কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে । যার ফলে চারজন নিহত হয়। ২২ জন পুলিশ কর্মী সহ কমপক্ষে ৪৫ জন আহত হয় । এই ঘটনার পর লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য ঘোষণা সংবিধানের অধীনে ষষ্ঠ তফসিল সম্প্রসারণের দাবিতে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন চালিয়ে আসা সোনম ওয়াংচুক তাঁর অনশন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এদিকে সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে কংগ্রেসের “যুবরাজ” রাহুল গান্ধী এবং মার্কিন ডিপস্টেটের অন্যতম হাতিয়ার বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ ছবি প্রকাশ্যে আসার পর লাদাখ হিংসার ঘটনায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে ।
এদিকে লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার জন্য সরাসরি সোনম ওয়াংচুককে দায়ি করল কেন্দ্র । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘এই পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয়েছে। লাদাখের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কিছু ব্যক্তির সংকীর্ণ রাজনীতি এবং সোনম ওয়াংচুকের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বিশাল মূল্য দিতে হচ্ছে। সরকারি সূত্রের দাবি, যা ঘটেছে তার জন্য লাদাখের তরুণদের দোষ দেওয়া যায় না, কারণ তাদেরকে বিপথগামী করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য তাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে একটি অশুভ চক্রান্তে আটকা পড়েছে। পাশাপাশি লাদাখের জনগণের কল্যাণ ও ক্ষমতায়নের জন্য কেন্দ্র যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেকথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। যদিও কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ৬ অক্টোবর অ্যাপেক্স বডি অফ লেহ (এবিএল) এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ) কর্তৃক প্রস্তাবিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির বৈঠকের দিন নির্ধারণ করেছে। উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির জন্য নতুন সদস্যদের অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে অ্যাপেক্স বডি অফ লেহ-র দাবির বিষয়েও একমত হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, যখন আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, তখন আন্দোলন উসকে দেওয়া হল।
সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে রাহুল গান্ধী ও মহম্মদ ইউনূসের ছবি আরএসএসের মুখপত্র পাঞ্চজন্য-এ পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “ছবিগুলো অনেক কিছু বলে! লাদাখে যা ঘটেছে তা কোনও স্বাভাবিক ঘটনা নয়। লাদাখ ভারতের এমন একটি অংশ যেখানে সবসময় শান্তি রয়েছে এবং কখনও কোনও সহিংসতা দেখা যায়নি। কিন্তু কিছুদিন ধরে লাদাখের নিরীহ মানুষকে বিভ্রান্ত ও উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তার বক্তৃতায়, উস্কানিদাতা, সোনম ওয়াংচুক, নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মতো অভ্যুত্থানের কৌশল গ্রহণের কথাও বলেছেন। সোনম প্রায়শই পাকিস্তান সহ অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করছেন। চীন সংলগ্ন লাদাখের মতো একটি শান্তিপূর্ণ, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে কার্যকলাপ চলছে, তা বার্তার আওতায় আসে।দাঙ্গায় যে কংগ্রেস কাউন্সিলরের নাম উঠে এসেছে তাকে রাহুল গান্ধীর সাথে ছবিতে দেখা যাচ্ছে। সোনমকে মোহাম্মদ ইউসুফকে জড়িয়ে ধরতেও দেখা যাচ্ছে।”
এদিকে লাদাখে ব্যাপক জনবিন্যাস পরিবর্তনে কংগ্রেসের বিতর্কিত নেতা সোনম ওয়াংচুকের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সূর্য মিশ্র নামে একজন এক্স ব্যবহারকারী । তার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে লাদাখে ইসলাম ৪৬.৪%,বৌদ্ধধর্ম (৩৯.৬%,হিন্দুধর্ম ১২.১%, শিখধর্ম (০.৮৩%,খ্রিস্টধর্ম ০.৪৬%,জৈনধর্ম (০.০৫%, অন্যান্য ০.০২% এবং ধর্ম উল্লেখ করা হয়নি এমন ০.৪৭% মানুষ রয়েছে ।
তিনি #লাদাখের জনবিন্যাস সম্পর্কীয় ওই পোস্টে লিখেছেন,লাদাখের আসল সমস্যা হল ৪৬% মুসলিম জনসংখ্যা, যা সরকার ষষ্ঠ তফসিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও এড়িয়ে যাচ্ছে। এই পরিসংখ্যানগুলি ২০১১ সালের, যেখানে আজ বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের প্রকৃত শতাংশ আরও কমে গেছে, কারণ ‘লাভ জিহাদের’ কারণে বৌদ্ধরা লাদাখে তীব্র সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। তার অভিযোগ,সোনম ওয়াংচুক একজন বিক্রিত এজেন্ট যিনি সরল লাদাখি বৌদ্ধদের তাদের রক্ষক, মোদী এবং বিজেপির বিরুদ্ধে উসকানি দিচ্ছেন, যারা ২০১৯ সালে ইসলামী নেকড়েদের ইসলামী সম্প্রসারণবাদ থেকে তাদের রক্ষা করেছিলেন। সোনম ওয়াংচুক, যিনি মুখ্যমন্ত্রী পদের লোভে, ইতালীয় রক্তের বিদেশী নেতা এবং বিশ্বাসঘাতকদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, তিনি এই ব্রেকিং ইন্ডিয়া বাহিনীর একটি ঘুঁদা হয়ে উঠছেন।তবে নিশ্চিত থাকুন, তার, স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের এবং ভারতে চীনের এজেন্ট রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং শীঘ্রই তাদের মোকাবেলা করা হবে।
তিনি আরও লিখেছেন,এদিকে, অতি উৎসাহী (মূর্খ) কর্মীরা যারা নিজেদের জাতীয়তাবাদী বলে দাবি করেন, তাদের লাদাখি বৌদ্ধদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।তারা নির্বোধ মানুষ যারা চীনের এজেন্ট রাহুল গান্ধীর পুতুল ওয়াংচুকের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফাঁদে পড়েছে, ঠিক যেমন আপনারা নির্বাচনের সময় জাতপাতের ফাঁদে পড়েন। কংগ্রেসের দল এবং তাদের বেতনভুক্ত এজেন্টরা আপনাদের এই বোকামিকে কাজে লাগাচ্ছে এবং লাদাখিদের আরও উসকানি দিচ্ছে।কংগ্রেসম্যানরা বিশ্বাসঘাতক, কিন্তু আপনারা কেন তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন?
এদিকে লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্ত বলেছেন, ‘জনতা কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের গাড়ির ভিতরে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। স্থানীয় বিজেপি অফিসে আগুন লাগানো হয়।’ যদিও সোনম ওয়াংচুক বলেন,’আমি লাদাখের যুবকদের অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি কারণ এটি কেবল আমাদের লক্ষ্যের ক্ষতি করছে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাচ্ছে। আমরা লাদাখ এবং দেশে অস্থিতিশীলতা চাই না।’।