এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ সেপ্টেম্বর : কয়েক ঘন্টার ভারী বর্ষণে জলমগ্ন কার্যত গোটা কলকাতা । এদিকে কোথাও এক হাঁটু,কোথাও কোমড় অব্দি জলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একে একে সাত সাতটি প্রাণ চলে গেছে ৷ জলমগ্ন কলকাতায় চরম দুর্ভোগে পোহাচ্ছে শহরবাসী । সবচেয়ে বিপাকে পড়ছেন রোগীর পরিজনরা ৷ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগীকে নিয়ে যেতে গিয়ে চরম নাকাল হতে হচ্ছে তাদের । জমছে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ । কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম শহর জলমগ্ন হওয়ায় গঙ্গা নদীর উপরেই দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন । তার দাবি,নদীর জল ঢুকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী যথারীতি কলকাতার বন্যাপরিস্থিতি নিয়ে যথারীতি ডিভিসি-এর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিয়েছেন । পাশাপাশি সাতজনের মৃত্যুর দায় চাপিয়ে দিয়েছেন সিইএসসি-এর ঘাড়ে ৷
মমতা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’আকস্মিক দুর্যোগের আক্রমণে বিপর্যস্ত কলকাতা শহরের ও লাগোয়া কিছু এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমাদের সহকর্মীরা ও আধিকারিকরা সর্বত্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডিভিসি-র একতরফা জল ছাড়ায় রাজ্য এমনিতেই প্লাবিত ছিল, নদী, খাল সব টইটম্বুর ছিল। ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে আসছে বিহার, উত্তরপ্রদেশের প্রচুর জল, সেখানে ড্রেজিং না হওয়ায় সমস্যা তো ছিলই । তার ওপরে এল এই হঠাৎ বিপুল বৃষ্টি। আমি মেয়র, মুখ্যসচিব প্রমুখের মাধ্যমে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছি, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছি ।’
সেই সাথে সাতজনের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর জন্য সিইএসসি-এর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে তিনি লিখেছেন,’আজ সিইএসসি-র অবহেলায় কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের পরিবারের জন্য আমাদের আন্তরিক সমবেদনা। মৃত্যুর কোনো ক্ষতিপূরণ হয়না, জীবনের কোন বিকল্প হয় না। তবুও আমরা প্রতি পরিবারের একজনের চাকরি নিশ্চিত করব। ক্ষতিপূরণ দিতে বলছি সিইএসসি কে-ও। আমি সিইএসসি-র সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের আন্তরিক সমবেদনার পাশাপাশি এই ক্ষতিপূরণ-ও পরিবারগুলির প্রাপ্য।’
তিনি আরও লিখেছেন,’আমরা পাশে আছি, সব সময়, প্রতিটি মুহূর্তে। নবান্নে কন্ট্রোল রুম খুলেছি, আমি দেখছি।’ কন্ট্রোল রুমের তিনটে ফোন নম্বর দিয়ে মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন,’আজ আর কলকাতায় পুজো উদ্বোধনে কোথাও যাচ্ছি না। জেলার পুজোগুলি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করে দেব। কয়েকটা দিন এখন খুব সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।’
এদিকে কলকাতার এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকার ও সিইএসসি-কে তুলোধুনো করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’জলমগ্ন শহরে মৃত্যুর মিছিল !
মৃতদেহ ভাসছে জমা জলে, সকাল সকাল এই দৃশ্য দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু এই দুর্দশার জন্য দায় কার? এক রাতের বৃষ্টিতেই কলকাতা-সল্টলেক জলমগ্ন! ভাসছে শহর, বিপন্ন শহরবাসী, চরম দুর্ভোগ অফিস যাত্রীদের। আজকের দিনে যখন প্রযুক্তি এত উন্নত যে কখন বৃষ্টি হবে, কত পরিমাণে হবে তার আভাস আগেই পাওয়া যায় তখন কলকাতা ও বিধাননগর পুর নিগমের মেয়রদের অদক্ষতা আর উদাসীনতার ফল শহরবাসীকে ভোগ করতে হয়।এরা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে কোনো শিক্ষা নেননি, বারবার একই চিত্র বছরের পর বছর !’
তিনি আরও লিখেছেন,’বিদ্যুৎ দফতরের দোষ তো একেবারে মারাত্মক। আধিকারিকরা কোথায়? খোলা তারের এই বিপদের ব্যাপারে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? এখন অবধি সাতজন নিরীহ মানুষ মারা গেছেন। এটা আপনাদের ব্যর্থতা নয়, এটা অপরাধ, দোষ কার তা নির্ধারণ করে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। বছরের পর বছর ধরে এই অব্যবস্থাপনায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। আর কত দিন এই অরাজকতা চলবে?’
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,’আমি বলেছি, আজ থেকে সরকারী সব স্কুল ছুটি থাকবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও আগামী দু-দিন ছুটি। বেসরকারী অফিস গুলি আগামী দু’দিন ওয়ার্ক ফ্রম হোম করুন। সরকারী অফিস-ও দুদিন ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবে। মানুষকে বাঁচানোই এখন প্রাথমিক কাজ।’।