এইদিন ওয়েবডেস্ক,কুষ্টিয়া,২৯ সেপ্টেম্বর : মহাসপ্তমীর দিনেই বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা থেকে একটা অদ্ভুত খবর সামনে এসেছে । গোঁফ-দাড়ি থাকা মহিষাসুরের মূর্তি নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন৷ তাদের অভিযোগ যে মহিষাসুরের মূর্তিতে গোঁফ-দাড়ি লাগানোয় ইসলামের অবমাননা হচ্ছে । আর তাদের আপত্তিতে কুষ্টিয়ার অন্তত ৩৮ টি পূজামণ্ডপের অসুরের মূর্তির মুখে গামছা বেঁধে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন । যা ঘিরে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে ।
জানা গেছে,শুরুটা হয়েছে কুষ্টিয়া জেলার গোপালগঞ্জের নম্বর ওয়ার্ডের চেচানিয়া এলাকা থেকে । চেচানিয়া কান্দি শিতলা মন্দিরের মহিষাসুরের প্রতিমায় গোঁফ দাড়ি দেখে বেজায় চটে যায় স্থানীয় মৌলবীরা । তাদের কথায়, মুসলিমরা ধর্মীয় রীতি মেনে গোঁফ দাড়ি রাখে ৷ ফলে মহিষাসুরের প্রতিমায় গোঁফ দাড়ি করায় তাদের ধর্মের অবমাননা হচ্ছে । তারা মহিষাসুরের প্রতিমার গোঁফ দাড়ি অবিলম্বে সরানোর দাবি জানায় । অন্যথায় হামলার হুমকি দেখায় তারা । এদিকে কুষ্টিয়ার অন্তত ৩৮ টি পূজামণ্ডপের অসুরের মূর্তির মুখে কালো রঙ করে গোঁফ দাড়ি আঁকা হয়েছিল। ফলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে গোঁফ দাড়ি সরানো সম্ভব হয়নি৷ সেই কারনে তারা একটা করে নতুন গামছা মণ্ডপের মহিষাসুরের মুখে বেঁধে দিয়ে আসে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পুজামণ্ডপের প্রতিমার অসুরের মুখে গোঁফ-দাড়ি সংক্রান্ত ছবি ও অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে কট্টরপন্থী মুসলিমরা আপত্তি করে । এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্গা প্রতিমার অসুরের মুখে গোঁফ-দাড়ি অবিলম্বে খুলে ফেলার বা ঢেকে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয় । যার ভিত্তিতে পুলিশ গিয়ে ওই ৩৮ টি মণ্ডপের মহিষাসুরের প্রতিমার মুখে গামছা বেঁধে দিয়ে আসে ।
যদিও কুষ্টিয়া জেলা দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ এনিয়ে প্রতিবাদ জানানোর সাহস করেননি । তারা এই অন্যায় মেনে নিয়ে জানান, ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিমার নকশা শিল্পীদের সৃজনশীলতার ওপর নির্ভর করে হয়। তবুও কোনো বিভ্রান্তি বা উত্তেজনা সৃষ্টি হলে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করেই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন,’কেউ যেন উস্কানি বা বিতর্ক সৃষ্টি করতে না পারে—সে কারণে আমরা আপাতত মণ্ডপগুলোর অসুরের মুখ ঢেকে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পূজার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ অন্যদিকে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে বিষয়টিকে ‘অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, শিল্পীদের নকশা বা রূপসজ্জায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। তবে তারা শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপনের স্বার্থে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন।
বর্তমানে জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। পুজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে কাজ করছেন।।