এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ সেপ্টেম্বর : সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিপাতের কারনে শহর কলকাতায় বানভাসি ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে গঙ্গায় “জল ঠেলে দেওয়ার” অভিযোগ তুলেছিলেন । এমনকি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় ফিরে এলে তাঁদের সরকারও ওই দুই রাজ্যের দিকে জল ঠেলে দেবে । মমতার এই বক্তব্যের উপর একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ছবি এক্স-এ পোস্ট করেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। তিনি মমতার এই বিবৃতিকে ‘ঐতিহাসিক উক্তি’ বলে অবিহিত করে তাকে তুলোধুনো করেছেন । তথাগত লিখেছেন,’মমতার এই ঐতিহাসিক উক্তিটি আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। পিসি বিহার- ঝাড়খন্ডকে ভয় দেখাচ্ছেন, উনি মাধ্যকর্ষণকে কাঁচকলা দেখিয়ে ভাটি (downstream) থেকে উজানে (upstream) জল ঠেলে দেবেন! এদিকে নিউটন সাহেব যে কবরে শুয়ে খাবি খাচ্ছেন! হে বঙ্গ ! ভাণ্ডারে তবে বিবিধ রতন!’
তিনি আরও লিখেছেন,’পিসি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের গর্দভ মনে করে। ওঁর হিসেবে, রাজ্যের ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ শতাংশ মুসলিম ভোট তো কোঁচড়ে আছেই! তার উপরে উল্টোপাল্টা বকে যদি আর দশ-পনের শতাংশকে বোকা বানিয়ে তাদের ভোটটা আনতে পারি তাহলে আবার পাঁচ বছর পশ্চিমবঙ্গকে চুষে ছিবড়ে করে দেওয়া যাবে।’
তথাগত রায়ের শেয়ার করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতায় বানভাসির জন্য কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যকে নিশানা করে বলেছেন,’এত বৃষ্টি জীবনে হয়নি। ফরাক্কা, বিহারের সব জল গঙ্গায় এসে ঢুকেছে। ফরাক্কায় ড্রেজিং হয় না। কলকাতা বন্দর, ডিভিসি, মাইথন ড্রেজিং করে না । ওদের ছাড়া জলে আমরা ডুবি।’ তিনি আরও বলেছিলেন,’এর পরেও ড্রেজিং না-করলে, আর যদি আপনাদের আশীর্বাদে ফিরে আসতে পারি, তা হলে আমি জানি কী করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা করব। আমার দিকে জল ঠেললে আমিও তোমাদের দিকে জল ঠেলে দেব! আমাদেরও তো বাঁচতে হবে!’
উল্লেখ্য,গঙ্গার গতিপথ মূলত উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পশ্চিম হিমালয় থেকে শুরু হয়ে উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়, তারপর বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং অবশেষে বঙ্গোপসাগরে মেশে। নদীটির প্রধান দুটি ধারা হলো বাংলাদেশে প্রবেশ করা পদ্মা (গঙ্গার প্রধান শাখা) এবং ভারতে ভাগীরথী-হুগলী নদী । উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গঙ্গোত্রী হিমবাহের কাছে গোমুখ থেকে উৎপন্ন হয়েছে, যা ভাগীরথী নামে পরিচিত। ফারাক্কা বাঁধের কাছে গঙ্গার দুটি প্রধান ধারা দেখা যায়। তার মধ্যে একটি ধারা ভাগীরথী ও হুগলি নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। উত্তর প্রদেশ থেকে বিহার ও ঝাড়খণ্ড হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে ভাগিরথী নদী । কিন্তু নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের বিপরীতে প্রবাহকে কিভাবে মমতা ব্যানার্জি বিহার, ঝাড়খণ্ডের ঠেলে দিতে সক্ষম হবেন সেটাই এখন রহস্য । যা বৈজ্ঞানের দিক থেকেও অসম্ভব ৷।