এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১১ অক্টোবর : বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা(Special intensive review) বা এসআইআর-এ ৭৬ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ যাওয়াতে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে কার্যত আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে । কারন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ও এরাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি যে কমিশন যদি যথাযথ এসআইআর করে তাহলে এক কোটি ভুয়ো নাম বাদ যাবে । যদিও বিজেপির এই দাবির ধারেকাছেও যায় তাহলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে তৃণমূল । কারন ওই সমস্ত ভুয়ো ভোটারের ভোট তৃণমূলের পক্ষেই পড়ে বলে অভিযোগ । এতে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে তৃণমূলের মধ্যে ।
আর এই আতঙ্কের প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল দিন দুয়েক আগে নবান্নে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির সাংবাদিক সম্মেলনে । মুখ্য সচিবকে সাথে নিয়ে তিনি কার্যত রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার(সিও)-কে কার্যত “ভয় দেখানোর চেষ্টা” করেন বলে অভিযোগ শুভেন্দুর । আজ শনিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে দলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্যের মধ্যে সেই আতঙ্কের ছাপ দেখা গেল । কুনাল দলীয় নেতাদের আশ্বস্ত করার পাশাপাশি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘এসআইআর নিয়ে এককাট্টা থাকুন। মাথার উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। তৃণমূল পরিবার সাথে আছে। একজন আসল ভোটারের নাম যদি ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায় তাহলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক লক্ষ লোক নিয়ে গিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করা হবে।’
প্রসঙ্গত,বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদের শিরোনামে থাকা কুনাল ঘোষ আজ আসন্ন বিধানসভার ভোটে ফলাফলের ভবিষ্যৎবানীও করে গেছেন । তার দাবি ২০২৬-এর ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রীর পদে পরিবর্তন না হলেও বিরোধী দলনেতার পরিবর্তন হবে এবং পূর্ব বর্ধমান জেলায় সবকটি বিধানসভায় তৃণমূল জয়লাভ করবে । তিনি বলেন,’২০২৬ এ আড়াইশো আসন নিয়ে আবার তৃণমূল আসছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদে পরিবর্তন হবে না। পরিবর্তন হবে বিরোধী দলনেতার পদে। কারণ ওই পদে থাকার মতন যথাযথ বিধায়ক সংখ্যা বিজেপির থাকবে না৷’ কুনাল আরও দাবি করেন,’এই বিজয়া সম্মিলনীর সভা আসলে বিজয় উৎসবের সভার ভিত্তিস্থাপন করছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৬ এর মধ্যে ১৬ আসনে আমরা জিতব। আগামী নির্বাচনে একটা ঐতিহাসিক জয়ের দিকে এগোচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার বাংলার সব রেকর্ড ভেঙে যাবে।’
পাশাপাশি গত শনিবার জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটায় দুর্যোগ কবলিত মানুষের খোঁজ নিতে গিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে মালদা উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে “জনরোষ” বলে চালিয়ে দেন তৃণমূলের কুনাল । তার কথায়,’নাগরাকাটার ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস জড়িত নয়। ওটা সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ। উত্তরবঙ্গে মানুষের পাশে বিজেপির নেতারা দাঁড়াতে যাননি। গিয়েছিলেন ছবি তুলতে। তাই সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। একশোদিনের কাজ করিয়ে বিজেপি পাওনা টাকা আটকে রেখেছে। অথচ সেই টাকা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে বিক্ষোভ হবে না?’
এদিন কাটোয়া মহকুমা এলাকার কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কাঁদরা, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের পাচুন্দি এবং কাটোয়া ১ ব্লকের পঞ্চাননতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন কুণাল ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহনাওয়াজ প্রমুখ । তবে শুক্রবার রাতে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পাঠরত উড়িষ্যার তরুনীর গনধর্ষণের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি কুনাল ঘোষ । ওই ঘটনা ঘিরে বর্তমানে তোলপাড় চলছে রাজ্যজুড়ে । আজ সন্ধ্যায় কললাতায় দলীয় কার্যালয়ে এনিয়ে “জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন”ও করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।।

