রাজস্থানের বাসিন্দা মানসী দীক্ষিত ছিলেন একজন মুক্তমনা তরুনী । কোনো সম্পর্ককে তিনি ধর্মের আয়নায় দেখতেন না । খোলামেলা জীবনে অভ্যস্ত বছর কুড়ির মানসী মডেলিংয়ের স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাই এসেছিলেন । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অনেক ফলোয়ার্স ছিল । তাদের অধিকাংশ ছিল তরুন । তরুনীর রুপের ঝলকে মুগ্ধ ছিল সকলেই । এমনই এক রুপমুগ্ধ ফলোয়ার হল মুম্বাইয়ের বাঙ্গুর নগরের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়স্ক পড়ুয়া মুজাম্মিল সাঈদ ৷ তবে তার বাড়ি হায়দ্রাবাদে। ওই তরুন সোশ্যাল মিডিয়ায় মানসী দীক্ষিতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন । মুক্তমনা মানসীও তাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে ধর্মকে কখনো প্রতিবন্ধকা হিসাবে ভাবেননি । তিনি মুজাম্মিলকে নিজের ফটোগ্রাফার নিযুক্ত করেন । কিন্তু এই সরল বিশ্বাসই মানসীর জীবনে মর্মান্তিক পরিনতি ডেকে আনে । রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্য থেকে উদ্ধার হয় সুটকেস (ডাফেল ব্যাগ) বন্দি নিথর দেহ । আজ থেকে সাত বছর আগে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ড সাম্প্রতিক ইতিহাসে নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে৷ কিন্তু কি দোষ ছিল মানসীর ? পুলিশের একটি সূত্র খোলসা করে যে মুজ্জামিল সাঈদ যৌন সঙ্গমের কুপ্রস্তাব দিয়েছিল মানসীকে । কিন্তু তরুনী তার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । আর সেই আক্রোশেই মুজ্জামিল তাকে নৃশংসভাবে খুন করে দেহ সুটকেশে ভরে পাচারের চেষ্টা করে ।
২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর, মুম্বাইয়ের পূর্ব মালাদের মাইন্ডস্পেসের রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে পুলিশ একটি সুটকেশ বা ডাফেল ব্যাগ উদ্ধার করে । পুলিশ ব্যাগের চেইন খুলতেই সুন্দরী তরুনীর ভাঁজ করা দেহ দেখতে পায় । ওই তরুনী আর কেউ নন,তিনি হলেন রাজস্থানের বাসিন্দা মুক্তমনা তরুনী মানসী দীক্ষিত । অবশ্য মৃতদেহ পাওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করে ফেলে মুম্বাইয়ের বাঙ্গুর নগর পুলিশ ৷
পুলিশ তদন্তে জানতে পারে যে কাজের খাতিরেই ফটোগ্রাফার সৈয়দ মোজাম্মিলের সঙ্গে পরিচয় হয় উঠতি মডেল মানসী দীক্ষিতের। জেরায় মুজ্জামিল সাঈদ জানায়,২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর ফটোসুটের কথা বলে মানসীকে নিজের বাড়িতে ঢেকে পাঠায় সে । সেখানেই ছবি তোলার এক পর্যায়ে মানসীকে সে যৌন সম্পর্কের কুপ্রস্তাব দেয় । কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় ফটোগ্রাফার মোজাম্মিল। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারী কাঠের টুকরো নিয়ে মানসীর মাথায় আঘাত করে মোজাম্মিল। এরপরেই জ্ঞান হারান ওই তরুনী। মোজাম্মিল সঈদ পুলিশকে জানায় যে মানসী অজ্ঞান হয়ে পড়ার পর সে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। এরপর সে তাকে জাগানোর চেষ্টা করেছিল এবং এমনকি তার উপর জল ছিটিয়েও দিয়েছিল। মানসী জ্ঞান ফিরে পেতে শুরু করে, কিন্তু সাইদ ভয় পেয়ে যায় যে তার মা ঘরে ঢুকতে পারে। সাইদ তখন দড়ি দিয়ে মানসীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সে তার ফোন থেকে একটি ট্যাক্সিও ডাকে যাতে সে মৃতদেহটি পাচার করতে পারে ।
মোজাম্মিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জ্ঞান হারানোর পরও মানসীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। এরপর গলায় দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে মানসীকে । পরে মানসীর লাশকে সুটকেশে ভরে রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায় । বাঙ্গুর নগর পুলিশের মতে, খবরদাতা মালাদের মাইন্ডস্পেস বাণিজ্যিক কেন্দ্রের কাছে এক যুবককে হেঁটে আসতে দেখেন, তার বহন করা একটি ডাফেল ব্যাগ মাটিতে রেখে তাড়াহুড়ো করে বিকেল ৪টার দিকে চলে যায় । খবরদাতা তার গতিবিধি সন্দেহজনক বলে মনে করেন এবং তিনি যে অটোরিকশায় উঠেছিলেন তার নম্বরটি নোট করে পুলিশে খবর দেন ।
তরুনীর দেহ পাচারের মুহুর্তের সিসিটিভি ফুটেজ ও অনেক প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশের তদন্তে সাহায্য করেছিল । তার মধ্যে যে ক্যাবে করে মোজাম্মিল ওই তরুনীর দেহবন্দি সুটকেশ এনেছিল, সেই ক্যাবের চালকের পুলিশের কাছে স্বাক্ষ দেয় । এছাড়া সুটকেশ ফেলে দেওয়ার পর মোজাম্মিল একটা রিকসায় চড়ে পালায় । যেকথা ক্যাব চালক পুলিশকে জানায়৷ ক্যাব চালক চালক পুলিশকে জানায় যে সাইদ ঝোপের মধ্যে একটি স্যুটকেস ফেলে রিকশায় করে চলে গেছে।
সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্যে পুলিশ অভিযুক্ত যে রিকশায় করে পালিয়ে গিয়েছিল সেটি খুঁজে পায়। পরে পুলিশ মোজাম্মিল সাঈদকে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে ৩০২ এবং ২০১ ধারায় মামলা দায়ের করে জেলে পাঠানো হয় । এখনো এই মামলা আদালতে বিচারাধীন ।।

