এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১১ অক্টোবর : স্বাধীনতার পর ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে,যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে । আর মুসলিম জনসংখ্যার এই বিপুল বৃদ্ধি জন্মহারের বৃদ্ধির কারনে নয়, বরঞ্চ পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কারনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ । শুক্রবার হিন্দি সংবাদপত্র দৈনিক জাগরণ(Dainik Jagaran) আয়োজিত “নরেন্দ্র মোহন স্মৃতি বক্তৃতা এবং সাহিত্য সৃষ্টি সম্মান অনুষ্ঠানে” বক্তব্য রাখেন অমিত শাহ । নিজের বক্তব্যে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেন তিনি । বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) করার পর পশ্চিমবঙ্গে তার প্রস্তুতি চলছেন । কিন্তু মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছে এরাজ্যের এসআইআর প্রক্রিয়া । এই পরিস্থিতিতে অমিত শাহের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে ।
অমিত শাহ বলেছেন,’১৯৫১ সালের জনগননায় হিন্দু ছিল ৮৪% এবং মুসলিম ৯.৮% ছিল । ১৯৭১ সালে হিন্দু ছিল ৮২% এবং মুসলিম ১১% । ১৯৯১ সালে হিন্দু ছিল ৮১% এবং মুসলিম ১২.২১%। আর ২০১১ সালে হিন্দু হয় ৭৯% এবং মুসলিম ১৪.২% পৌঁছে যায় ।’ তিনি বলেন,’আপনারা এই সংশয়ে থাকবেন যে কেন আমি কেবলমাত্র দুই ধর্মের কথাই বলছি । কারন আমি অনুপ্রবেশ এর কথা বলতে চাইছি তাই কেবলমাত্র এই দুটি ধর্মের কথাই উল্লেখ করছি । এর রেফারেন্স আমি পরে বলব, আমাদের দেশের বিভাজন ধর্মের ভিত্তিতেই হয়েছিল । যদি দেশভাগ না হতো তাহলে ধর্মের ভিত্তিতে জনগণনা করার কোন প্রয়োজনই হতো না। যেহেতু দেশের ভাগ ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছিল সেই কারণে হয়তো কংগ্রেস নেতারা ১৯৫১ সালের জনগণনা থেকে ধর্মকে চিহ্নিত করা সঠিক মনে করেছিল।’
এরপর তিনি বলেন,’এক প্রকার অনেক কিছু রদবদল হয়েছে । মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি ২৪.৬% হারে হয়েছে । যেখানে হিন্দুর জনসংখ্যার ৪.৫% হারে কমেছে । আর এটা জন্মহারের বৃদ্ধির কারণে হয়নি । এটা অনুপ্রবেশের কারণে হয়েছে ।’ তিনি অনুপ্রবেশকারী এবং শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্যও বিশ্লেষণ করেছেন । এই বিষয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘যারা নিজের ধর্মকে বাঁচানোর জন্য, যেটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার, সংবিধানের ১৯ এবং ২১ ধারায় আমরা তাদের অধিকার দিয়েছি, তারা যদি নিজের ধর্ম বাঁচাতে ভারতের আশ্রয়ে আসে তাদের আমরা শরণার্থী বলব । আর ধর্মকে বাঁচানোর জন্য শুধু হিন্দুরাই আসেনি । হিন্দু এসেছে বৌদ্ধ এসেছে শিখ এসেছে খ্রিস্টান এসেছে । তাদের সকলকে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য আমরা সিএএ করেছি । এবারে একটা দাবি উঠছে যে তাহলে অনুপ্রবেশকারী কারা ? ধার্মিক কারণের জন্য নয়, উপার্জন করতে অথবা অন্য কোন কারণে অবৈধভাবে যারা ভারতে ঢুকেছে ওরাই অনুপ্রবেশকারী । আর যদি দুনিয়ার লোককে আমরা আশ্রয় দিতে শুরু করি তাহলে এদেশ ধরমশালা হয়ে যাবে, আমাদের দেশ অচল হয়ে যাবে ।’
গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, দৈনিক জাগরণের ওই সেমিনারে জাতীয় ঐক্য, ধর্মীয় বিভাজন এবং সাংবাদিকতার ভূমিকা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ চিন্তাভাবনা ভাগ করে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ধর্মের নামে ভারত ভাগ করা ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রকে সফল করার একটি উপায় ছিল।’ তিনি অনুপ্রবেশের কারণগুলির উপর আলোকপাত করার সময় যে মতামত প্রকাশ করেছেন, তা প্রকাশ করে যে কেন পাকিস্তান, বাংলাদেশ ইত্যাদি থেকে অনুপ্রবেশ এখনও একটি গুরুতর সমস্যা ।
তিনি স্বীকার করেছেন যে সীমান্ত সুরক্ষা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব, এবং তাই অনুপ্রবেশ রোধ করা তাদের দায়িত্ব। তবে, তিনি অনুপ্রবেশকারীরা কোথায় যায় এবং কে তাদের আশ্রয় দেয় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলির দুর্গমতার কারণে অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকে, কিন্তু অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্ত এলাকায় তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে কারণ তারা সেখানে আশ্রয় পায়। তাছাড়া, তাদের জন্য জাল পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়। এটি এমন একটি সত্য যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সর্বোপরি, পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড এবং আধার কার্ড কীভাবে পান তা কোনও গোপন বিষয় নয়। রাজ্য সরকারগুলির পক্ষে এটি সম্পর্কে অজানা থাকা অসম্ভব। এটি উদ্বেগজনক যে কিছু রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশকারীদের ভোট ব্যাংক হিসাবে দেখে।
এই কারণেই বাংলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কোনও থানায় অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় না। অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে দেখা এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে হুমকি। অনুপ্রবেশকারীরা শরণার্থী নয়। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত। এখন এটা স্পষ্ট যে কিছু রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশ বন্ধে গুরুতর নয় এবং বিপরীতে, তাদের বহিষ্কারের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে।
আমাদের এই সত্যটি উপেক্ষা করা উচিত নয় যে সংকীর্ণ ভোটব্যাংক রাজনীতির কারণে বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, তারা কেবল সামাজিক কাঠামোই বদলে দেয়নি, বরং কিছু নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের ফলাফলকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য একটি বিপদ সংকেত।
সকল রাজনৈতিক দলকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এই আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক যে, অনুপ্রবেশ রোধে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকা উচিত, তবে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার বিরোধিতাও রয়েছে। অতএব, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেশব্যাপী ভোটার তালিকার একটি বিশেষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ সংশোধন করা আরও জরুরি বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ।।

