এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ অক্টোবর : শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুরের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় শুল্ক আধিকারিক প্রদীপ কুমারের ফ্লাটে ঢুকে দুষ্কৃতী তান্ডবের ঘটনা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে৷ সেই সুযোগে অন্তত ২৫০ জন দুষ্কৃতী ওই আধিকারিকদের আবাসন ঘিরে রাখে এবং ৫৩ জন ফ্লাটে ঢুকে তান্ডব চালায় বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । ঘটনাটিকে “মব লিঞ্চিং” আখ্যা দিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি । রাজ্য পুলিশের অধঃপতনের প্রমান দেখার জন্য পিজি হাসপাতালের ট্রাফিক আউট পোস্টের বিশালাকার উদর(ওসির স্ফিত মধ্য প্রদেশ) একবার দেখে আসার জন্য সাংবাদিকদের আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা ।
আজ রবিবার কলকাতার ৬ মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে বলেন,’পুলিশের দুটো কাজ৷ একটা হল পিসি-ভাইপোকে সুরক্ষিত রাখা । জনগন যাতে তাদের ধারেকাছে যেতে না পারে সেটা সুরক্ষিত রাখা । দ্বিতীয় কাজ হল রাত্রি বারোটা থেকে মাছের গাড়ি, ছানার গাড়ি, দুধের গাড়ি, কাঁচা সবজির গাড়ি যখন ঢুকতে শুরু করে বা বাইরের রাজ্য থেকে ট্রাকগুলো যখন ঢুকতে শুরু করে তখন কলকাতা পুলিশের আসল চরিত্রটা উন্মোচিত হয় । আপনারা একদিন রাত্রি একটা থেকে তিনটে পর্যন্ত নীল বা হলুদ ট্যাক্সিতে গোপন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়ালে মমতা পুলিশ, যে পুলিশকে লন্ডন-নিউইয়র্কের পুলিশের সঙ্গে তুলনা করা হতো,তাদের অধঃপতন কিভাবে হয়েছে চোখের সামনে দেখতে পাবেন ।’ এরপর তিনি বলেন,’পিজির সামনে যে ট্রাফিক আউটপোস্ট রয়েছে সেখানকার যিনি ওসি রয়েছেন তার চেহারা দেখলে বুঝতে পারবেন ৷ তার মধ্য প্রদেশ কিভাবে স্ফিত হচ্ছে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে এদের আসল কাজটা কি ।’ তার এই কথা শুনে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায় ও কাউন্সিলর মীনা পুরোহিত হেঁসে ফেলেন ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’এরাজ্যে কোন আইনশৃঙ্খলা বা সুরক্ষা নেই৷ আগে সিআরপিসি ছিল এখন বিএনএস । নারী সুরক্ষা নেই,ছিনতাই বাড়ছে, যে যাকে পারছে মারছে । আর আপনারা সাংবাদিকরা যদি সত্য দেখাতে চান, আপনাদের সাংবাদিক প্রকাশ সিনহার বাড়িতে গিয়ে দেখে এসেছি, পরেরদিন তার মেয়ের পরীক্ষা ছিল, কিভাবে ঘর তছনছ করেছে এই কলকাতা পুলিশ, মানে মমতা পুলিশ । পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এই অধঃপতন আমরা কখনো দেখিনি৷’
পরে সোনারপুরে আক্রান্ত শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকের ফ্লাটে গিয়ে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন শুভেন্দু অধিকারী । দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি । পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন,’এটা মব লিঞ্চিং-এর ঘটনা । যে পরিস্থিতি ছিল ওই আধিকারিক, তার স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে পুড়িয়ে মেরে দিতেও পারত দুষ্কৃতীরা ।’ তিনি বলেন,’গোটা এলাকা দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে । সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়িকা ফিরদৌসি বেগমের স্বামী নজরুল আলীর ঘনিষ্ঠ হামলার মাস্টারমাইন্ড আজিজুল গাজী এখন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে ।’ তিনি জানান আক্রান্ত আধিকারিককে কল্যাণী এইমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন৷ কারন স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা ভয়ে ভুল মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছেন। তিনি আক্রান্ত শুক্ল দপ্তরের আধিকারিক ও তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ।

ঘটনা প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’সোনারপুরের রাজপুরে কেন্দ্রীয় শুল্ক আধিকারিক প্রদীপ কুমারের আবাসনে ঢুকে গতকাল মাথা ফাটিয়ে দেয় তৃণমূলের একদল সন্ত্রাসী। রাস্তায় একটি অটো চালকের সঙ্গে বচসা হওয়ায় পরে ঐ অটো চালক প্রায় শ’দুয়েক লোককে জড়ো করে আবাসনের ভিতরে হামলা চালায়। আধিকারিকের ফ্ল্যাটের ভিতর ঢুকে ওনাকে মারধর করা হয়, ওনার ঘরের আসবাব পত্র ভাঙচুর করা হয়।
আজ রাজপুরে কেন্দ্রীয় শুল্ক আধিকারিক প্রদীপ কুমারের বাসভবনে ওনার সাথে সাক্ষাৎ করে ওনার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলাম। উনি গতকালের ঘটনার কথা সবিস্তারে জানালেন। ওনার পরিবার সহ আবাসনের বাসিন্দারা অত্যন্ত আতঙ্কে রয়েছেন।
রাত ন’টায় পুলিশ কে ফোন করলেও তারা বিসর্জনের কাজে ব্যস্ত আছে বলে বিষয়টা এড়িয়ে যায়। হামলাকারীরা সকলে সক্রিয় তৃণমূল কর্মী এবং ঐ অটোচালক সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়িকা ফিরদৌসি বেগমের স্বামী নজরুল আলীর অত্যন্ত ঘনিষ্ট তাই মমতা পুলিশের হামলার সময় আসতে এতো গড়িমসি।’।

