এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ অক্টোবর : ২০২৫ সালের দুর্গোৎসবের সময়ে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের নেতানেত্রীরা একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন । প্রথমতঃ পিতৃপক্ষে দুর্গাপূজা মণ্ডপের উদ্বোধন করায় মমতা ব্যানার্জির সমালোচনায় সরব হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ তার কথায়,সনাতনী রীতি অনুযায়ী পিতৃপক্ষে কোনো শুভ কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । এছাড়া জুতো পরে পুজোর উদ্বোধন ও বাম হাতে দেবীমূর্তির দিকে ফুল ছোড়ার জন্যও সমালোচিত হয়েছেন মমতা । তার সাথে বাম হাতে পুজোমণ্ডপের মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের জন্য সমালোচিত হয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । এছাড়া পুজোমণ্ডপে তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের গাওয়া ইসলামিক গান ও তাকে হাততালি দিয়ে সঙ্গত দেওয়ায় মমতা ব্যানার্জিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে । পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী এলাকায় জুতো পরে পুজোর উদ্বোধন করায় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মিত্রের নিন্দায় সরব হয় বিজেপি । তবে নবমীর দিন কালিঘাটের সতীপীঠে দেবীমূর্তির দিকে “উচ্ছিষ্ট” প্রসাদ বা চরনামৃত ছুড়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্কে জড়ান মমতা ব্যানার্জি । তার এই কর্মকান্ডের জন্য শুধু এরাজ্যই নয়,দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে । এখনো সেই ভিডিও ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ।
তবে মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের দ্বারা হিন্দু ধর্মের অপমান করার নজির এটাই প্রথম নয়, এর আগেও বহু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা । তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল সিপিএমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হিন্দু দেবদেবীদের সম্পর্কে কটুক্তি করতে দেখা গেছে তৃণমূলের নেতানেত্রীদের । এখন প্রশ্ন উঠছে যে মমতা ও তার দলের নেতানেত্রীদের দ্বারা হিন্দু ধর্মের বারবার অপমান করা কি অসতর্কতা, নিছক ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি নাকি বাংলার সনাতনী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার প্রয়াস ? তবে এটা যে নিছক অসতর্কতা নয়,তার প্রমান হল তৃণমূল বা সিপিএমের নেতারা ঘুণাক্ষরেও অন্য ধর্ম সম্পর্কে কোনো কটুক্তি করেন না । তাদের নিশানায় থাকে মূলত হিন্দু দেবদেবী ।
রাজ্যের শাসকদলের এহেন কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণ করা হয়েছে হিন্দি নিউজ চ্যানেল জি নিউজের জনপ্রিয় শো “ডিএনএ”-এ তে । চ্যানেলটির অনলাইন এডিশনে লেখা হয়েছে,আমরা পশ্চিমবঙ্গে দেবী দুর্গার মূর্তির সামনে “কাবা ও মদিনা” গানের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করতালির একটি ডিএনএ পরীক্ষা করব। বন্ধুরা, দুর্গাপূজার কথা উঠলেই পশ্চিমবঙ্গের কথা মনে পড়ে । সেখানকার পূজা মণ্ডপগুলির জাঁকজমকপূর্ণ ।
কিন্তু সেখানকার সরকার সেই ঐতিহাসিক ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সনাতনীদের বিশ্বাসের সাথে হস্তক্ষেপ করছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তার বিধায়করা দুর্গা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে দেশের ১০০ কোটি হিন্দুর বিশ্বাসে আঘাত করছেন। যেখানে দেবীর প্রশংসা করা উচিত, সেখানে ইসলামিক প্রতীক জপ করা হচ্ছে। অতএব, আজ আমরা পশ্চিমবঙ্গের দুর্গা মণ্ডপে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে করা পাপ বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি, যা সনাতনীদের গভীরভাবে আহত করেছে।
বন্ধুরা,নবরাত্রিতে নয় দিন ধরে পবিত্রতা এবং ভক্তির সাথে শক্তির পূজা করা হয়। এখন, নবরাত্রির সময়, প্রায় প্রতিটি হিন্দু মাতৃদেবীকে পূজা করছেন। মানুষ দুর্গা সপ্তশী, হিন্দিতে দুর্গা চালিশা পাঠ করেন, গায়ত্রী মন্ত্র জপ করেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রার্থনা করেন। যাইহোক, কলকাতার ভবানীপুরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের একজন বিধায়ক দুর্গা প্যান্ডেলে মক্কা এবং মদিনার কথা স্মরণ করে একটি গান গেয়েছিলেন। বিধায়কের নাম মদন মিত্র, যিনি অভিনেতা থেকে বিধায়ক হয়েছেন। দুর্গা প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে সুর ও তালে তিনি যা গাইছেন তা দুর্গা চালিশায় কোথাও পাওয়া যায় না, দেবীর উদ্দেশ্যে কোনও স্তোত্রও পাওয়া যায় না। তিনি দুর্গা প্যান্ডেলে ইসলামের ডাক দিচ্ছেন, এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করতালি দিচ্ছেন এবং অনুমোদন করছেন। দুর্গা প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে মদন মিত্র কী পাপ করেছেন তা আপনাদের শোনা উচিত।
দেবী দুর্গার সামনে দাঁড়িয়ে মদন মিত্র বাংলায় ঘোষণা করছেন যে তাঁর হৃদয়ে কাবা এবং চোখে মদিনা রয়েছে । তিনি সুর ধরে গান গাইছেন, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাচছেন এবং হাততালি দিচ্ছেন। বিবেচনা করুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও একজন মহিলা। দুর্গাপূজায় দেবী মাতৃদেবীর পূজা করা হয়, কিন্তু তিনি দেবী দুর্গার সামনে অ-সনাতন প্রতীক নিয়ে কথায় মগ্ন, যাতে মনে হয় যেন দেবীর সামনেই তাঁর পূজা হচ্ছে।
বন্ধুরা, দেবীর প্রশংসা করার পরিবর্তে দুর্গা প্যান্ডেলে কাবা এবং মদিনাকে স্মরণ করাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা যায় না। এটি ১০০% মুসলিম ভোট ব্যাংককে আকর্ষণ করার একটি ঘৃণ্য প্রচেষ্টা এবং সনাতন ধর্মের প্রতি অসম্মান। মদন মিত্রের “হৃদয়ে কাবা এবং চোখে মদিনা” থাকলে তার মসজিদে যাওয়া উচিত ছিল । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে দুর্গা প্যান্ডেলে তিনি যেভাবে এই পাপ করেছেন, তা দেশের ১০০ কোটি হিন্দুকে উস্কে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।
বন্ধুরা, মদন মিত্রের মতো বিধায়করা যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সনাতিদের উপহাস করছেন, তখন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একজন তৃণমূল বিধায়ক দুর্গাপুজোর সময় একটি ইসলামিক ফরমান জারি করেছেন। আমডাঙ্গার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক রফিকুর রহমান তার এলাকার দুর্গাপুজো আয়োজকদের নামাজের সময় পূজা মণ্ডপে মাইক্রোফোন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক দাবি করেছেন যে নামাজের সময় মাইক্রোফোন চালু রাখলে মুসল্লিদের অসুবিধা হবে। স্থানীয় মসজিদ কমিটিও একটি চিঠি জারি করেছে যাতে বলা হয়েছে যে নামাজের সময় দুর্গাপূজা প্যান্ডেলের মাইক্রোফোন বন্ধ রাখতে হবে। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিবেচনা করুন যে বছরের প্রতিটি দিন নামাজ পড়া হয়, এবং নবরাত্রি একটি ধর্মীয় উৎসব যা মাত্র নয় দিন স্থায়ী হয়, তবুও তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম নেতা এখনও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ডিএনএ বিশ্লেষণ হল, পশ্চিমবঙ্গের প্রতীক দুর্গাপূজা নিষিদ্ধ করার এই প্রচেষ্টা কীভাবে করা হচ্ছে তা বিবেচনা করুন। একদিকে, নামাজের সময় পূজা প্যান্ডেলের মাইক্রোফোন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, অন্যদিকে, দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার পূজার মধ্যে ইসলামিক প্রতীক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাহলে, প্রশ্ন হল: এটি কি সনাতনীদের বিশ্বাসের উপর সাংস্কৃতিক আক্রমণ নয়? যাইহোক, আমরা আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে ২০১৭ সালের শুরুতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপূজার চেয়ে মহরমকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন দুর্গাপূজা বিসর্জন বন্ধ করে দেন কারণ ওই দিন মহরম পড়েছিল। কলকাতা হাইকোর্ট ব্যানার্জির সিদ্ধান্ত বাতিল করে বলে যে সরকার তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। তিন বছর আগে, ২০১৪ সালে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা মুর্শিদাবাদে দুর্গা মণ্ডপ নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় রাম নবমীর শোভাযাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে, তার মূল মুসলিম ভোট ব্যাংককে সন্তুষ্ট করার জন্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও যা পছন্দ করেন তা করেছেন। এতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু আহত হয়েছেন। কারণ স্পষ্ট: পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ১২১টি বিধানসভা আসন রয়েছে, যার মধ্যে ২০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম। ২০২১ সালে, তৃণমূল কংগ্রেস এই আসনগুলির ৭০ শতাংশ জিতেছিল। পশ্চিমবঙ্গের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন মুসলিম সরাসরি টিএমসিকে ভোট দেন।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,ভোট ব্যাংকের সমীকরণ এতটাই শক্তিশালী যে রফিকুর রহমানও প্রতীকীভাবে সনাতনীদের সাংস্কৃতিক বিশ্বাসকে আঘাত করার সাহস করছেন। মদন মিত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও একই কাজ করছেন। মুসলিম ভোট ব্যাংক বজায় রাখার জন্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়শই তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য কিছু করেন। তিনি কলকাতার দুর্গা প্যান্ডেলে একই কাজ করেছিলেন, যে কারণে বিজেপি বলছে যে সনাতন ধর্ম এবং সনাতন বিশ্বাসকে চূর্ণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ করতে চান। বন্ধুরা, পশ্চিমবঙ্গের পূজা মণ্ডপগুলি সরকারি তহবিল পায়। দুর্গা পূজার সময় যদি অন্য কোনও ধর্মের প্রচার বা প্রশংসা করা হয়, তবে তা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যদি ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল হিন্দু উৎসবের সময় প্রদর্শিত হয়, তাহলে দেশের সহনশীলতা একতরফা বোঝা হয়ে উঠবে বলে মনে করছে জি নিউজ ডিএনএ ।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের দ্বারা হিন্দু ধর্মের অবমাননার ঘটনা এই প্রথম নয় । এর আগে ২০১৫ সালে অভিনেত্রী ও বর্তমানে তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষের এক্স হ্যান্ডল (টুইটার) থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়৷ তাতে একটি শিবলিঙ্গে এক মহিলার কনডম পরানোর ছবি পোস্ট করেছিলেন । ওই নারী এডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’ হিসেবে পরিচিত। গ্রাফিকের ভিতরে লেখা ছিল, ‘বুলাদির শিবরাত্রি।’ সেই সময় সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে উঠেছিল । যদিও তখন তিনি তৃণমূলে ছিলেন না ।
প্রায় সমসাময়িক কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ দেবী কালী সম্পর্কে মহুয়া মৈত্রের বিতর্কিত ছবি পোস্ট ও মন্তব্যে তোলপাড় পড়ে যায় । ০৬ জুলাই, ২০২২ তারিখে মহুয়া মৈত্রের দেবী কালীকে নিয়ে করা বিতর্কিত মন্তব্যের একটি ছবির পোস্টার যেখানে দেবী কালীর মুখে সিগারেট রয়েছে এবং এক হাতে রয়েছে রামধনু পতাকা, সোশ্যাল মিডিয়াত তোলপাড় ফেলে । এই বিতর্কের মাঝেই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে মহুয়া বলেছিলেন,’আপনি যে ভাবে চান নিজের ভগবানকে দেখতে পারে। সিকিম ভূটানে পুজোর সময় তারা দেবতাদের সূরা পরিবেশন করে, বীরভূমের তারাপীঠে গেলে দেখা যাবে সেখানে তারা ধূমপান করেন। ওনারা এই ভাবেই দেবীকে কালীকে ডাকেন। আমার কাছে দেবী কালী মদ, মাংস খাওয়া এক দেবী’ । মহুয়ার এই মন্তব্যের পর বিরোধী শিবির থেকে অনেকেই এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন । বঙ্গের তৎকালীন বিজেপি সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদার, মহুয়া মৈত্রের গ্রেপ্তারের দাবি করেন। তিনি বলেছিলেন, তৃণমূল সরকারের উচিত এখনই মহুয়া মৈত্রকে দল থেকে বহিস্কার করা। যদিও তৃণমূল তাকে বহিষ্কারও করেনি এবং নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমাও চাননি মহুয়া । উপরন্তু চলতি দুর্গোৎসবের আবহে প্রকাশ্যে তুলসি মালাকে “কাঠের মালা” বলে মন্তব্য করে তিনি বৈষ্ণবদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেন বলে অভিযোগ ।।

