বিজেপির রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর(Subramaniam Swamy) মেয়ে সুহাসিনীকে নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের । পেশায় সাংবাদিক সুহাসিনী বিয়ে করেছেন নাদিম হায়দারকে৷ তারপর থেকে তিনি বাবার পদবী “স্বামী” ব্যবহার করেন না । সাংবাদিক মহলে তিনি সুহাসিনী হায়দার(Suhasini Haider) নামেই পরিচিত । সুহাসিনী দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ কমিউনিকেশন থেকে ব্রডকাস্ট জার্নালিজমে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন । সেখানেই নাদিম হায়দারের সঙ্গে পরিচয়-প্রেম ও তারপর বিবাহ । দম্পতি দুই মেয়ে আভা মুমতাজ এবং মায়া মেহরের সাথে দিল্লিতে থাকেন ।
২০১৯ সালের এপ্রিলে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মেয়ের ধর্মান্তরিত হওয়া নিয়ে বিজেপি সমর্থকদের অন্দরেই শোড়গোল পড়ে যায় । সাংবাদিক কন্যার বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অভিযোগ করলে এক বিজেপি সমর্থকের উপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সুব্রামানিয়াম স্বামী ।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর সাংবাদিক মেয়ে সুহাসিনী হায়দারের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বিজেপি সমর্থক সুলগ্না দাস তাকে ‘ধর্মান্তরিত মুসলিম মহিলা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন । আসলে,আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে “জায়েদ পদক” প্রদানের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সুহাসিনী হায়দার টুইট করেন, জায়েদ পদক ঘোষণা কি প্রধানমন্ত্রীর আবুধাবি মন্দিরে সম্ভাব্য সফরের সাথে সম্পর্কিত? যাই হোক না কেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিদেশী সরকারগুলির পক্ষে এই ধরনের ঘোষণা করা অদ্ভুত।’ তার সেই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে সুলগ্না দাস তাকে ‘ধর্মান্তরিত মুসলিম মহিলা’ বলে অবিহিত করেন । তিনি লিখেছিলেন,’বুঝতে পারছি না কেন এই ধর্মান্তরিত মুসলিম মহিলা সবসময় হিন্দু এবং বিজেপির বিরুদ্ধে ?’ সুলগ্না দাসের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সুব্রহ্মণ্যম স্বামী টুইট করেন,’তুমি হয় মিথ্যা বলছো, নয়তো একটা বোকা। সে ধর্মান্তরিত হয়নি।’
২০১৯ সালে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘উন্নত’ করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘জায়েদ পদক’ প্রদান করে । দুবাইয়ের স্থানীয় সংবাদদাতাদের মতে, এটি ছিল একটি হিন্দু মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে মোদীর আবুধাবি সফরকে থামানোর জন্য।
প্রসঙ্গত,সুহাসিনী হায়দার তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ও বামপন্থী ঘেঁষা দ্য হিন্দু পত্রিকার জাতীয় সম্পাদক এবং কূটনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দারের ছেলে নাদিম হায়দারের সাথে বিবাহিত। যা নিয়ে প্রায়ই সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে হিন্দুত্ববাদীদের কটাক্ষের শিকার হতে হয় ।
উল্লেখ্য,২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল,ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ছয় সদস্যের মনোনয়নের অনুমোদন দেন। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সুপারিশের পর এই ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন খ্যাতিসম্পন্ন ক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে। মনোনীত ছয়জন ছিলেন হিন্দু থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, প্রবীণ বিজেপি নেতা এবং গান্ধী পরিবারের সমর্থক সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, অর্থনীতিবিদ নরেন্দ্র যাদব, অলিম্পিক পদকজয়ী মেরি কম, মালায়ালম অভিনেতা সুরেশ গোপী, প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ এবং ক্রিকেট ভাষ্যকার নভজ্যোত সিং সিধু এবং আরএসএসপন্থী সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্ত ।
প্রসঙ্গত,ডঃ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ভারতে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনে এক নতুন শক্তি যোগাবে বলে তখন আশা করেছিল বিজেপ । যার মাধ্যমে অযোধ্যার রামজন্মভূমি মন্দির নির্মাণ, গোহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ, জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ, সুইস ব্যাংক থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনা, স্বদেশী অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা এবং এই ভূমির হিন্দু ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত আরও অনেক বিষয় নিয়ে সরব ব্যক্তিত্ব ছিলেন স্বামী । এছাড়া তিনি টুজি কেলেঙ্কারি, অযোধ্যায় রাম মন্দির এবং সেতুসমুদ্রম প্রকল্পের বিরোধিতা সহ তাঁর কাছে আকর্ষণীয় বিষয়গুলির দৃঢ়তার সাথে অনুসরণের জন্য পরিচিত এবং অনেক আইনি লড়াইয়ের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। স্বামীকে আরএসএসের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। একজন ধর্মপ্রাণ জাতীয়তাবাদী ডঃ স্বামী হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং অর্থনীতি ও আইন উভয় ক্ষেত্রেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলে৷ । ডঃ স্বামী তাঁর সংগঠন বিরাট হিন্দুস্থান সঙ্গমের জাতীয় প্রধানও।
কিন্তু পরে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ও নভজ্যোত সিং সিধুকে মনোনীত না করায় প্রবল মোদী বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন । সিধু তো রেগেমেগে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে দেন । যদিও গান্ধী পরিবারের গুনমুগ্ধ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দলবদল করেননি,তবে প্রায়ই তাকে মোদীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে দেখা যায়৷ ক্রমে বিজেপি তাকে কার্যত একঘরে করে দিলে মুখ বন্ধ হয় তার ।।

