এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ অক্টোবর : একটি বাংলা নিউজ চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে বিএলও ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল ফের একটা বোমা ফাটিয়েছেন । এর আগে তিনি অবৈধ ভোটারদের নাম ভোটার লিস্টে রাখার জন্য ব্লক লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের আর্থিক প্রলোভন ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন । এবারে তিনি বিগত লোকসভা ভোটে অভিষেক ব্যানার্জির নির্বাচনি ক্ষেত্র ডায়মন্ড হারবারে কিভাবে দেদার ছাপ্পা ভোট পড়েছিল তার বর্ণনা দিলেন৷ উল্লেখ্য, ডায়মন্ড হারবারে ৭ লক্ষের বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির “ভাইপো” অভিষেক । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ডায়মন্ড হারবারে দেদার ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন বারবার । এবার বিরোধী দলনেতার দাবিতেই কার্যত সিলমোহর দিলেন বিএলও ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল । বিষয়টি তিনি প্রকাশ্যে আনার পর পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুললেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং ।
স্বপন মণ্ডল সাক্ষাৎকারে বলেন,’বিভিন্ন জায়গা থেকে রিপোর্ট আমরা নিয়েছি । ভোটটাই হতে দেয়নি । প্রথম কথা হচ্ছে বিরোধী ভোটারদের বুথেই পৌঁছতে দেয়নি, বাড়িতেই আটকে রেখেছিল । যারা যারা কিছু কিছু জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল তাদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ।’ তিনি বলেন,’আর অবৈধ ভোটারের প্রশ্ন যদি থাকে তাহলে তো সেটা এস আই আর করলেই ধরা পড়বে । নিশ্চয় সেখানেও অবৈধ ভোটার আছে । নিশ্চই আছে । মৃত ভোটারও হতে পারে । আমি বলছি যে শুধু অনুপ্রবেশকারীই হবে তার মানে নেই । মৃত ভোটার হতে পারে । পরিযায়ী শ্রমিক হতে পারে । তাদের ভোটটাও দিয়ে দিয়েছে । মৃত ভোটারদের ভোটও দিয়ে দিয়েছে,ওখানে গিয়ে ছাপ্পা মেরেছে । ছাপ্পা মানে ইভিএম মেশিনের বোতাম টেপা যেটা বলা হয় । এমনকি বিরোধীদের যে বোতামগুলো ছিল সেখানে কালো টেপ দিয়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে । ওখানে শুধুমাত্র তৃণমূলের বাটন খুলে রাখা হয়েছে । শুধুমাত্র তৃণমূলের বাটন ছাড়া অন্য কোনো বাটন টেপা যাবে না । এরকমও হয়েছে । ডায়মন্ড হারবারেই হয়েছে । রাজ্যের অনান্য প্রান্তেও হয়েছে । এই তো হচ্ছে আমাদের রাজ্যে, না ।’
নির্দিষ্ট করে ডায়মন্ড হারবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমি নাম করে বলতে পারি, ডায়মন্ড হারবারে জাহাঙ্গীর বলে একজন আছে ।’ সঞ্চালক বলেন,”অভিষেকের খুব ঘনিষ্ঠ ।” এরপর স্বপনবাবু বলেন,’আমরা বলেছিলাম যে এই জাহাঙ্গীরকে একমাস আগে থেকে ডিটেন করতে হবে । গৃহবন্দী করতে হবে । তবে গিয়ে আপনি ডায়মন্ড হারবারে ভোট করাতে পারবেন ।’ তিনি আরও বলেছেন,’সারা পশ্চিমবঙ্গ জড়ে এরকম তালিকা আমরা কিন্তু দিয়েছিলাম ।’
ভিডিও ক্লিপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ ও বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেন,’ডায়মন্ড হারবারে ৭ লক্ষের বেশি ব্যবধানে তৃণমূলের জয় : এটা কি নির্বাচনী বিচ্যুতি, না কি সংঘবদ্ধ ভোট লুট?অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ী ব্যবধান পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি এক চরম প্রশ্নচিহ্ন। প্রাক্তন প্রিসাইডিং অফিসার স্বপন মণ্ডলের সাক্ষ্য অনুযায়ী, এই “রেকর্ড” সংগঠিতভাবে লুটের মাধ্যমে তৈরি — যা তৃণমূল কংগ্রেসের গণতন্ত্রের প্রতি ঔদ্ধত্য ও অবজ্ঞা প্রকাশ করে।স্বপন মন্ডলের কথায় কীভাবে এই ভোট লুট করা হয়েছিল?
১) বিরোধী ভোটারদের সুনির্দিষ্টভাবে ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়েছিল — কখনো তাদের বাড়িতে আটকে রেখে, কখনোবা বুথে পৌঁছালে জোর করে সরিয়ে দিয়ে। ২) বিরোধী ও নির্দল প্রার্থীদের ইভিএম বোতাম কালো টেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে সেগুলো ব্যবহারযোগ্য না থাকে, আর শুধুমাত্র তৃণমূলের বোতামটিই কাজ করুক। ৩) ভুয়ো ভোট ও প্রক্সি ভোটিং হয়েছে ব্যাপকভাবে — মৃত ব্যক্তি ও যারা বাইরে কাজে গেছেন (প্রবাসী ভোটার), তাদের নামেও নাকি ভোট পড়েছে।
আর কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার এতটা বিরোধিতা করছেন?উত্তর লুকিয়ে আছে ডায়মন্ড হারবার মডেলে।স্বপন মণ্ডলের মতে, মৃত, অনুপস্থিত ও সন্দেহজনক ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের ভোটসংখ্যা কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে তুলছে। SIR প্রক্রিয়ায় যদি ভোটার তালিকা বিশুদ্ধ হয়, তবে তৃণমূলের এই ভুয়ো ভিত্তি ভেঙে পড়বে। এই দুর্নীতিপূর্ণ ব্যবস্থাই তৃণমূলের অস্তিত্বের ভিত্তি — আর সেটাই তারা রক্ষা করতে চাইছে।
তিনি লিখেছেন,ডায়মন্ড হারবার কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় — এটাই ২০২৬ সালের নির্বাচনে রাজ্য দখলের জন্য তৃণমূলের প্রদর্শনী মডেল। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে, তৃণমূলের এই প্রতিষ্ঠিত “লুটতন্ত্র” ভাঙতেই হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ – একটি সম্পূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার দাবি তোলা — যাতে বাংলার প্রকৃত রায় আবার উঠে আসে।’।

