এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ অক্টোবর : দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার কাকদ্বীপ থানার সূর্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি মন্দিরে একটি মন্দিরে কালীপ্রতিমার মাথা কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ওই এলাকারই নারায়ণ হালদার নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও-এর দাবি যে ধৃত ব্যক্তি প্রতিমাটি ভাঙার কথা স্বীকার করেছে এবং সেই সময় সে মদ্যপ অবস্থায় ছিল । যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,কোনো হিন্দু দেবী প্রতিমার শিরোচ্ছেদ করতেই পারে না । এটা পুলিশ সুপার ও তৃণমূলের মিলিত পরিকল্পনা ।
ছট পুজো উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্যারাকপুরের গারুলিয়া আজাদ হিন্দ ময়দানে একটি সভাতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । সেখানে সাংবাদিকরা তাঁকে কাকদ্বীপের সূর্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উত্তর চন্দনপুর গ্রামের পুজো মণ্ডপের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় নারায়ণ হালদার নামে একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চায় । উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’অসম্ভব,মায়ের মূর্তি কোন হিন্দু কাটতে পারেন না । কোটেশ্বর রাও আপনি প্রেস কনফারেন্স করেছেন, আমি দাবি করছি যে এই মামলা এনআইএ -এর হাতে তুলে দিন । এনআইয়ে যদি বলে নারায়ণ হালদার এই কাজ করেছে তাহলে আমরা যে কথা দুদিন ধরে বলছি তা প্রত্যাহার করে নেব । আর এনআইএ তদন্ত হলে প্রমাণ হবে বিধর্মী জিহাদি বাংলাদেশি মুসলমানরা এই কাজ করেছে । বাংলাদেশের মডেলে মা কালীর মূর্তির মুন্ডছেদ করেছে । অপবিত্র করেছে ।’
তিনি বলেন,’দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, পুলিশ যে কায়দায় অপবিত্র করা মা কালীর মূর্তিকে প্রিজন ভ্যানে তুলেছে স্বাধীনতার আগে বা পরে কেউ দেখেনি । মা কালী কে প্রিজন ভ্যানে তুলে গ্রেফতার করা হচ্ছে এই দৃশ্য আমরা খালা মমতার জমানাতেই দেখলাম ।’
কাকদ্বীপে ধৃত নারায়ণ হালদারকে কিভাবে “পরিকল্পিত কায়দায়” আসামি সাজানো হয়েছে তার বর্ণনাও দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, ‘আজকে সকালবেলা মন্টুরাম পাখিরা (রাজ্যের মন্ত্রী) গেছে কিছু মুসলিম তৃণমূল নেতাদের নিয়ে । ওখানে বাপ্পি হালদার বলে ভাইপোর একটা টেনিয়া এমপি আছে, যে ছাপ্পা মেরে জিতেছে । দেবাশীষ দাস নামে ওই গ্রামে ওর একটা লোক আছে । তিনি ভূপতি হালদারের মাতাল পুত্র নারায়ণ হালদারকে এই বলে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন যে ১৫ দিন জেলে থাকতে হবে, এই কথা দিয়ে । নারায়ন হালদার ওই এলাকার তৃণমূল নেতা ভূপতি হালদারের ছেলে। এটা কোটেশ্বর রাও, বাপি হালদার, তৃণমূলের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে । দেবাশীষ দাস সাপ্লাই করেছে । ওর পনেরো দিন সংসার চালানোর টাকা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে দেবীমূর্তিকে প্রিজন ভ্যানে তুলে ‘অপবিত্র’ করার অভিযোগেরও সাফাই দিয়েছেন সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও । তার দাবি, ‘প্রাথমিকভাবে গ্রামবাসীরা মূর্তি বিসর্জন করে পুলিশে অভিযোগের বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু পরে কয়েকজন সেখানে ঢুকে পড়েন। মূর্তি নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। অ্যাম্বুল্যান্স-সহ গাড়ি আটকে পড়ে। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। এরপর ইট ছোড়া শুরু হয়। তখন প্রতিমাটিকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করতেই কাছে থাকা পুলিশের ভ্যানে তোলা হয়েছিল।’ যদিও পুলিশ সুপারের এই প্রকার সাফাই নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপি ও স্থানীয় বাসিন্দারা ।
এদিকে রাজ্য পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে সতর্ক করে লেখা হয়েছে,’এই ঘটনা নিয়ে কোনও কোনও মহল থেকে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে, ভুল তথ্য ছড়িয়ে চেষ্টা চলছে মানুষে-মানুষে বিভেদ সৃষ্টির। আমরা স্পষ্ট জানাতে চাই, পরম আরাধ্যা মা কালীর মূর্তির সম্নান এবং পবিত্রতা রক্ষার কাজ আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। এবং সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা গতকালের পরিস্থিতি সামলেছি। নাগরিকদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ— কোনও গুজবে কান দেবেন না। পশ্চিমবঙ্গের শান্তি ও সম্প্রীতির চিরকালীন ঐতিহ্যকে কালিমালিপ্ত করার যে কোনও অপচেষ্টাকে আমরা কঠোরভাবে দমন করব।’।

