এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,২০ সেপ্টেম্বর : ভারতীয় মুসলিমদের জন্য পৃথক ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়েছিল হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ । ১৯৪৬ সালে কলকাতা থেকে হিন্দুদের উৎখাত করতে “ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে” ঘোষণা করে হিন্দু নরসংহার চালায় সোহ্রাওয়ার্দী । যদিও হিন্দুদের পাল্টা প্রতিরোধে তাকে হাঁটু গেড়ে বসতে হয় । পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, সুরাবর্দি-জিন্নার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়া নবদ্বীপের বিজেপি নেতা সঞ্জয় ভৌমিককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নদীয়ার কল্যাণীর এইএমএস-এ যান শুভেন্দু অধিকারী৷ তার সাথে ছিলেন স্থানীয় সংসদ জগন্নাথ সরকার, বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা সহ অনান্যরা । তারা মৃতদেদে দলীয় পতাকা ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন । পরে সঞ্জয় ভৌমিকের মরদেহ নিয়ে কল্যাণী এইমস থেকে নবদ্বীপের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা করেন তারা । তার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে মহালয়ার আগেই মমতা ব্যানার্জির একের পর এক দুর্গাপুজোর উদ্বোধন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি হিন্দু বিরোধী এটা সবাই জানে । হিন্দু ধর্মকে গন্দা ধর্ম বলেন । মহাকুম্ভ কে মৃত্যু কুম্ভ বলেন । আরএসএস, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি সনাতনী সংগঠনগুলিকে বলেন জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদী । অতএব তিনি যে হিন্দু বিরোধী সনাতন বিরোধী এটা সবাই জানে । নতুন করে বলার কিছু নেই ।’
তিনি বলেন,’পশ্চিমবাংলার যারা প্রকৃত হিন্দু তারা শাস্ত্র পঞ্জিকা মেনেই চলেন ৷ পিতৃপক্ষে কোন শুভকাজ কোন হিন্দু করেনা । যাদের পিতা-মাতা গত হয়েছেন তারা এই সময় গয়াতে গিয়ে পিন্ডদান করেন ৷ আমাদের শুভ পক্ষ শুরু হয় মহালয়ার দিন। আজকে উনি যেটা করছেন সেটা হিন্দু ধর্মের অপমান । বরাবরই করে আসছেন । প্রকাশ্যে করেন । বিধানসভার ফ্লোরে মহা কুম্ভকে মৃত্যু কুম্ভ বলেন । প্রকাশ্যে বলেন ওটা হিন্দু ধর্ম নয় গন্দা ধর্ম । তিনিই
একমাত্র ব্যক্তি যিনি রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন মিছিল করেন । মমতা ব্যানার্জি আমাদের হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি ও হিন্দু ধর্মের অনুষ্ঠানকে কালচারাল অনুষ্ঠানে পরিণত করতে চান। একটাই কথা বলব জাগো হিন্দু জাগো । সুরাবর্দি, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অসম্পূর্ণ কাজ এই মহিলা করছেন ।’তিনি বলেন,’হিন্দুরা জোট বেঁধে দলের কথা ভুলে গিয়ে, জাতের কথা ভুলে গিয়ে একজোট হয়ে এই মুসলিম লীগ-২ সরকারকে পরাস্ত করুন । যাতে ২০২৬ সালে এই ধরনের মুখ্যমন্ত্রী যেন না থাকে যে পিতৃপক্ষে কাঁচি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে ।’
প্রসঙ্গত,গত ১৮ সেপ্টেম্বর খুন হন মায়াপুর পুর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জয় ভৌমিক (৪০) । বৃদ্ধা মা- বাবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে । যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা নবদ্বীপ পৌরসভার পৌরপতি বিমান কৃষ্ণ সাহার দাবি যে ভৌমিকের পরিবারই তাকে খুন করেছে । যদিও তার পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়া তৃতীয় কোনো সদস্য নেই । শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,নবদ্বীপের বিধায়ক পুন্ডরীকাক্ষ সাহা’র গাড়ির প্রাক্তন চালক তারক দাস, তৃণমূলের বুথ সভাপতি গদাধর রায়, তাপস দাস, অরিন্দম মণ্ডল সহ আরো ছয় সাতজন মিলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায় ।
আজ শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,রাজনৈতিক কারণেই খুন হয়েছেন সঞ্জয় ভৌমিক । পরিবারও অতিরঞ্জিত না করে তারক দাস সহ ৪ জন খুনির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে । কোন গ্রেপ্তার হয়নি । এখানেই প্রমাণিত যে রাজনৈতিক রঙ দেখে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কাজ করে ।’ তিনি বলেন,’এই ঘটনাতে মারামারির কোন সিন নেই । যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে তারকসহ তৃণমূলের গুন্ডা পান্ডা, তাদের কোন চোট লাগেনি। একতরফা হয়েছে।’
তিনি বলেন,’সঞ্জয় অত্যন্ত পরিচিত বিজেপি কর্মী । আমাদের সম্প্রতি যে মেম্বারশিপ হয়েছে সেই মেম্বারশিপও নিয়েছিলেন । ওর দিদি স্বাতী চক্রবর্তী আমাদের মহিলা মোর্চার ওই এলাকার বা ওই বিধানসভার একজন দাপুটে নেত্রী । স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক কারণটাই প্রধান । কারণ নবদ্বীপ আসন টলমলও করছে, তৃণমূলের হাতছাড়া হওয়ার পথে।
লোকসভাতে রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি মুসলিম অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, ছাপ্পা, ভয় দেখিয়ে মাত্র ৬ হাজারের গ্যাপ । ওরা জানে যে এসআইআর হওয়ার পরে ওরা কুড়ি হাজার ভোটে নবদ্বীপে হারবে । সেই কারণে এই ধরনের তাজা বিজেপি কর্মীদের খুন করে, যারা পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির হাতিয়ার বা স্তম্ভ, সেই সমস্ত যুবকদের ভয় দেখাতে চায়৷’
নিহত দলীয় কর্মীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’একজন অকৃতদার, অবিবাহিত ৩০ উর্ধ যুবক । যার মায়ের সেবা করাই ছিল প্রধান কাজ এবং রাষ্ট্রবাদের পক্ষে কাজ করতো । তাকে খুন করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল যে এই তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গের কোন নাগরিককেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ । আর চারজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, তাদেরকে এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি । এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত যে রাজনৈতিক রঙ আর ধর্ম দেখে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কাজ করে । সেই জন্য এই পুলিশের প্রতি মানুষের কোন আস্থা নেই । তাই পরিবার নবদ্বীপে গিয়ে কল্যাণী এইমসে ময়নাতদন্ত করিয়েছে । শুধু পুলিশ মন্ত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জি ব্যর্থ নন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে ও ব্যর্থ । আজকে কেন্দ্রীয় সরকারের এইমসের ময়নাতদন্ত করার বিষয়ে পরিবারের দাবির মধ্য দিয়ে ফের একবার সেটা প্রমাণিত হলো ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’চারজনের নামে এফআইআর হয়েছে । আজকেও দেহ নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হবে । জেলা সভানেত্রী অপর্ণা নন্দী এবং সাংসদ জগন্নাথ সরকার সহ সাংগঠনিক জেলার নদীয়ার সমস্ত বিধায়করা সকলেই তাতে অংশগ্রহণ করবে । আমরা পুলিশকে আগামীকাল পর্যন্ত সময় দিচ্ছি । সোমবার বিকালে নবদ্বীপ শহরের ধিক্কার এবং প্রতিবাদ মিছিল হবে । তার মধ্যেও যদি ব্যবস্থা না হয়, ওখানে একটা দলদাস এসপি আছে অমরনাথ, পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপ পুলিশ ডিস্ট্রিক্ট এর মধ্যে পড়ে, তার বিরুদ্ধেও আমরা নবদ্বীপ নগরে এসপি অফিস অভিযান করব । সেটা সোমবার বিকালে মঞ্চ থেকে আমরা বিস্তারিত ঘোষণা করব ।’
এরপর পুলিশ ও তৃণমূলকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা বলেছেন,’এছাড়া নবদ্বীপের আইসি ওখানকার দুর্নীতিগ্রস্ত পৌর প্রধান বিমান কৃষ্ণ সাহা সহ, এখন ওদের হালি নেতা মুকুটমনি মিলে ওখানে যে দুর্বৃত্তের রাজত্ব তার শেষ দেখে ছাড়বো আমরা ।’
এদিকে আগেই পুলিশের উপর ভরসা রাখতে না পারার করার কথা জানান মৃতার দিদি স্বাতী চক্রবর্তী ভৌমিক । তিনি সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন । এদিন চার মূল অভিযুক্তের ফাঁসি কার্যকর করার দাবিতে শ্লোগান দেন শুভেন্দু অধিকারীও ।।