এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,১০ অক্টোবর : উনানে তখন বসানো একটা পোড়া এলুমিনিয়ামের হাঁড়ি । কাঠের জ্বাল দিয়ে তাতে খুদ ফোটাচ্ছেন স্ত্রী ৷ বাড়ির একটু দূরে রাস্তায় তখন হঠাৎ ব্যস্ততা ৷ নজরে পড়তেই ছোট্ট বাড়ির সামনে একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ান তিনি । দেখেন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী স্বামীকে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও । প্রায় এক দশক ধরে যে মানুষটার সঙ্গে সংসার করেছেন তার এই দুর্দশা দেখে তিনি আর স্থির থাকতে পারেননি । অঝোরে চোখের জল ঝড়তে থাকে বছর পঁয়ত্রিশের ওই বধূর । আজ শুক্রবার এই হৃদয়বিদারক ঘটনার স্বাক্ষী থাকলো উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দেগঙ্গার সোহাই শ্বেতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্বেতপুর মোল্লাপাড়া ।
আসলে, একটি খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন রিঙ্কু ঘোষ নামে ওই বধূর স্বামী মনিহর ঘোষ ওরফে মনা ঘোষ । আজ সেই খুনের ঘটনার পুননির্মাণ করতে ধৃত মনা ঘোষ ও আসমাতার বিবিকে অকুস্থলে এনেছিল পুলিশ । পাঁচালি বিহীন বাড়ির এক কোনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে সেই সব কিছু প্রত্যক্ষ করছিলেন তিনি । তার তিন শিশুসন্তান তখন বাড়িতেই ছিল । কিন্তু ওই অবোধগুলো তখনো বুঝতে পারছে না যে কি চরম সর্বনাশ নেমে এসেছে তাদের উপর ।
দেগঙ্গার সোহাই শ্বেতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্বেতপুর মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা মনা ঘোষ পেশায় জনমজুর । অল্পস্বল্প জমিতে চাষবাসও করতেন । সেই সাথে কয়েকটি গাভি রয়েছে তার । গরুর দুধ বিক্রি, চাষ ও জনমজুরির উপার্জনে স্ত্রী ও তিন নাবালক সন্তানকে নিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালাতেন তিনি । প্লাস্টার বিহীন দু’কামরার ইঁটের ঘর রয়েছে তাদের৷ এখনো দরজা জানালা লাগানো হয়নি । তাতেই একটা ঘরে ৫ জন থাকতেন ৷ অন্য ঘরে রাখা হয় পোষ্য গাভিগুলিকে । অভাব থাকলেও মোটামুটি নির্বিঘ্নে দিন চলে যাচ্ছিল ওই পরিবারটির । কিন্তু গত সোমবার পরিবারটির উপরে ঝড় বয়ে যায় ।
কারন ওইদিন মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা সরিফুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবক খুন হন । একটি ধানের জমিতে ওই যুবকের রক্তাক্ত নগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । সেই খুনে নাম জড়ায় রিঙ্কুদেবীর স্বামী মনার । তাকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতিবেশী আসমাতার বিবি নামে এক মহিলাসহ আরও দু’জন । আজ সেই খুনের ঘটনার পুননির্মাণ করা হয় । আসমাতারা বিবির বাড়ির পিছনে নির্জন বাগানের পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার হয় মৃতের পরণের লুঙ্গি। তবে তার মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়নি ।
এদিকে স্বামীর খুনের মামলায় গ্রেপ্তারে তিন নাবালক সন্তানকে কার্যত অথৈ জলে পড়েছেন রিঙ্কুদেবী । বাড়িতে কানাকড়ি নেই যে স্বামীর জন্য আইনি খরচ জোটাবেন । গরুর দুধ বিক্রি করে যেটুকু উপার্জন হচ্ছে তাতেই বহু কষ্টে চারজনের অন্নসংস্থান করছেন তিনি । তারপরে রয়েছে গনরোষের ফলে একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয় । চোখ মুছতে মুছতে রিঙ্কুদেবী সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন,’যার ইচ্ছা হয় খোঁজ নেয় । যার ইচ্ছা হয়না কথা বলে না । জানিনা কি করব ।’।

