দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ দিন মহাষ্টমী (Durga Puja 2025 Maha Ashtami) । মহাষ্টমী তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এই দিনে দেবী দুর্গার কুমারী রূপের পূজা করা হয়। এই আচার, যাকে সাধারণত কুমারী পূজা বলা হয়, এতে ছোট মেয়েদের পূজা করা হয় যাদেরকে দেবীর মূর্ত প্রতীক বলে বিশ্বাস করা হয়। কুমারী পূজা শেষ হয়ে গেলে, দেবী কন্যার মধ্যে এসে বাস করেন বলে কথিত আছে।
মহা অষ্টমীর সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী ধুনুচি নাচ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেখানে ভক্তরা কর্পূর এবং নারকেলের খোসা দিয়ে ভরা মাটির পাত্র (ধুনুচি) নিয়ে নৃত্য করে। ঢাকের ছন্দময় সুরের সাথে ধুনুচি নৃত্য ঐতিহ্যটি সম্পূর্ণরূপে একটি মনোমুগ্ধকর ঘটনা। তাছাড়া, আজকের সন্ধ্যাটি সন্ধি পূজার জন্যও উৎসর্গীকৃত, যেখানে দেবীকে একশো আটটি পদ্ম উৎসর্গ করা হয় এবং একশো আটটি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
এই দিনটি নিয়ে সকলেরই বাড়তি ভাবনা থাকে। অঞ্জলির প্রস্তুতি, শাড়ি, সন্ধিপুজোর আয়োজন সব মিলিয়ে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক এবছর অঞ্জলির শুভ সময় কখন। ২০২৫ সালের শারদীয়া দুর্গোৎসবের পঞ্জিকানুযায়ী এবার মহাপুজোর দিনক্ষণ নিয়ে দুই পঞ্জিকার মধ্যে খানিক পার্থক্য থাকলেও মূল আচার-অনুষ্ঠানের রূপরেখা একেবারেই স্পষ্ট। দেখে নিন কোন দিনে কোন তিথি ও বিশেষ পূজার সঠিক সময়—
বিভিন্ন পঞ্জিকা অনুসারে মহাষ্টমী তিথির আচার অনুষ্ঠান
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা : ১৩ আশ্বিন, মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত অষ্টমী তিথি। মহাষ্টমীর বিহিত পুজো সকাল ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে এবং ৮টা ২৯ থেকে ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময়।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা : ১৩ আশ্বিন (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত অষ্টমী তিথি। দুপুর ১টা ২১ মিনিটে মহাষ্টমী শুরু হবে। দুপুর ২টা ৯ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপুজো সমাপ্ত করতে হবে এবং ১টা ৪৫ মিনিটে বলিদান সম্পন্ন হবে। অঞ্জলি দিতে হবে এই সময়ের মধ্যেই।
সন্ধিপুজো
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে ৩০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৫টা ৪৩ মিনিট থেকে ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত সন্ধিপুজো চলবে। ৬টা ৩১ মিনিটে বলিদান ও সন্ধিপুজোর সমাপন হবে।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৩ আশ্বিন (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৪৪ মিনিটে বলিদান এবং দুপুর ২টা ৮ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপুজো সমাপন।
অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির নির্দিষ্ট সময়
পঞ্জিকা অনুসারে, সকাল ৮টা ২৯ মিনিট থেকে ৯টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার শুভ সময় নির্ধারিত হয়েছে । এর মানে ভক্তরা পাবেন মাত্র ৫৯ মিনিট সময় অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। এই সীমিত সময়ের কারণে ভক্তদের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে ।
সন্ধিপুজোর বিশেষ সময়
মহাষ্টমীর দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হলো সন্ধিপুজো । এই বছর দুপুর ১টা ২১ মিনিট থেকে ২টো ৯ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপুজো সম্পন্ন করতে হবে । অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগস্থলে এই পুজো করা হয়, যা অত্যন্ত পবিত্র মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত ।
সন্ধিপুজো এই হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ কারন এই সময় দেবী দুর্গা চামুণ্ডা রূপ ধারণ করে চণ্ড ও মুণ্ড দানবদ্বয়কে বধ করেছিলেন । এই সময়ে ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর আরাধনা করা হয় । পুরোহিতরা বিশেষ মন্ত্র উচ্চারণ করে দেবীর স্তুতি করেন।
কি খাবার খাবেন আজ
আজকের এই বিশেষ দিনে বাঙালি পরিবারে মহাষ্টমীর দিন শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে । এই দিন চালের তৈরি কোনো খাবার এড়িয়ে চলার ঐতিহ্যও আছে অনেক জায়গায় । লুচি,শব্জি ও মিষ্ঠান্ন বা ফলমূল সহযোগে অধিকাংশ পরিবার আজ মধ্যাহ্নভোজন করেন ।
নবরাত্রির অষ্টম দিন – দেবী মহাগৌরীর পূজা
নবরাত্রির অষ্টম দিনে মা মহাগৌরীর পূজা করা হয় । বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্তরা যদি শুদ্ধ হৃদয়ে প্রার্থনা করেন, তাহলে দেবী সর্বদা তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করেন। মহাগৌরী নামটি দুটি শব্দ থেকে উদ্ভূত: “মহা” অর্থ মহান এবং “গৌরী” অর্থ ফর্সা বা শ্বেতাঙ্গ। তাঁর ফর্সা বর্ণের কারণে তাঁকে মহাগৌরী বলা হয়।
মা মহাগৌরী চতুর্ভুজা এবং তিনি একটি ষাঁড়ের উপর চড়ে আছেন। তার ডান হাতে তিনি অভয় মুদ্রা এবং অন্য হাতে তিনি ত্রিশূল ধারণ করেন। তার বাম হাতে তিনি ডমরু) ধারণ করেন এবং বরদ মুদ্রা (আশীর্বাদের অঙ্গভঙ্গি) প্রদর্শন করেন।
পৌরাণিক পটভূমি
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবী পার্বতী তীব্র তপস্যা করে ভগবান শিবকে স্বামী হিসেবে লাভ করেছিলেন, তীব্র তাপ, ঠান্ডা এবং বৃষ্টির মতো পরিস্থিতি সহ্য করেছিলেন। এর ফলে তাঁর ত্বক কালো হয়ে গিয়েছিল। ভগবান শিব তাঁর ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে গঙ্গার পবিত্র জলে স্নান করান, যার ফলে তাঁর বর্ণ আবার ফর্সা হয়ে ওঠে। সেই থেকে তিনি পবিত্রতা এবং প্রশান্তির প্রতীক মহাগৌরী নামে পরিচিত।
জ্যোতিষশাস্ত্রীয় তাৎপর্য
জ্যোতিষশাস্ত্রে, দেবী মহাগৌরী রাহু গ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর উপাসনা করলে জীবনে রাহুর অশুভ প্রভাব কমতে পারে।
মন্ত্র : “ওম দেবী মহাগৌরায় নমঃ”
প্রার্থনা মন্ত্র “শ্বেতে বৃষেশমরুধা শ্বেতাম্বরধারা শুচিহ, মহাগৌরী শুভম দাদ্যানমহাদেব প্রমোদাদা” ।
স্তূতি (প্রশংসা) : “ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মা মহাগৌরী রূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ” ।।