এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৬ অক্টোবর : বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অপূর্ব পাল নামে এক ছাত্র সম্প্রতি কোরানের পাতা ছেঁড়ার এবং কোরানের কপিতে লাথি মারার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় দেশ জুড়ে ৷ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায় সেদেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম “একুশে টেলিভিশন” যখন ওই যুবককে হিন্দু বলে প্রচার চালায় । একটা টেলিভিশন চ্যানেলের এহেন জিহাদি মানসিকতার কারনে উগ্র ইসলামি মৌলবাদীদের রোষানলে পড়ে হিন্দুরা । ফলে তারা সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কিত আছে ।
কিন্তু জানা গেছে যে অভিযুক্ত অপূর্ব পাল ২০২৩ সালে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়েছিল । তার নাম রাখা হয়েছিল মহম্মদ অপুর্ব রাদ । কিন্তু সে হিন্দু নাম ব্যবহার করেই সোশ্যাল মিডিয়া চালাত । আর এটাকেই হাতিয়ার করে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়াচ্ছে “একুশে টেলিভিশন”-এর মত বাংলাদেশের জিহাদি চ্যানেলগুলি ।
মহম্মদ অপুর্ব রাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন তার প্রাক্তন শিক্ষক আসিফ বিন আলি (Asif Bin Ali)। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,’নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি আমার ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিনি ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেন, নাম পরিবর্তন করেন, এবং নিয়মিত ধর্ম পালন করতেন। তিনি আমার ক্লাস করেছেন জোব্বা পরে, মাথায় পাগড়ি দিয়ে।
দুঃখজনকভাবে, ছেলেটি পরবর্তীতে ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ক্যাম্পাসে প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করত। (অদ্ভুত আচরণের নমুনা দেই, সে এনএসউ ও বসুন্ধরার মসজিদে গিয়ে মানুষকে টুপি না পরলে কিংবা টাকনুর উপর কাপড় না পরলে বকা ঝকা করতো)। এই সব নিয়ে ক্যাম্পাসে ভিন্ন ধর্মের একাধিক ছেলে মেয়ের সাথে ওর ঝামেলা হয়। তার বৃদ্ধ মা তাকে সুস্থ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। ২০২৪ সালে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রাগ আসক্তি ও অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বহিষ্কৃত হন।
যদি আমি ভুল না বলি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং পরিবারের সংগ্রামের বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে পুনরায় পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ছেলেটির ড্রাগ সমস্যা কিংবা মানসিক সমস্যা-কোনোটিরই যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। আমি জানি না তার সাম্প্রতিক আচরণের পর আর কী বলব, শুধু এটুকু বলতে পারি-সে যা করেছে, তা মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় করেছে। কাজটি অতি অন্যায় ও ঘৃণিত। কিন্তু বিষয়টি কোন বড় ষড়যন্ত্র নয়, একজন মানুষিক রোগীর কাজ। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা তাকে চিনতেন, সবাই জানেন। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো তাকে দ্রুত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (রিহ্যাব) পাঠানো।’
শনিবার রাতেই পুলিশ ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মহম্মদ অপুর্ব রাদ ওরফে অপূর্ব পালকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার (৫ অক্টোবর) তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অপ্রীতিকর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন কট্টরপন্থী ইসলামী প্রচারক মিজানুর রহমান আজহারী। তিনি লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কুরআন অবমাননার যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বের একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে আজহারী লিখেছেন, ‘ইতিপূর্বে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে, হাদিসের উদাহরণ দেওয়ার কারণে শিক্ষকের বহিষ্কার দেখেছে গোটা দেশ! এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা প্রবাহ নয় বরং কাঠামোগত ইসলাম বিদ্বেষের উদাহরণ। কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন হলে, মানসিক হাসপাতালে যাবে। অথবা যাবে রিহ্যাব সেন্টারে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন?’
এই ঘটনার পেছনে দেশকে অস্থিতিশীল করার কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে কেউ সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগাতে চাচ্ছে কি না— সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। এটা দেশকে অশান্ত করার একটি নীলনকশার অংশও হতে পারে।’
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে এই ঘটনার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা দিয়ে আজহারী বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুসলিম শিক্ষার্থীদেরও উচিত এর কঠোর প্রতিবাদ জানানো। কোরান এসেছে গোটা মানবজাতির হেদায়েত হিসেবে। কোন ধর্মগ্রন্থের অবমাননাই আমরা বরদাশত করব না। প্রতিবাদ কর্মসূচি ছাড়াও, আগামী এক মাস নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ কোরান তিলাওয়াত কর্মসূচি, কোরান স্টাডি সার্কেল, কোরানের অনুবাদ ও তাফসির বিতরণ কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অপূর্ব পালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আজহারী। লিখেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এই কুলাঙ্গারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই; যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন দুঃসাহস দেখানোর স্পর্ধা না দেখায়।’
এদিকে বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিক দেব চৌধুরী ধর্মান্তরিত হয়ে আবদুল্লাহ মহম্মদ নাম গ্রহন করলেও তিনি নিজের হিন্দু নামই এখনো ব্যবহার করায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে । এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়েছে,’সাংবাদিক দেব চৌধুরী মুসলিম হওয়ার পর তার নাম রাখা হয়েছে আবদুল্লাহ মহম্মদ। কিন্তু তিনি এখনো মিডিয়ায় দেব চৌধুরী ব্যবহার করেন। তিনিও যদি ভবিষ্যতে তৌহিদী জনতার অনুভূতিতে আঘাত করেন তাহলে তার হিন্দু নাম ধরেই মিডিয়া কভারেজ হবে আর সাধারণ হিন্দু কমিউনিটি অস্বস্তিতে পড়বে। তাই, অনুরোধ করছি নওমুসলিমরা যেন তাদের নতুন ইসলামী নাম দিয়েই তাদের ধান্দাবাজী বজায় রাখেন।সাংবাদিক দেব চৌধুরী মুসলিম হওয়ার পর তার নাম রাখা হয়েছে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ। কিন্তু তিনি এখনো মিডিয়ায় দেব চৌধুরী ব্যবহার করেন। তিনিও যদি ভবিষ্যতে তৌহিদী জনতার অনুভূতিতে আঘাত করেন তাহলে তার হিন্দু নাম ধরেই মিডিয়া কভারেজ হবে আর সাধারণ হিন্দু কমিউনিটি অস্বস্তিতে পড়বে। তাই, অনুরোধ করছি নওমুসলিমরা যেন তাদের নতুন ইসলামী নাম দিয়েই তাদের ধান্দাবাজী বজায় রাখেন।।