এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২২ অক্টোবর : পারিবারিক ছোট্ট মন্দির৷ দেবীর সামনে দুটি পৃথক চেয়ারে স্ত্রীর সঙ্গে বসে পঞ্চাশোর্ধ প্রৌঢ় । হঠাৎ বছর পনেরোর ছেলের গোঁঙ্গানি শুনে দম্পতি ধড়ফড়িয়ে উঠে ছুটে বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন । কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে হাতজোড় করে দেবীর দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফের দেবীর মুখোমুখি চেয়ারে এসে বসলেন প্রৌঢ় । বেশ কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের সুকান্তপল্লির বাসিন্দা সুপ্রকাশ দত্ত নামে ওই প্রৌঢ় বলেন, ‘একমাত্র ছেলে বিরল মানসিক রোগে আক্রান্ত । জন্ম থেকেই বাক প্রতিবন্ধী । জানিনা আমার অবর্তমানে কি হবে ওর । এছাড়া কুলদেবীর নিত্যসেবা ও বাৎসরিক পূজো কে করবে তখন, জানিনা । কুলদেবী আর ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছুই কুলকিনারা পাইনা ।’
ভাতার বাজারের সুকান্তপল্লি পাড়াটি গড়ে উঠেছে সরকারি জায়গার উপর । পাড়ায় রয়েছে গোটা দশেক পরিবার । পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ওই একফালি জায়গায় বসবাস করা পরিবারগুলির কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই । বহু তদ্বির করেও বসবাসের জন্য এযাবৎ কোনো লিজ দেয়নি জেলা পরিষদ । পাড়ার মাঝামাঝি জায়গায় মাটির বাড়ি রয়েছে পেশায় সরকারি স্কুলের করনিক সুপ্রকাশ দত্তদের । তবে তিনি স্ত্রী,এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বর্ধমান শহরে ভাড়া থাকেন । মেয়ে নার্সিং ছাত্রী । স্ত্রী গৃহবধূ । বাড়িতে থাকেন ৯৮ বছরের বৃদ্ধা বিধবা মা,অবিবাহিত দাদা সুপ্রভাত দত্ত ও বিধবা মেজো দিদি গায়ত্রী ধর । ছোট দিদি নিঃসন্তান পুষ্প রায় একটু পাশেই পূর্তদপ্তরে জায়গায় স্বামীর সাথে পৃথক সংসারে থাকেন । বড় দিদি চন্দনা দাসের দুর্গাপুরে বিয়ে হয়েছে । প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল । বছর চারেক আগে নিজের খরচে পারিবারিক মন্দিরটি পাকা করেন সুপ্রকাশ ।
সুপ্রকাশ জানান,তাদের পৈতৃক ভিটে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে ৷ তার দাদু ত্রৈলক্ষ নাথ দত্তরা ছিলেন ৩ ভাই । শান্তিপুরে তাদের পারিবারিক কুলদেবী কালীর মন্দির আছে । ব্রিটিশ আমলে তার দাদু কৃষ্ণনগর ছেড়ে ভাতারে উঠে আসেন । কাটোয়া শহরে কাঁসা পিতলের দোকান ছিল তার । দাদুর দুই ছেলে- মনীন্দ্রনাদ আর কালীপদ । মনীন্দ্রনাদ অন্যত্র বসতি গড়েন । কিন্তু কালীপদ থেকে যান ভাতারেই ।
সুপ্রকাশ বলেন,দাদু মারা যান ১৯৩৬ সালে ৭৮ বছর বয়সে৷ তারপর আমার বাবা পারিবারিক কালীপূজা চালিয়ে আসেন৷ বাবার মৃত্যুর পর মা পূজো চালিয়ে এসেছিলেন । এখন আমি চালাচ্ছি । কিন্তু আমার পর পারিবারিক দেবীর নিত্যসেবা ও বাৎসরিক পূজো কে চালাবে জানিনা ৷ কারন আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে । মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে । ছেলে শৈশব থেকে মানসিকভাবে অক্ষম । তেমন বুঝলে পাড়ার ছেলেদের পূজো চালানোর জন্য অনুরোধ করব ।’ কিন্তু পাড়ার অন্য পরিবারগুলি সরকারি জায়গা ছেড়ে অন্যত্র বসতি গড়লে কি হবে? যদিও এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি । প্রশ্ন শুনেই তিনি চুপ হয়ে যান।
যদিও এবারেও যথারীতি ধুমধাম করে ভাতার বাজারের সুকান্তপল্লির দত্ত পরিবারের দেবী কালীর পূজো হয়েছে । পরিবারের সকল আত্মীয়স্বজন এসে জড়ো হয়েছেন । সোমবার দেবীর পূজোর পর রাতে অন্ন ভোগের আয়োজন করা হয়েছিল । পাড়ার বাসিন্দারা একসাথে ভোগ গ্রহণ করেন । তবে পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী দেবীমূর্তির নিরঞ্জন দিন সাতেক পর করা হবে বলে জানান সুপ্রকাশবাবু ।।