এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুর্শিদাবাদ,১৬ অক্টোবর : কলেজে পড়াশোনা করার সময় ভিন ধর্মের যুবকের সাথে প্রেম । কিন্তু তরুনীর পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি । তার কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেয় পরিবার ৷ এদিকে প্রেমিক ভেবেছিলেন একটা ভালো চাকরি জুটিয়ে নিতে পারলে তখন প্রেমের পথে ধর্ম কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না । রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার কোচিং নিচ্ছিলেন । কিন্তু পরীক্ষা ভালো হয়নি । হতাশায় তিনি নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন । খবর পৌঁছে যায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রেমকার কাছে । প্রেমিকের এই মর্মান্তিক খবর শুনে প্রেমিকাও নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন । বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী পঞ্চায়েত এলাকায় । মৃত প্রেমিক প্রেমিকা হলেন শাহবাজ হোসেন (২৪) ও দ্রোণী দাস (২২)।
কিরীটেশ্বরী পঞ্চায়েতের সীমানাপাড়ায় বাসিন্দা ছিলেন শাহবাজ হোসেন । তার বাবা জাকির শেখ পেশায় চিকিৎসক। একই পঞ্চায়েত এলাকার সীমানাপাড়ায় পার্শ্ববর্তী কোঠার গ্রামে বাড়ি দ্রোণী দাসের । দু’জনেই জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজের পড়ুয়া ছিলেন । শাহবাজ ছিলেন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তবে দুই পার্শ্ববর্তী গ্রামে বসবাস হলেও তাদের আগে পরিচয় ছিল না । কলেজেই পরিচয় ও প্রেম । তিন বছরের সম্পর্ক তাদের । কিন্তু হঠাৎ তাদের সম্পর্কের কথা জেনে যায় দুই পরিবার । ভিন্ধর্মের সম্পর্ক মেনে নেয়নি কারও বাড়িতেই। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের মেলামেশা। তারপর প্রেমিক যুগল দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্বাবলম্বী হয়ে প্রেমের সম্পর্ককে পরিণয়ে রূপ দেওয়ার।
শাহবাজ হোসেন ওয়েস্টবেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার কোচিং নিচ্ছিলেন । গত রবিবার সাব-ইনস্পেক্টর পদে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি । কিন্তু পরীক্ষা ভাল হয়নি। এতেই ভেঙে পড়েছিলেন শাহবাজ । প্রেমিকাকে পাওয়ার কোনো আশা দেখতে না পেয়ে তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন । শেষে সোমবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন শাহবাজের বাবা জাকির বাইরে গিয়েছিলেন। মা গিয়েছিলেন বহরমপুরে দিদির বাড়িতে। বাড়ি ফাঁকাই ছিল। সেই সুযোগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন শাহবাজ । বাড়ি ফিরে ছেলেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন বাবা। খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা যুবকের দেহ উদ্ধার করে নবগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই শাহবাজকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
এদিকে প্রেমিকের আত্মহত্যার খবর পেয়ে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন দ্রোণী। কিন্তু পরিবার তাকে বাধা দেয় বলে অভিযোগ । কিন্তু পরিবারের সন্দেহ ছিল তরুনী কিছু করে ফেলতে পারে । তাই নজরে রাখার জন্য দ্রোণীর দিদিকে ডেকে আনা হয়েছিল । কিন্তু সকলের নজর এড়িয়ে মঙ্গলবার বাড়ির দু’তলার ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। মৃত তরুনীর শোকার্ত বাবা খোকন দাস আক্ষেপ করে বলেন,’মেয়ের প্রেমই বড় হল? একবার আমাদের কথা ভাবলনা ।’ এই ঘটনায় দুটি পৃথক অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করেছে নবগ্রাম থানার পুলিশ।।