আজ বুধবার সকালে বছর পঁয়ত্রিশের এক মুসলিম যুবক পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের একটি স্টেশনারি দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন৷ ভাতার থানার অন্তর্গত একটি গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবকের গ্রাম সংলগ্ন সড়কপথের ধারে একটি চায়ের দোকান রয়েছে৷ প্রৌঢ় দোকানদার তাকে যখন প্যাকেটজাত দুধ, চা পাতা দিতে ব্যস্ত তখন যুবক অযাচিতভাবেই বলে ওঠেন, “খুব চিন্তা হচ্ছে৷ আমাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে না তো ? মোদী যা শুরু করেছে….”।
দোকানদার বুঝে যান যে যুবক ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে কথা বলছেন৷ তিনি যুবকের কাছে জানতে চান,”কেন তোমার বাবা ভোটার নয় ? তোমার ঠাকুরদার আদি বাড়ি কোথায় ?” উত্তরে যুবক বলেন,”আমার বাবা ঠাকুরদা, সবাই ভোটার । আমরা বংশানুক্রমিকভাবে এখানেই বসবাস করছি ।’ এমনকি যুবক তার মোবাইলে ডাউনলোড করা ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পরিবারের নামও দেখিয়ে দেন । তখন দোকানদার বলেন,’তাহলে তোমার চিন্তা কিসের ?’
একথা শুনে যুবক একটু ধাতস্থ হন । সেই সময় পাশ থেকে কেউ বলে ওঠেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস তাদের অকারণ ভয় দেখাচ্ছে । উত্তরে যুবক বলেন, “সব বুঝতে পারছি । এবারে ভোটে তৃণমূল বুঝতে পারবে । এর থেকে দেখছি সিপিএমই ভালো ছিল ।”
মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর থেকে ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এর শুরু হয়ে গেছে ৷ রাজ্যের জেলাগুলিতে বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) যখন এনুমারেশন ফর্ম বিতরন শুরু করেছে, অন্যদিকে তখন এসআইআর- এর বিরোধিতায় কলকাতার রেড রোডে জনসভা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস । মমতা ফের এস আই আর-এর বিরোধিতা করেন এবং বলেন, “যোগ্য ভোটারের নাম বাদ” দিলে একটা গান বেঁধে দেব, ধাক্কা-ধাক্কা-ধাক্কা।” এরপর মঞ্চ থেকে মতুয়াদের ঢাক বাজাতে বলে স্লোগান তোলেন “নিজেকে বাঁচান, বিজেপি হটান।” যদিও মৃত ভোটার, ডবল-ট্রিপল এন্ট্রি ভোটারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের “যোগ্য ভোটার”-এর তালিকায় ফেলছে কিনা তা কখনো স্পষ্ট করেনি শাসকদল ।
কিন্তু এসআইআর নিয়ে মমতা ব্যানার্জিদের এই ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাজ্যের এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ঠিক কি প্রকার “প্যানিক” সৃষ্টি করেছে,তার স্পষ্ট উদাহরণ হল ভাতার থানা এলাকার বাসিন্দা ওই যুবকের বক্তব্য । যুবক জানান যে গতকাল তাদের গ্রামেও এনুমারেশন ফর্ম বিতরন করেছে বিএলও-রা । তবে শুধু ওই যুবকই নন, এলাকার একাংশের মধ্যে এসআইআর নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে । এই উদ্বেগের মূল উৎস হল এসআইআর নিয়ে তাদের ভ্রান্ত ধারনা । কিন্তু সেই ভ্রান্ত ধারনা কাটাতে না দলীয়ভাবে, না প্রশাসনিকভাবে এযাবৎ কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । এদিকে এসআইআর বিরোধীদের লাগাতার প্রচারে তাদের উদ্বেগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের “প্রেস নোট” অনুযায়ী গতকাল জেলা জুড়ে ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন-২০২৬ এর এনুমারেশন ফর্ম বিতরন শুরু হয়েছে ৷ জেলার ১৬ (ষোলো) টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৪৫০৬ (চার হাজার পাঁচশো ছয়) টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের জন্য এই কাজ শুরু হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে : এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র এলাকায় ৪৫০৬ জন বুথ লেভেল অফিসার (BLO) নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও, জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরের অন্যান্য সরকারি কর্মীরাও এই কাজে যুক্ত রয়েছেন।ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন ২০২৬ প্রক্রিয়াটি প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিক (ERO)-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। প্রতিটি ইআরও-কে সহায়তা করবেন ১০ জন সহকারী নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিক (AERO), এবং প্রতিটি এইআরও -এর অধীনে কাজ করবেন বিএলও সুপারভাইজারদের একটি দল। বিএলও-রা তাদের সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজারের কাছে রিপোর্ট করবেন।
এসআইআর নির্ধারিত সময়সূচির তালিকায় দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের “প্রেস নোট”-এ । তাতে বলা হয়েছে : গৃহ ভিত্তিক নির্বাচক গণনা পর্যায় ৪ নভেম্বর – ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ । খসড়া নির্বাচক তালিকা প্রকাশ ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ । দাবি ও আপত্তি গ্রহণকাল- ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫-৮ জানুয়ারি, ২০২৬ । নোটিশ (শুনানি ও যাচাই) পর্যায় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫-৩১ জানুয়ারি, ২০২৬ । চূড়ান্ত নির্বাচক তালিকা প্রকাশ ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬ ।
বিবৃতিতে ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন ২০২৬ সম্পর্কিত তথ্য প্রচারের জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের তিনটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের (X, Instagram ও Facebook) অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টের লিঙ্কও দেওয়া হয়েছে৷ অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
আরও জানানো হয়েছে যে এই সময়কালে ভোটারদের প্রশ্ন, তথ্য বা অভিযোগ গ্রহণের জন্য জেলা শাসক ও জেলা নির্বাচন আধিকারিক (DEO), নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিক (ERO), মহকুমা শাসক (SDO) এবং সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (BDO)-এর অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।এ ছাড়াও, জেলা কন্ট্রোল রুমে একটি টোল ফ্রি নম্বর ১৯৫০ চালু করা হয়েছে, যেখানে ভোটাররা তাদের প্রশ্ন বা অভিযোগ জানাতে পারবেন ।।

