দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৩ সেপ্টেম্বর : সময়টা নব্বয়ের দশক । তখনও অজ পাড়াগাঁয়ের ছাপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজার ৷ তখন শারদোৎসবে একমাত্র বিগ বাজেটের বারোয়ারী পূজো বলতে ছিল ভাতার হাউসিং কম্পেলেক্সে আয়োজিত দুর্গাপূজা । চাকুরিজীবীদের বিপুল চাঁদার অর্থে ধুমধাম করে পূজো হত । মণ্ডপ-আলোকসজ্জা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জমজমাট হয়ে উঠত গোটা বাজার এলাকা । আস্তে আস্তে সেই পূজোয় ভাটা পড়ে ৷ ফলে শারদোৎসবের সময় এলাকার মানুষ মনমরা হয়ে পড়তেন ৷ সাধারণ মানুষের সেই আক্ষেপ দূর করতে এগিয়ে আসেন ভাতার বাজারের বাসিন্দা দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু অনুপ কুমার মিত্র ও দেবব্রত কুন্ডু । দুই বন্ধু মিলে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “শান্তিশ্রী” ক্লাব ৷ সম্পূর্ণ চাঁদার অর্থে তারা আয়োজন করেন শারদোৎসবের । ভাতার হাউসিং কম্পেলেক্সের মতই তারা মণ্ডপ-আলোকসজ্জা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মাতিয়ে রাখেন দুর্গাপূজার দিনগুলি । ভাতার বাসস্ট্যান্ডের ঠিক পাশেই শান্তিশ্রী ক্লাবের আয়োজিত এই পূজো দেখতে ভিড় জমান স্থানীয় এলাকা ছাড়াও আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ।
এদিকে দেখতে দেখতে সাড়ে তিন দশক বয়স হয়ে গেল “শান্তিশ্রী” ক্লাবের শারদোৎসব ৷ ক্লাবের সদস্য সংখ্যাও অনেক বেড়েছে৷ তবে মূলত অনুপ কুমার মিত্র ও দেবব্রত কুন্ডুর হাতেই থাকে পূজোর রাশ । প্রতি বছরেই শান্তিশ্রী ক্লাব মন্ডপ ও দেবী প্রতিমায় নিয়ে আসেন নতুনত্বের ছোঁয়া । গত বছর দেবীর ঢাকের সাজ নজর কেড়েছিল এলাকাবাসীর ৷ মণ্ডপেও ছিল বিশেষত্ব ৷ এবারেও দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল এবং প্রতিমায় অভিনবত্ব এনে দর্শনার্থীদের চমক দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন । বর্তমানে দেবীর মূর্তি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও অসম্পূর্ণ মন্ডপ ৷ দিনরাত এক করে জোর কদমে কাজ চলছে মণ্ডপ নির্মানের কাজ ।
অনুপ কুমার মিত্র জানান,দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে এবারে মণ্ডপ করা হচ্ছে । তবে ঠিক কোন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হচ্ছে তা তিনি খোলসা করেননি । অবশ্য দেবীদুর্গার প্রতিমা এইদিন-এর সঙ্গে শেয়ার করে নিয়েছেন তিনি । অনুপবাবু দাবি করেছেন, ‘এবারে আমাদের মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমার অভিনবত্বে দর্শনার্থীদের চমকে দেবো ৷’
ক্লাব সূত্রে খবর, এবারে ভাতার বাজারের শান্তিশ্রী ক্লাবের বাজেট চার লাখের উর্দ্ধে ৷ তার মধ্যে প্যান্ডেলে ১.৮০ লাখ টাকা,আলোকসজ্জায় ৫০ হাজার টাকা ৷ প্রতিমা গড়েছেন ভাতার ব্লকের মাহাতা অঞ্চলের কাশীপুর গ্রামের শিল্পি অনুপ পাল । পূজোর ক’টা দিন এলাকার শিশুশিল্পিদের নিয়ে নাচগানের আয়োজন করা হবে এবং মহাপঞ্চমীতে উদ্বোধনীর দিন শতাধিক দুঃস্থ মহিলার হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়া হবে বলে জানান অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা দেবব্রত কুন্ডু ।
তবে এবারে ছোট্ট একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে দুই বন্ধুর মধ্যে ৷ আর সেটা হল, এত বছর ধরে ভাতার গ্রামের বাসিন্দা যে ব্যক্তির জায়গায় মণ্ডপ নির্মান হচ্ছিল সেই জায়গা এবারে মেলেনি ৷ ওই জায়গায় নির্মিত মণ্ডপ ও দেবী প্রতিমা ঠিক পাশেই বর্ধমান- কাটোয়া রাজ্য সড়ক থেকে দর্শনার্থীদের চোখে পড়ত । কিন্তু এবারে সেটা আর হচ্ছে না বলে তারা আফশোস করেছেন ।।