এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাকদ্বীপ,২৬ সেপ্টেম্বর : সন্ত্রাস কবলিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকের একটা কোম্পানিতে কাজে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এরাজ্যের অন্তত ১৫ জন শ্রমিক । ফেসবুকে একটা ভিডিও পোস্ট করে দেশে ফেরানোর জন্য কাতর আবেদন জানিয়েছেন তারা । শ্রমিকদের অভিযোগ যে তাদের চিকিৎসা পরিষেবা বা খাবার জুটছে না । পাসপোর্ট ও ভিসা ওই কোম্পানি নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছে । মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও রিনিউ করাচ্ছে না৷ দেশে ফেরারোর কথা বললেই মারধর ও বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে ।
ভিডিওতে বেশ কিছু শ্রমিককে এক জায়গায় জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে দেখা গেছে । তাদের মধ্যে একজন শ্রমিক হাত জোড় করে বসে ক্যামেরার সামনে বলেন,’আমি এখন ইরাকে আছি। এখানে ইউপি, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মাদ্রাজি মিলে আমরা এখানে ৪-৫ টি রাজ্যের লোক ফেঁসে আছি । কাকদ্বীপ থানার নামখানার আমরা ১৫ জনের মত বাঙালি আছি । তিন বছর আমরা এখানে আছি। আমাদের পাসপোর্ট দেয়নি । রিনিউ করায়নি। ভিসা শেষ হয়ে গেছে, ভিসা লাগায়নি । চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই । খাওয়া-দাওয়া ঠিক নেই । ৭-৮ মাসের বেতন বকেয়া আছে । ঘরে ফেরার কথা বললে এখানে মারধর করছে এবং বিভিন্ন রকমভাবে চাপ সৃষ্টি করছে । মমতা ব্যানার্জির কাছে অনুরোধ করব যেকোনো ভাবে যে কোন উপায়ে আমাদের জান বাঁচিয়ে এখান থেকে নিয়ে যাক ।’
এরপর ওই শ্রমিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’আমাদের মরা বাঁচা সব সমান হয়ে গেছে । আমাদের সামনে কোন পথ নাই । আমরা এই ভাবেই পড়ে আছি । মা মরুক,বাপ মরুক, ছেলে মরুক কোন কথাই শুনছে না এখানে । তোমার কাছে ভাই হাজার হাজার রিকোয়েস্ট, কত লোক আছে এখানে দেখো, কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না । আমাদের এমন জায়গায় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে তিন বছর ধরে আমাদের এখান থেকে বের পর্যন্ত করেনি । আমাদের যেকোনো ভাবে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাও,ভাই৷’
জানা গেছে, ইরাকে আটকে থাকা বাঙালি শ্রমিকদের বাড়ি নামখানা, কাকদ্বীপ এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় । ২০২৩ সালে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে নামখানার আটজন এবং কাকদ্বীপের একজন শ্রমিক ইরাকে একটা কোম্পানিতে কাজ করতে যায় । কোম্পানির সঙ্গে দু বছরের চুক্তি হয়েছিল । সেই কারণে তাদের ভিসার মেয়াদ দু বছরের ছিল । কিন্তু দু বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও তাদের কাজ করানো হচ্ছে । পাসপোর্ট ভিসা কেড়ে নেওয়া হয়েছে ।
ভিডিওটি প্রকাশ আসার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । ভিডিওটি সুন্দরবন পুলিশেরও নজরে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলি । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই বিষয়ে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রককে অবহিত করা হবে । সেই সাথে শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং তাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি । এদিকে পরিবারে আশঙ্কা যে শ্রমিকদের যদি অবিলম্বে ফেরানোর ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে তাদের সঙ্গে বিপদজনক কিছু ঘটে যেতে পারে । এনিয়ে তারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।।