এইদিন ওয়েবডেস্ক,দক্ষিণ ২৪ পরগনা,২৬ অক্টোবর : শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুরের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় শুল্ক আধিকারিকের বাড়িতে দুষ্কৃতী তান্ডবের ঘটনা ঘটেছে । প্রদীপ কুমার নামে শুল্ক আধিকারিককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তা স্ত্রী এবং কন্যা বাঁচাতে গেলে তাদেরও রিয়াদ করেনি দুষ্কৃতীরা । গোটা বাড়ি জুড়ে কার্যত তাণ্ডব চালায় গোটা পঞ্চাশেক দুষ্কৃতীদের দল । ভেঙে ফেলা হয় কার্যত সমস্ত সামগ্রী এবং কলাপসিবল গেট । এই ঘটনায় সোনারপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন ওই শুল্ক আধিকারিক । এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় আজিজুল গাজী নামে একজন তৃনমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে । বিজেপির দাবি হামলার মাস্টারমাইন্ড আজিজুল গাজী সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়িকা ফিরদৌসি বেগমের স্বামী নজরুল আলীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘হিন্দুরা কোথায় কে বাজি ফাটাচ্ছে ৮ টা থেকে ১০ টার মধ্যে, তাদের লাঠি নিয়ে তাড়া করা,কলার ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া,গ্রেপ্তার করা,ছোট্ট বাচ্ছার সামনে বাবাকে পেটাতে পেটাতে প্রিজন ভ্যানে তোলা এসব কাজ পুলিশের । নিউটাউনে কি করেছে দেখেছেন তো । এসব কাজ পুলিশ করবে । আর এসব লোক হলে কখনো শাটার তুলে দোকানের ভিতরে ঢুকবে,কখনো টেবিলের তলায় লুকবে ।’
তিনি আরও বলেছেন,’ওখানে যে এমএলএ টা আছে, ফিরদৌসি বেগম, তার বরকে জিজ্ঞেস করুন । আজিজুল গাজি ওখানকার ছোট মুখ্যমন্ত্রী । ফলতায় জাহাঙ্গীর, ক্যানিং-এ সওকত, সন্দেশখালিতে শাহজাহানের মত একটা জেলে আছে । ছোট ছোট সীমানা ভাগ করা আছে । ওই এলাকা(সোনারপুর) আজিজুল দেখে । আজিজুলের মাথায় হাত আছে নজরুলের । নজরুলের স্ত্রীর নাম ফিরদৌসি বেগম । তিনি হচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি ব্যানার্জির পরিবারের একজন কর্মচারী ও এমএলএ । পুলিশকে কন্ট্রোল করে এরা ।’
মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে, শুক্রবার বাড়ি ফেরার সময় অটোচালকের সঙ্গে বচসা হয় কাস্টম আধিকারিক প্রদীপ কুমারের ৷ তার জেরে প্রায় অর্ধ শতাধিক দুষ্কৃতী তার বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালায় ।হামলার মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে । তাতে দেখা যায় যে দলবল বেঁধে দুষ্কৃতীরা প্রদীপ কুমারের ফ্ল্যাটের কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করছে । তারপর শুরু হয় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব । গোটা বাড়ি ভাঙচুর করা হয় । শুল্ক আধিকারিককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। বাঁচাতে গেলে স্ত্রী ও মেয়েকেও দুষ্কৃতীরা মারধোর করে বলে অভিযোগ ।
এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন ওই শুল্ক অফিসার৷ তার অভিযোগ যে রাত্রি ৯:৫০ নাগাদ দুষ্কৃতীরা যখন তার বাড়িতে ঢুকে তান্ডব চালায় তখন তিনি থানাতে ফোন করেছিলেন । কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পাননি তিনি। হতাশ হয়ে তিনি বলেছেন,’বাংলায় কেউ সুরক্ষিত নয়’ ।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন রাজ্য বিজেপির যুবমোর্চার সহ-সভাপতি তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গে আবারও চাঞ্চল্যকর ঘটনা — এক কাস্টম অফিসারের বাড়িতে ঢুকে হামলার অভিযোগ উঠেছে আজিজুল গাজীর বিরুদ্ধে, যিনি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। বাড়িতে ঢুকে মারধর ও ভাঙচুর — এমন দুঃসাহসের পিছনে কী ভরসা কাজ করছে সেটা আপনারা ভালোভাবেই জানেন। এটা শুধুমাত্র একজন অফিসারের ঘটনা নয় — এটা গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি এক চ্যালেঞ্জ। যখন রাজনৈতিক প্রভাবে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যায়, তখন সাধারণ মানুষ কতটা সুরক্ষিত, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি সৎ নাগরিকের কর্তব্য — দল নয়, ন্যায়বিচারের পাশে দাঁড়ানো। নইলে আজ যার বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে, কাল সেটা যে আপনার বা আমার বাড়ি হবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখার জন্য একটা শ্রেণীতে বিশেষভাবে ব্যবহার করে চলেছে। তাদের সব অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েই চলেছে।’।

