প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ সেপ্টেম্বর : রাজনৈতিক হিংসায় বিজেপি নেতার মায়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে রবিবার ফেরার তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালালো সিবিআই দল।সিবিআইয়ের এই অতি সক্রিয়তায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের নবগ্রামে । সিবিআইয়ের এই অতি সক্রিয়তা জামালপুরের শাসক দলের নেতা কর্মীদের দুশ্চিন্তাও যথেষ্টই বাড়িয়ে দিয়েছে । যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছেন সিবিআই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তদন্ত করেছে ।
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরের দিন রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত হয় জামালপুরের নবগ্রাম ।ওই দিন নিহত হন নবগ্রামের বিজেপি শক্তি প্রমুখ আশিস ক্ষেত্রপালের মা কাকলি ক্ষেত্রপাল (৪৭)। ওই রাজনৈতিক হিংসায় দুই তৃণমূল কর্মী শাজাহান শা ওরফে শাজু (৩০) এবং বিভাষ বাগ ওরফে বিনোদ (২৭) নিহত হন । নিহতদের মধ্যে কাকলি ও বিভাসের বাড়ি নবগ্রামে ।অপর নিহত শাজু শেখের বাড়ি জামালপুর থানার ভেড়িলি গ্রামে। রাজনৈতিক হিংসার এই ঘটনায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পরদিন বর্ধমান আদালতে পেশ করে । ধৃতদের মধ্যে ১০ জন ছিল বিজেপি সমর্থক । একজন ছিল তৃণমূল কর্মী । মা কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃত্যুর ঘটনা বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানায় ছেলে আশিস ক্ষেত্রপাল । পরবর্তীতে সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই।
জামালপুরের নবগ্রামে রাজৈতিক হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য গত ২৯ আগষ্ট সিবিআই দল প্রথম পা রাখে নবগ্রামে । তার পর থেকে এক প্রকার নবগ্রামের মাটি কামড়ে পড়ে আছে সিবিআই দল। এখনও পর্যন্ত পাঁচ দিন সিবিআই দল নবগ্রামে তদন্তে গিয়েছে । নিহত কাকলি ক্ষেত্রপালের পরিবার সদ্যসদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি এলাকার মানুষজনের সঙ্গেও কথা বলেন সিবিআই আধিকারিকরা ।
এলাকার ভিডিওগ্রাফিও করেন । ১ সেপ্টেম্বর
ফরেন্সিক টিম নিয়ে সিবিআই আধিকারিকরা
নবগ্রামে পৌছান ।তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে মাটি ও অন্যান নমুনা সংগ্রহ করেন ।এদিন বেশ কিছু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সিবিআইয়ের তিনটি দল বেলায় নবগ্রামে পৌছায় । তারা নবগ্রামের ঘোষ পাড়া ও ওড়িষ্যা পাড়ার ফেরার তৃণমূল কর্মী সোমনাথ শিল ,অমরেশ বাগ, সাগর রায়, কুমারেশ ঘোষ ,সমীর ঘোষ,সমর ধাড়া ও সমীর বাগের
বাড়িতে পৌছে গিয়ে তল্লাশী চালান ।পরে জামালপুর থানাতে গিয়েও সিবিআই আধিকারিকরা রাজনৈতিক হিংসার ঘটনার মামলার নথিপত্র খতিয়ে দেখতে যান বলে জানা গিয়েছে । সিবিআইয়ের এই সক্রিয়তা নিয়ে জামালপুর থানার পুলিশ কর্তারা অবশ্য কোন মন্তব্য করতে চান নি ।
নিহত কাকলি ক্ষেত্রপালের ছেলে আশিস ক্ষেত্রপাল ঘটনার দিনের পর থেকে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন ।এদিন আশিষ ক্ষেত্রপাল কে ফোন করা হলে তিনি বলেন , “ভোটের ফল প্রকাশের পরদিন পরিকল্পনা মাফিক তৃণমূলের লোকজন তাঁদের বাড়ি আক্রমণ করে ।সেই সশস্ত্র আক্রমণে তাঁর মা কাকলি ক্ষেত্রপাল মারা যান । মারাত্মক জখম হয়ে
তাঁর বাবা অনীল ক্ষেত্রপাল চলার শক্তি হারিয়েছেন । আশিস অভিযোগে বলেন , হামলা আক্রমনের বিষয়ে তাঁর পরিবার যে অভিযোগ থানায় জমা দিতে দিয়েছিল তা পুলিশ গ্রহন করেনি । অভিযুক্ত অনেকে এখনও এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । এই
অবস্থায় পুলিশি তদন্তে সুবিচার মিলবে না বুঝে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন । একই সঙ্গে আশিস এদিন দাবি করেন,“সিবিআই যে ভাবে তদন্ত করছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা সুবিচার পাবেন বলে আশা করছেন“ ।একই দাবি করেছেন ,নিহত কাকলি ক্ষেত্রপালের স্বামী অনিল ক্ষেত্রপাল ।
সিবিআইয়ের এই তদন্তকে যদিও পক্ষপাত দুষ্ট বলে দাবি করেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ।তিনি বলেন,“একই দিনে নবগ্রামে দুই তৃণমূল কর্মীও খুন হন। অথচ সিবিআই আধিকারিকরা নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু নিয়ে কোন তদন্তই করছে না । শুধুমাত্র বিজেপি কর্মী পরিবারের মহিলার মৃত্যু নিয়েই তদন্ত করে যাচ্ছে । এর থেকেই পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই হচ্ছে সিবিআই তদন্ত ।’।