Subho Bijaya 2025: বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন আজ। গজে (হাতি) চড়ে যে দেবীর আগমন ঘটেছিল মর্ত্যে, আজ তিনি বিদায় নেবেন দোলায় (পালকিতে) চড়ে । আজ মা উমার বিদায়ে আপামর বাঙালি হিন্দুর হৃদয়ে বাজছে বিষাদের সুর । দেবীর শ্রীচরণে মাথা ঠেকিয়ে ভক্তরা বলছেন :
‘ওঁ দেবি ত্বং জগতাং মাতঃ স্বস্থানং গচ্ছ পূজিতে ।
সংবৎসর ব্যতিতে তু পুনরাগমনায় চঃ ।।”
অর্থাৎ, হে দেবী, জগজ্জননী, পূজিতা হয়ে তুমি নিজ স্থানে গমন কর এবং এক বছর পরে আবার তুমি অবশ্যই ফিরে এসো ।
বাঙালি হিন্দুদের কাছে শারদীয় দুর্গোৎসব নিছক একটা উৎসব নয়,বরঞ্চ আবেগের । আজ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর ২০২৫), দেবী মায়ের বিদায়ে আকাশের মুখও ভার । ঝড়ে পড়ছে বৃষ্টি । এযেন মায়ের বিদায়বেলায় বাঙালি হিন্দুদের চোখ থেকে ঝড়ে পড়া অশ্রুধারা । তবে দেবী উমা মায়ের এই বিদায়ের দিনে ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, পণ্ডিত-মূর্খ, উঁচু-নিচু বিচার না করেই সকলে একাত্মবোধে যেন আবদ্ধ গেছে । সকল ক্ষুদ্রতা ও পাশবিক বৃত্তির অবসান ঘটিয়ে আজ ধর্ম-বর্ণ- নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সহাবস্থানের ভাবনা জাগ্রত হয়ে মানবকল্যাণে সকলে ব্রতী। দুর্গাপূজার বিজয়ার তাৎপর্য এটাই। বিজয়ার শুভ এই দিনে দুঃখ নয়, বেদনা নয়, সকলে আনন্দে মুখরিত এবং সকলের মধ্যে প্রেমের বন্ধনে আকৃষ্ট। এই দিনে পাড়া-পড়শি সকলকে নিয়ে প্রেমালিঙ্গন একটি বিশেষ দিগ্দর্শন। ছোটরা পরিবারের বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে আশীর্বাদ নেবে । সম বয়সীরা কোলাকুলি করবে । বিবাহিতা মহিলারা মায়ের বিদায় বেলায় দেবীমূর্তির সামনে সিঁদূর খেলায় মেতে উঠবেন । তারপর ঢাকের তালে বিদায় জানানো হবে মা’কে ।
দেবী দুর্গতিনাশিনী বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে দুর্গা। পরম পূজনীয় তিনি। তিনিই আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা ও সিংহবাহনা। মানবের কল্যাণে এবং অশুভর ওপর শুভর বিজয়কে তিনি নিশ্চিত করেন। অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছিল অন্যায় ও অশুভ শক্তির পরাজয়, ন্যায় ও শুভশক্তির জয়। তিনি মানুষকে মহৎ হতে প্রাণিত করেন। মানুষের মনের দৈন্য ও কলুষ দূর করেন। তাই শুভ ও অশুভর মধ্যকার দ্বন্দ্বে শুভশক্তির বিজয়ের তাৎপর্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সর্বজনীন।
সারা বছর ভালো থাকতে এই শুভ দিনটিতে তাই সকলকে কিছু সঙ্কল্প করতে হবে । এই বিষয়গুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন তাতে আপনার মঙ্গল হবে :
★ রাগ এবং কঠোর শব্দ এড়িয়ে চলুন। এই দিনে রাগ এবং কঠোর ভাষা নেতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে।
★ মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ও কারোর সঙ্গে প্রতারণা করার সুপ্ত বাসনা ত্যাগ করুন । দুর্গোৎসব হল সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উৎসব। তাই বিজয়ার দিন মায়ের বিদায় বেলায় মিথ্যা বলা বা প্রতারণা আপনার জীবনে সমস্যা এবং অবিশ্বাস আনতে পারে।
★ পরনিন্দা বা পরচর্চা এড়িয়ে চলুন । অন্যের নিন্দা করা বা কাউকে অপমান করা অশুভ বলে বিবেচিত হয়। বিজয়া দশমীর দিন সকলকে সম্মান করুন।
★গাছ, গাছপালা এবং প্রকৃতির অকারণ ক্ষতি করবেন না । এই উৎসব প্রকৃতি এবং জীবনের মধ্যে ভারসাম্যের প্রতীক। এই দিনে গাছ কাটা বা দূষণ ছড়ানো অশুভ। বরঞ্চ বিজয়া দশমীর দিন গাছ লাগান৷
★ অলসতা ত্যাগ করে নবউদ্যমে কাজ শুরু করুন । যেকোনো কাজে দীর্ঘসূত্রিতা আপনার জীবনে সমস্যা ডেকে আনবে । বিজয়া দশমীর দিন হল নতুন সংকল্প নেওয়ার দিন।
বিজয়াদশমী মুহুর্ত (অপরাহ্ন পূজার সময়): দুপুর ১:১৩ থেকে ৩:৩০ পর্যন্ত । শমী পূজা, অপরাজিতা পূজা এবং সীমা অবলঙ্ঘন আদর্শভাবে অপরাহ্ণ সময়কালে করা হয়, কারণ এই দিনটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।।