এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৯ অক্টোবর : আজ রবিবার কালীপুজোর উদ্বোধনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক পুজো মন্ডপে যাওয়ার পথে তৃণমূলের বারবার বাধার মুখে পড়তে হল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে । সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতার রাজা রামমোহন সরণীতে যুবশ্রী আয়োজিত শ্রীশ্রী কালী পুজো ও দীপাবলি উৎসবের শুভ সূচনায় গিয়ে তার বিবরণ দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন,’সাত জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছেন বাবুরা । দেখলেই মনে হচ্ছে এরা কেউ ভারতীয় নয় । এদের কাঠামোটাই বলে দিচ্ছে এরা ঘুষপেঠিয়া,অর্থাৎ অনুপ্রবেশকারী । যাদের সোজা ভাষায় বলে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমান এবং বার্মা থেকে কক্সবাজার হয়ে আসার রোহিঙ্গা ।’
তিনি বলেন,’সব জায়গায় । ভীষণ রাগ । বলছে আপনারা আমাদের তাড়াবেন, এসআই আর কেন হবে ? এত জ্বালা যন্ত্রণা কেন ? এদের আরও যন্ত্রণাটা বেড়েছে কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পাটনাতে কয়েকটা ন্যাশনাল চ্যানেলের টকশোতে কয়েকটা ইংরেজি বলে দিয়েছেন । প্রথমটা কি ? “ডিটেক্ট”, মানে চিহ্নিতকরণ । দ্বিতীয় টা কি ? ‘ডিলিট’,অর্থাৎ বাতিল । তৃতীয়টা কি ? :ডিপোর্ট’, মানে পুশব্যাক। বুলডোজারের মাথায় বসাও এবং এপার থেকে ওপারে ছুড়ে দাও।’
তিনি বলেন,’তাই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেছে । নেতৃত্বে কে ? রেখা গাজি । সমঝদার কি নামহি কাফি হ্যায় । নামটা শুনে হবে এদেশীয় কিন্তু পদবীটা বাংলাদেশির । রেখা গাজি । তিনি আবার জেলা পরিষদের মেম্বার । কিন্তু আটকাতে পারেনি । সব জায়গায় মায়ের উন্মোচন করেছি । আরে মুঘল পাঠান পারেনি, তুমি কে হরিদাস পাল । সোমনাথ মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলে কিন্তু সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল আবার খাড়া করে দিয়েছিল । আমরা তো সেই সনাতন যার আদি অন্ত নেই । কবে জাগবেন কলকাতার হিন্দুরা ?’
আসলে,আজ বিকেলে কালীপুজোর উদ্বোধনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক পুজো মন্ডপে যাওয়ার পথে তৃণমূলের হামলার মুখে পড়তে হয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে । রায়দিঘিতে পুজো উদ্বোধনে যাওয়ার পথে কথিত কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে বিরোধী দলনেতাকে গো ব্যাক স্লোগান দেয় তৃণমূলের মহিলারা । মন্দির বাজারে বেনজির বিক্ষোভের মুখে শুভেন্দু। কালীপুজোর উদ্বোধনে যাওয়ার সময় শুভেন্দুর কনভয় লক্ষ্য করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। রাস্তার ধারে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ মহিলাদের। এখানেই রেখা গাজির নেতৃত্বে হামলা হয় বলে অভিযোগ শুভেন্দুর ।
তিনি বলেন,’আমি টাইম মেনটেইন করতে পারিনি । কারন দক্ষিণ ২৪ পরগণায় আমায় কালিপূজোয় ডেকেছিল। সুন্দরবন এলাকায় । ছোট্ট আয়োজন । এতবড় আয়োজন নয় । ওদের তো সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলায়না৷ রায়দিঘি,পাথরপ্রতিমাতে, ফের ডায়মন্ড হারবার মডেল আমতলাতে । আমি ওখানে গিয়েছিলাম একজন হিন্দু হিসাবে । মুখ্যমন্ত্রীর নত্ত্বসত্ত্ব জ্ঞান না থাকলেও আমার আছে । ঝান্ডা নিয়ে যাইনি । পরিবর্তনের বার্তা দিতে যাইনি । কালীমাতার মূর্তি উন্মোচন, প্রদীপ জ্বালানো, পুষ্প দেওয়া,কপালে টিকা লাগানো,দণ্ডবত সাষ্টাঙ্গ প্রনাম নিবেদন করা, কোথাও রক্তদান শিবির, কোথাও দুটো কাপড় বিতরণ, এইগুলোতে অংশগ্রহণ করার জন্য গিয়েছি ।’
শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সেক্যুলারিজম শব্দটাকে তুলে দিন । যেখানে হিন্দু বেশি আছে সেখানে সেকুলাজিম শব্দ আছে । যেখানে হিন্দু কম সেখানে শরিয়া, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, সেখানে সেকুলারিজম চলে না। একটু জাগুন আপনারা ।’ তিনি বলেন,’দেবী দুর্গার ত্রিশুল আর মা কালির খড়্গ, দুটোই লাগবে। আমার মাটি আমার দেশ ধর্ষকদের করবো শেষ । সব কার্টুন একই রকম। দুর্গাপুরের নাসির উদ্দিন। মাটিগাড়ার সাদ্দাম । কালিয়াগঞ্জ এর জাভেদ । সব কার্টুন একই রকম । সমঝদার কি ইসরাই কাফি হ্যায় ।’
আজকের এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে লিখেছেন,’আজ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় আমাকে অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমানরা বারংবার আক্রমণ করে, অন্তত সাতটি স্থানে আমাকে হামলার সম্মুখীন হতে হয়। বারবার আমার গাড়ি থামানোর চেষ্টা করা হয়, এবং লালপুর মাদ্রাসার সামনে সংঘটিত আক্রমণের ঘটনাও ঘটে। এই পরিকল্পিত হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য রেখা গাজি, সেখানকার এসপি কোটেশ্বর রাও এর সহযোগীতায়। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে নয়, আমি স্রেফ একজন হিন্দু হিসেবে কালীপুজো ও দীপাবলি উৎসবে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের নিকটবর্তী হওয়ায় তৃণমূলের মদতে এইসব অনুপ্রবেশকারীরা অবৈধ ভাবে এখানে বাস করছে। এরা আসলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং নির্বাচন কমিশনের “SIR” প্রক্রিয়া নিয়ে এরা আতঙ্কিত, তাই এরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে এভাবেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করছে। পরিস্থিতি এখন এমন যে পশ্চিমবঙ্গের একজন হিন্দু এই সব অনুপ্রবেশকারী মৌলবাদীদের দৌরাত্ম উপেক্ষা করে নিজের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বাধীনভাবে অংশ নিতেও পারবে না। আমাকে এভাবে ভয় দেখিয়ে আটকানো যাবে না। জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় আমি আবার এই এলাকায় আসব।’।

