এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ অক্টোবর : পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর গনধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ও কার্যত নির্যাতিতার ঘাড়েই দায় চাপিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । ঘটনার প্রায় ৪০ ঘন্টা পর আজ রবিবার দুপুরে তিনি মুখ খুলেছেন । মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেছেন,’স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো ঘটনা। ওই মেয়েটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ছিল। বেসরকারি কলেজে, কার দায়িত্ব ? ।রাত ১২.৩০-এ বেরোল কী করে? আমি যতদূর জানি, জঙ্গলের মধ্যে ঘটেছে। ১২.৩০-এ কী হয়েছে জানি না। তদন্ত চলছে। আমি হতবাক। বেসরকারি মেডিক্যালগুলিকে সতর্ক হতে হবে, পড়ুয়াদের খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে, রাতের বেলায় বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিত নয়। নিজেদের রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে জঙ্গল এলাকায়। আমি প্রাথমিক যে রিপোর্ট পেয়েছি, পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। কেউ রেহাই পাবে না। যেই দোষী হোক না কেন, কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য “লজ্জাজনক ও অসংবেদনশীল” আখ্যা দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য । তিনি মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং এক্স-এ শেয়ার করে লিখেছন,’ আর একটি লজ্জাজনক মন্তব্য করে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওড়িশার দুর্গাপুর (পশ্চিমবঙ্গ) আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অধ্যয়নরত ওড়িশার দ্বিতীয় বর্ষের এমবিবিএস ছাত্রীকে নিজের উপর নির্যাতনের জন্য দোষারোপ করেছেন, যাকে ওয়াসিফ আলী এবং তার সহযোগীরা নির্মমভাবে গণধর্ষণের শিকার করেছিল। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে মেয়েদের গভীর রাতে বাইরে বের হওয়া উচিত নয়, অর্থাৎ যদি তারা তা করে তবে তারা ধর্ষণকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রথমবারের মতো এত অসংবেদনশীলতার সাথে কথা বলছেন না। বারবার, তিনি অপরাধীদের পরিবর্তে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে মুখ্যমন্ত্রী তাদের সবচেয়ে খারাপ সময়ে মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন না, তার শাসন করার কোনও নৈতিক অধিকার নেই।’
এদিকে জানা গেছে, এই গনধর্ষণের ঘটনায় মোবাইল টাওয়ার লোকেশন দেখে ৩ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে দুর্গাপুর নিউটাউন থানার পুলিশ । এবিপি আনন্দ জানিয়েছে যে ধৃতরা হল বছর একুশের অপু বাউড়ি বিজড়া বাউড়িপাড়ার বাসিন্দা, ২৩ বছর বয়সের ফিরদৌস শেখ বিজড়া বাউড়িপাড়ার বাসিন্দা, ৩১ বছরের শেখ রিয়াজউদ্দিন বিজড়া ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা । এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে বলেও শোনা গিয়েছে। এখনও অধরা ২ জন।
পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ্যে এনেছেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন,’দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়ার গণধর্ষণের অভিযুক্তদের পরিচয় দেখে নিন:-শেখ নাসিম উদ্দিন, শেখ রিয়াজ উদ্দিন,শেখ ফেরদৌস ও শেখ সফিকুল। প্রত্যেকের বাড়ি বিজড়া গ্রামে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কথায় এদের ‘লাথি খাওয়া’ নিয়ে আপত্তি করা উচিত নয় !!! তাই এদের উৎপাত ও অপরাধ প্রবণতা দিন দিন ক্রমবর্ধমান…।’ তিনি আরও জানিয়েছেন যে গনধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত শেখ নাসিম উদ্দিন এখনো পলাতক ।
এদিকে ঘটনায় নির্যাতিতার সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদারকে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, ওই বন্ধুই তাঁকে বাইরে যেতে বাধ্য় করেছিলেন। অভিযুক্ত এই সহপাঠীকে আটক করেছে পুলিশ। চলছে জেরা। রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতা তরুণী ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা। তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওই পড়ুয়া সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিলেন ফুচকা খেতে। সেই সময় কয়েকজন যুবক ওই তরুণীর পথ আটকায় এবং জোর করে হাসপাতালের পিছনের দিকে থাকা একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। এদিকে দুষ্কৃতীদের তাড়া খেয়ে তরুণীর সঙ্গে থাকা বন্ধুটি পালিয়ে যান বলে জানা যায়। গণধর্ষণ করার পর ডাক্তারি পড়ুয়ার মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা।
দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ডাক্তারি ছাত্রীর গনধর্ষণের পর দেশ জুড়ে ছিঃ ছিঃ পড়ে গেছে । শুধু বিজেপি বা উড়িষ্যা সরকার নয়,বহু সাধারণ মানুষ পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন । তাদের জবাব দিতে পালটা আক্রমণের রাস্তায় হেঁটেছেন মমতা ব্যানার্জি । তিনি এদিন বলেছেন,”তিন সপ্তাহ আগে ওড়িশায় তিনটি মেয়েকে সমুদ্র সৈকতে ধর্ষণ করা হয়। ওড়িশা সরকার কী করেছে? বাংলায় মহিলাদের সঙ্গে কিছু হলে, আমরা হালকা ভাবে নিই না। গুরুতর ঘটনা।’
এদিকে গতকাল দুর্গাপুরে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা ডাঃ অর্চনা মজুমদার জানান,এরাজ্যে নারী নির্যাতনের ৪ লক্ষ মামলা অমীমাংসিত, ভারতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে । তার অভিযোগ,’পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে যে ঘুন ধরেছে, সে মামলা আনসলভড, এনসিআরবি বলছে যে আমাদের মেয়েদের উপর ক্রাইমের ৪ লক্ষের বেশি মামলার কোনো সুরাহাই হয়নি । এখনো অব্দি বিচার হয়নি । সারা ভারতবর্ষের মধ্যে এক নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ । এগুলোকে দ্রুত ফাস্ট ট্রাক কোর্টে বিচার করে মেয়েদেরকে তো ন্যায়বিচার দিতে হবে । শুধু তাই নয়, এই যে ক্রাইমগুলো হচ্ছে হচ্ছে, আমরা এখন দৌড়াদৌড়ি করলাম, সাত দিন পর ধামাচাপা পড়ে গেল । তারপর আর আলোই দেখল না ।’।

