এইদিন ওয়েবডেস্ক,দুর্গাপুর(পশ্চিম বর্ধমান),২৫ সেপ্টেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার জনবিন্যাস পরিবর্তন হাতের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকার । তাঁর কথায়,পূর্বস্থলীতে হিন্দু সমাজের লোকেরা কিছু টিকে থাকলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হয়ে গেছে জেলার জামালপুর, রায়না, মন্তেশ্বর, মেমারি, মঙ্গলকোট কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম ও বর্ধমান শহর । শুধু তাইই নয়,শুভেন্দু অধিকারী ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে ২০২৬ সালে এরাজ্যে যদি ফের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার আসে তাহলে মমতা ব্যানার্জীর হিন্দু ভোটের আর দরকার হবে না ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের ক্ষুদিরাম মাঠে ৫৪ ফুট দুর্গাপ্রতিমার পূজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে এই দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা । তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দুই বর্ধমানের জনবিন্যাসের পরিবর্তন নিয়ে বলেছেন,’পূর্ব বর্ধমান তো হাতের বাইরে চলে গেছে । জামালপুর, রায়না, মন্তেশ্বর, মেমারি, মঙ্গলকোট কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম, বর্ধমান শহরে যেতে পারে, সব হাতের বাইরে । পূর্বস্থলীতে হিন্দু সমাজের লোকেরা কিছু টিকে আছে ।’ পশ্চিম বর্ধমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসানসোলের অধিকাংশ মূল্যবান জমি মুসলিমরা ক্রয় করে নিয়েছে । গরিব হিন্দুরা সে বাংলাভাষী হোক বা হিন্দীভাষী হোক অভাবের টানে জমিগুলো বিক্রি করে দিয়েছে । পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল থেকে শুরু হয়েছে । আগামী দিনের দুর্গাপুরেও অবস্থা একই হবে। যদি আপনারা লাল বাবুদের(সিপিএম) কাছ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারেন, সেকুলারিজম থেকে । তা না হলে সবাই বিপন্ন হবেন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’নন্দীগ্রামে আমি হিন্দু জাগরণ করেছি । ২০২১ সালে আমি ১৯৫৬ ভোটে জিতেছি । ২০২৩ সালে ১৭ টার মধ্যে ১৩টা পঞ্চায়েত জিতেছে বিজেপি । ২০২৪ সালে অভিজিৎ গাঙ্গুলীকে ৮ হাজার বেশি ভোটে লিড দিয়েছি । ২০২৬ সালে নরেন্দ্র মোদিজি যাকে পদ্মফুলে দিয়ে পাঠাবেন তাকে আমি কুড়ি হাজার ভোটে জেতাবো । ওখানে হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে । গোটা রাজ্যে যেখানে ৫৪ শতাংশ হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সেখানে আমি নন্দীগ্রামে ৭০ শতাংশ হিন্দুকে ঐক্যবদ্ধ করেছি । গোটা রাজ্যের মধ্যে কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে হিন্দুরা ৭৩ শতাংশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে । রাজ্যের যদি ৭৫ শতাংশ হিন্দু ঐক্যবদ্ধ হয়, আর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছুটি না কাটিয়ে ভোটটা দিতে যান সকাল সকাল তাহলে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু এবং হিন্দু ধর্ম রক্ষা হবে । তা না হলে ২০২৬ সালের পরে মমতা ব্যানার্জির আর হিন্দু ভোট লাগবে না । উনি যে ভোট নিয়ে জেতেন সেই ভোটেই আগামী দিনের রাজত্ব করবেন ।’
রাজ্যে কর্মসংস্থানের বেহাল অবস্থা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’চাকরি দেবে কেন মমতা ব্যানার্জি ? একদম পাক্কা ৩৫ শতাংশ মুসলমান ভোট আছে ১০০ তে একশ শতাংশ ওকে দেয় । ওরা ধর্মের ভিত্তিতে ভোট করে । হিন্দুরা ধর্মের ভিত্তিতে ভোট করে না । আর দরকার দশ শতাংশ । ৪৫ শতাংশ হলেই সরকার । এবারে হাইস্কুলে একটা শিক্ষককে চাকরি দিতে গেলে তার স্টার্টিং বেতন চল্লিশ হাজার টাকা । প্রাইমারিতে চাকরি দিতে গেলে স্টার্টিং বেতন ৩০ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকার চাকরি একজনকে দিলে তার বাড়ির পাঁচটা সদস্য এবং তিনজন ভোটার । আর সেই ৪০ হাজার টাকা যদি ৪০টা বাড়িতে বিতরণ করে তাহলে ১২০টা ভোটার । মমতা ব্যানার্জির একশো কুড়িটা ভোট দরকার । তিনটে ভোট দরকার নেই । তার ক্যালকুলেশন হলো শুধু তোষণ করো ।’
মঙ্গলবার কলকাতায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধনের সময় বৃষ্টি পড়লে মুখ্যমন্ত্রী তার শাড়ির আঁচল মাথায় হিজাবের মত পরেছিলেন৷ ফের সেই বিষয়টি তুল্র মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘আরে, বৃষ্টি পড়লে তো ছাতা মাথায় নেওয়া যেত । উনি হিজাবের মত শাড়ি মাথায় নিতে গেলেন কেন ? আসলে এটা হল একটা ক্লিয়ার মেসেজ৷ উনি একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে এই বার্তা দিয়েছেন যে আমি বাধ্য হয়ে পুজোয় যাচ্ছি বটে কিন্তু আমি তোমাদেরই লোক । আমাকে ভুল বুঝবেন না ।’
তিনি বলেন,’পিতৃপক্ষকে কেউ পুজোর উদ্বোধন করতে যায় ? যাদের পিতামাতা গত হয়েছেন তারা এই রাস্তা দিয়ে গয়ায় যায়,পিন্ড দান করেন তারা । ওনারা কালাশৌচ থেকে মুক্তি পান । পিতৃপক্ষে কখনো ভালো কাজ শুভ কাজ হয় ? মা দুর্গার শক্তি দেখুন, যেদিন করেছে সেদিন কোথাও বৃষ্টি নাই কিন্তু কলকাতায় বাঁধ ভাঙ্গা বৃষ্টি । বিশেষ করে যে তিনটি পিতৃপক্ষে উদ্বোধন করেছিল সেই তিনটি পুজোকে মা দুর্গা ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেছেন। এটাই তো সনাতনের শক্তি ।’
মাদ্রাসার শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মাদ্রাসার শিক্ষকরা পথে নামছেন বটে কিন্তু তারা ভোটটা তৃণমূলকেই দেবেন। এটা বহুবার প্রমাণিত হয়ে গেছে। ওরা ক্যালকুলেটিভ ওয়েতে ভোট করে । ভোটের আগে ওদের যে প্রার্থনা হয় সেখানে ইমাম সাহেবরা, যারা আড়াই হাজার টাকা করে পান, তারা বলে দেন কেন মমতা ব্যানার্জিকে এখানে রাখতে হবে । এই কারণে রাখতে হবে যাতে জামাত, হেফাজত, এবং রোহিঙ্গা বাংলাদেশিরা এখানে এসে ডেমোগ্রাফি বদল করে ।’।