এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,২২ সেপ্টেম্বর : আজ সোমবার(২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫) থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশজুড়ে ‘জিএসটি সঞ্চয় উৎসব’ শুরু করার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী । গতকাল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে লেখা একটি খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী জানান,জিএসটি সংস্কারগুলি কৃষক, মহিলা, যুবক, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র শিল্প এবং কুটির শিল্প সহ সকলের জন্য উপকার করবে। কিন্তু এই সংস্কারের ক্রেডিট কেন্দ্র সরকারকে দিতে রাজি নন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । গতকাল রবিবার চেতলা অগ্রণীতে দুর্গাপূজার উদ্বোধন করতে গিয়ে মমতা দাবি করেছেন,’শুধু অনুদানই নয়,বিমা থেকে জিএসটি হটানোর কাজেও একমাত্র বাংলার প্রশাসনেরই ভূমিকা রয়েছে । এই নিয়ম আনতে গিয়ে আমাদের ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেল।’
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বিরোধিতা দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,নিজে ক্রেডিট না নিয়ে ট্যাক্স ছাড় দিয়ে মোদীজির সঙ্গে সাধারণ মানুষকে রিলিফ দেওয়ার প্রতিযোগিতা করুন ।
আজ সোমবার বিকেলে বিজেপি নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার ডাকে দলীয় কর্মী সঞ্জয় ভৌমিকের হত্যার প্রতিবাদে নবদ্বীপের বড়াল ঘাটে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে একথা বলেন শুভেন্দু অধিকারী । রাজ্যে বিদ্যুৎ বিলের চার্জ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, পেট্রোল-ডিজেল ও গ্যাস সিলিন্ডারের উপর রাজ্যের চাপানো সেস,পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন ট্যাক্স বৃদ্ধিসহ একাধিক ক্ষেত্রে ট্যাক্স চাপিয়ে রাজ্যের সাধারণ মানুষের উপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন তিনি ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’উত্তরপ্রদেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম ১০ টাকা কম । আপনি এ রাজ্যে পেট্রোল ডিজেলের যে স্টেট ট্যাক্স নিচ্ছেন সেটা প্রত্যাহার করে মোদীজির সঙ্গে সাধারণ মানুষকে রিলিফ দেওয়ার প্রতিযোগিতা করুন ।আপনি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার পেছু যে ট্যাক্স নিচ্ছেন সেটা ছাড় দিন এবং মোদিজীর ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করুন । এটাই আমি ওনার কাছে দাবি করব ।’
তিনি বলেন,’উড়িষ্যা ঝাড়খন্ড বিহার আসাম প্রভৃতি পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া প্রদেশগুলিতে এক লিটার ডিজেলের দাম ১০-১২ টাকা কম । এক লিটার পেট্রোলের দাম ৮-১০ টাকা কম ।’ শুভেন্দুর কথায়, ‘জিএসটির উৎসব চারিদিকে যেভাবে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রভাব তাতে ঘাবড়ে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি এই ধরনের কথা বলছেন । তবে তাতে কোন সুবিধা হবে না । পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানেই রাজ্যের কি দুরাবস্থা । ইলেকট্রিকের বিল ২০১১ সালে কত ছিল এবং ২০২৫ এ কত হয়েছে ? জমি কেনা বেচার রেজিস্ট্রেশন ফি ২০১১ সালে কত ছিল এবং ২০২৫ এ কত হয়েছে ? জমিজায়গার মিউটেশন,কনভার্শন, রেকর্ডের খাজনা, মিউনসিপ্যালিটি এলাকায় ডমেস্টিক চার্জ, ট্রেড লাইসেন্সের ট্যাক্স, বিল্ডিং-এর ট্যাক্স, এই নবদ্বীপ শহরে যারা ফুটপাতে সবজি বা অন্যান্য জিনিস বিক্রি করতে আসে তাদের কাছ থেকে পুরসভা ১৫-৫০ টাকা ট্যাক্সআদায় করে । টোটো গুলোকে লাইসেন্স দিতে পারেনি অথচ তাদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ২০০ টাকা প্রত্যেকদিন ট্যাক্স আদায় করে ।’তিনি বলেন,’ছোট দোকানদারদের জিজ্ঞেস করুন কি অবস্থা । ধীমান সাহারা ২০১৯ সালে ক্ষমতায় এসেছে, তার আগে ট্রেড লাইসেন্সে ১০০-২০০ টাকা ডেভেলপমেন্ট ফি ছিল । এখন প্রতি দোকান পিছু ২০,০০০ টাকা করে নেয় । আরো বেশি আছে । দেড় লাখ, দু লাখ, ৭ লাখ পর্যন্ত আছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’এরা কি করেছে ? মমতা ব্যানার্জি ২৮ টাকার মদের পাউচটা ধরিয়ে দিয়েছে । চাকরি নাই বাকরি নাই । ৬৮৮৮ টা কারখানা বন্ধ করলো ৷ টাটাকে তাড়ালো কে? মমতা আবার কে । ৮২০০ স্কুল বন্ধ করল কে? মমতা ছাড়া আবার কে । এই নবদ্বীপ শহর প্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের জায়গা । এখানে মাত্র একটা মদের দোকান ছিল । এখন কুড়িটা মদের দোকান । আমাদেরকে যে সনাতনের রীতিনীতি রয়েছে । কার্তিক মাস দামোদর মাস । এই মাসেও নবদ্বীপ ধামের সাত্ত্বিক পরিবেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে তৃণমূল । প্রকাশ্যে ক্ষমতার জোরে ও পুলিশের সাহায্যে তারা এই কাজ করছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আসলে মমতা ব্যানার্জির দুটো কাজ । একটা হল, ২০০,৫০০,৭০০ টাকা ভাতা দিয়ে হিন্দু ভোটকে ভাগ করা । আর দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে হিজাব পরে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করে মুসলিমদের বার্তা দেওয়া যে আমি তোমাদেরই লোক, আমি হিন্দুদের লোক নই । এই কাজটাই উনি করে বেড়াচ্ছেন ।’ সব শেষে তিনি বলেন,’স্বাভাবিকভাবে এই বিপর্যয় থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতে গেলে নরেন্দ্র মোদীজির আশীর্বাদ ধন্য একটি সরকার দরকার । যে সরকার এলে দূর্গা পূজা,সরস্বতী পুজো, রামনবমী করার জন্য হাইকোর্টে যেতে হবে না। হিন্দু হওয়ার জন্য ঢিলও খেতে হবে না ।’।

