এইদিন ওয়েবডেস্ক,বীরভূম,৩০ অক্টোবর : স্ত্রী ও সন্তান থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে এক তরুনীকে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগ উঠল বীরভূম জেলার রামপুরহাটের এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে । অভিযোগ যে ধর্ষণের জেরে ওই তরুনী এক সন্তানের জন্ম দিলেও তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলেও নিয়মিত যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যায় ওই তৃণমূল নেতা । শুধু তাইই নয়,মুখ খুলতে তাকে প্রাণে মারার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ । এনিয়ে রামপুরহাট থানায় প্রিয়নাথ সাউ ওরফে টিংকু নামে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা । যেখানে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ আছে। বিধানসভার ভোটের ঠিক মুখেই এক দলীয় নেতার এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।
জানা গেছে,প্রিয়নাথ সাউ রামপুরহাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা রামপুরহাট শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতির পদে রয়েছেন । নির্যাতিতা ওই তৃণমূল নেতার যে কর্মকাণ্ড মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছেন তা বলিউডের যেকোনো ভয়ঙ্কর খলনায়ককেও হার মানাবে৷
অভিযোগকারিনীর দাবি, ২০১৫ সালে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গিয়ে কাউন্সিলর প্রিয়নাথ সাউয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ভোটার কার্ডের সংশোধনের কাজে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে ওই তৃণমূল নেতা তাকে নিজের বাড়িতে ডেকে আনেন । তার বাড়ি যেতে শুরু করলে প্রিয়নাথ প্রথমে তাকে কুপ্রস্তাব দেয় । তাতে তিনি রাজি হননি৷ এরপর ওই তৃণমূল নেতা নিজেকে অবিবাহিত বলে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলে ।
তরুনীর কথায়, ২০২০ সালে যখন তার বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয় তখন তিনি ঘটনার কথা সব খুলে বলেন ৷ এরপর তরুনীর বাবা-মায়ের কথামত বিয়ের কথা বলার জন্য প্রিয়নাথকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন তরুনী । প্রিয়নাথ বিয়েতে রাজিও হয়েছিল । কিন্তু বিয়ের দিন ঠিক হলে ওই তৃণমূল নেতা জানায় যে সে ইতিমধ্যে বিবাহিত ও এক পুত্র সন্তান আছে, তাই তিনি এই বিয়ে করতে পারবেন না।
তরুনী বলেন,’আমার সাথে এই কাজ করে জীবন নষ্ট করে দেওয়ার জন্য প্রিয়নাথ সাউকে প্রশ্ন করি । তখন তিনি আমায় বলেন, ‘আমি তোকে যেমন খুশি ব্যবহার করব এবং ধর্ষণ করব । তুই অন্য কোথাও বিয়ে করে নে,কিন্তু তার পরেও এই জিনিস চলবে’ ।’
তরুনী বলেন,’সমাজে মুখরক্ষা ও বাবা-মায়ের সম্মানের জন্য আমি এই বিয়ে করি । কিন্তু তারপরেও এই অত্যাচার চলতে থাকে । এভাবে চলতে চলতে প্রিয়নাথ সাউয়ের ঔরসে আমার গর্ভে একটা পুত্র সন্তান আসে । যদিও প্রিয়নাথ বাচ্ছাটি নষ্ট করার কথা বলে । কিন্তু আমি জন্ম দিই ।’ তিনি জানান তার বাচ্ছাটির জন্ম হয়েছিল ২০২২ সালের ৩১শে অক্টোবর ।
তরুনীর অভিযোগ,’তারপর থেকে আরও অত্যাচার শুরু হয় । ইতিমধ্যে আমার স্বামীও ঘটনার কথা জেনে যায় । যেকারণে স্বামীও আমার উপর অত্যাচার শুরু করে । স্বামীর সাথে আমার বর্তমানে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে । এখন আমি এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছি । কিন্তু প্রিয়নাথ সাউ এখনো বলে যাচ্ছে যে “আমি নতুন পদ পেয়েছি, তাই তোকে বিয়ে করতে পারব না”৷ সে আরও বলছে, “আমি তোকে বাজারে নামাব এবং যেভাবে খুশি ব্যবহার করব”৷’
তরুনীর অভিযোগ,’গত ২৫ অক্টোবর প্রিয়নাথ সাউ রাস্তাতে তার সাগরেদদের সাথে নিয়ে এসে তার পথ আটকায়৷ সে বলে আমি “তোকে যেমন খুশি ব্যবহার করব, প্রতিবাদ করলে তোর বৃদ্ধ বাবা-মাকে খুন করব” ৷ আমারও অনেক ক্ষতি করে দেবে বলে । তাই এথেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ।’
তরুনী বলেন,’এই রকম ঘৃণ্য ও জঘন্য অপরাধের কঠোর শাস্তি চাই৷ আর আমার মত অন্য কোনো মেয়েকে যেন এমন দুর্ভোগের মধ্যে না পড়ে ৷’ যদিও অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার প্রতিক্রিয়া সামনে আসেনি ।।

