত করে দেওয়া এটা নতুন কোন ঘটনা নয় ।’
তিনি বলেন,’২০১৯ সালে যখন কেন্দ্র সরকার সিএএ আইন এনেছিল, পাকিস্তান-আফগানিস্তান-বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে চলে আসা হিন্দু- শিখ- জৈন- খ্রিস্টান-বৌদ্ধ-পার্সি ইত্যাদিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা জানেন পশ্চিমবঙ্গে গোটা দেশের মধ্যে প্রথম অশান্তির আগুন লাগিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি ও তার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী । সেদিন নবান্নর সামনে ৩৭টা বাস পোড়ানো হয়েছিল তার মধ্যে ২২টা সরকারি বাস । মালদার সামসিতে রেল লাইন উপরে ফেলা দেওয়া হয়েছিল । মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে হাজারদুয়ারির মত একটা গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল । রেজিনগর বেলডাঙ্গাতে রেল স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল । উলুবেরিয়ায় করমন্ডল এক্সপ্রেস এ ভেলোর থেকে আশা রোগীদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছিল । এই আগুন লাগিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি ।’
শুভেন্দুর অভিযোগ,’২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও সিএএ কে এনআরসি বলে ক্যাম্পেইন করে ভোট নিয়েছিলেন । এটা নতুন কিছু নয়। তাই এস আই আর যখন বিহারে প্রথম নোটিফিকেশন হয় তখন থেকেই গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে চালু হয়েছিল । তারপরেও একুশে জুলাই সভা থেকে কিভাবে আর হাতফাত ছুড়ে অখাদ্য হিন্দি ভাষায় তিনি বলেছিলেন এসআইআর করতে দেবো না । সাথে সাথে ওনার পরিবারবাদী পার্টি নামক কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ডাইরেক্টরাও বলেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে এগুলো হবে না, আমরা ইলেকশন কমিশনকে বুঝিয়ে দেবো, ইলেকশন কমিশনের অফিস লক্ষ লক্ষ লোক নিয়ে গিয়ে ঘিরে ফেলব । তারপর ফেব্রুয়ারি থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে উনি লাগাতার নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনের কাজে যুক্ত কর্মচারীদের ধমক দিয়ে আসছেন।’
তিনি বলেন,’তিনি ধমক দিলেন যে এখন কি ইলেকশন কমিশন ? এমসিসি যখন চালু হবে তখন ইলেকশন কমিশন । এগুলো করবেন না আপনারা । সরাসরি হুমকি । এসডিও,বিডিও, এইআরও, ডিইও-কে হুমকি । তারপরে বোলপুরে সভা থেকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বললেন যে আমাকে না জানিয়ে কেন এক হাজার বিএলও-দের ট্রেনিং দিয়েছে । ডিএম-দের মনোজ পন্থ বললেন এদেরকে পরিবর্তন করে দিতে হবে । কিছু কিছু জায়গাতে পরিবর্তনও করেছে । কিন্তু আমাদের নজরদারি থাকার ফলে সবাইকে পরিবর্তন করতে পারেনি । ওনার অপকর্ম, ওনার ষড়যন্ত্রকে ঠেকানোর জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টার নজরদারি রেখেছিলাম । যা করার আমরা করেছিলাম ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’কিন্তু লাগাতার এস আই আর কে এনআরসি বলা , এসআইআর করতে দেবো না বলে প্রচার হুমকি দেওয়া, বিএলও থেকে শুরু করে ইলেকশন কমিশনের সর্বোচ্চ আধিকারিকদের পর্যন্ত ব্যাপকভাবে উনি আক্রমণ চালিয়ে গেছেন । ওনার মূল উদ্দেশ্য ছিল এসআইআর প্রক্রিয়া আটকে দিয়ে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে বাধা দেওয়া । এমনকি যখন দেখলেন যে এসআই আর আটকানো যাবে না তখন নির্বাচন কমিশনের সিইও মনোজ আগরওয়ালকে দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ করলেন । আমরা তাকে চ্যালেঞ্জ করে ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছিলাম । কিন্তু তিনি কোন প্রমাণ দিতে পারেননি । যখন দেখলেন মনোজ আগরওয়ালকে বাগে আনা যাচ্ছে না, দুর্নীতি তথ্য শুধুমাত্র আকাশে ভাসিয়ে দেয়া গেছে কোন প্রমাণ দেয়া যায়নি,তখন উনি এবং ওনার ভাইপো সিসি জ্ঞানেশ কুমারকে বাপ তুলে আক্রমণ করলেন৷ ফাইনালি কি হলো ?’
এসআইআর প্রক্রিয়ায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সরাসরি অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটা দলকে বিএলএ ওয়ান এবং ডিএলএ ২ দিতে হয়। গতকাল পর্যন্ত বিজেপি বিএলএ ওয়ান দিয়েছে ৩৩৮ এবং ডিএলএ টু দিয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪২ । সিপিএম বিএলএ ওয়ান দিয়েছে ২০০ এবং বিএলএ-২ দিয়েছে ৩০ হাজার ৭৪০ । কংগ্রেস বিএলএ ওয়ান দিয়েছে ২১২ এবং বিএলএ টু দিয়েছে ৮২৪৬ ৷ তৃণমূল কংগ্রেস বিএল এ ওয়ান দিয়েছে ১৬৩ এবং বিএলএ টু দিয়েছে ৩৮৯৩৪ ।।

