এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,১৯ সেপ্টেম্বর : কক্সবাজার শহরের আওয়ামী লীগ নেত্রী রোজিনা আক্তারকে সুরক্ষার আশ্বাস দিয়ে কোরান ছুঁয়ে ২ লাখ টাকা নিয়েছেন বিএনপি নেতা নুরউদ্দিন খান । ধর্ষণ সহ বহু গুরুতর অপরাধের আসামি নুরউদ্দিন খান শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির পূর্ব শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন । গোপনে রেকর্ড করা ভিডিওতে দেখা যায়, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ার আওয়ামী লীগ নেত্রী রোজিনা আক্তারকে রাজনৈতিক ও পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষা করার আশ্বাস দিতে মাথায় কোরান তুলেছেন নুরউদ্দিন খাঁন। একই সঙ্গে তার হাত থেকে নগদ দুই লাখ টাকাও নিতেও দেখা গেছে তাকে।
আওয়ামী লীগ নেত্রী রোজিনা আক্তারের অভিযোগ, রাজনৈতিক আশ্রয় ও পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষার কথা বলে প্রথমে দুই লাখ টাকা নেন নুরউদ্দিন। কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি, টাকা নেওয়ার পরও তিনি আরও অর্থ দাবি করেন। রোজিনা বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম তিনি আমাকে বিপদ থেকে বাঁচাবেন। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরও আরও টাকার জন্য চাপ দেন। আমি রাজি না হলে হত্যার পর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এখন আমি ভয়ে আছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি নেতা নুরউদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মানবপাচার, পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা গুরুতর অপরাধের অভিযোগ মামলা চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব অপকর্মের পরও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তিনি বারবার আইনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, নুরউদ্দিনের নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যায়। অথচ আজ তিনি কোরান মাথায় রেখে টাকা নিচ্ছেন; এটা শুধু প্রতারণা নয়, ভয়ঙ্কর রসিকতাও।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভের ঝড় ওঠে। অনেকে লিখেছেন, পবিত্র কোরান সামনে রেখে এভাবে প্রতারণা ধর্মীয় অবমাননার সামিল। কেউ কটাক্ষ করে লিখেছেন, এবার বুঝি কোরান দিয়ে টাকা তোলার নতুন ব্যবসা শুরু হলো।
এক বিএনপি কর্মী লিখেছেন, যে মানুষ কোরানকে হাতিয়ার বানায়, সে সমাজের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
ঘটনাটি জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাকআপ থাকায় নুরউদ্দিন সবসময় পার পেয়ে যান।
বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, কোরান ছুঁয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার ঘটনা শুধু কক্সবাজার নয়, দেশজুড়ে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিব্রতকর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নুরউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়, তবে এবার ভিডিও প্রমাণে হাতে-নাতে ধরা পড়েছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কেবল ব্যক্তিগত দুর্নীতি নয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির নগ্ন প্রতিফলন। যেখানে মানুষকে বাঁচানো বা ফাঁসানো নির্ভর করছে টাকার লেনদেনের ওপর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা নুরউদ্দিন খাঁন বলেন, আমি এলাকার সমাজপতি, বিচার-শালিশ সব আমি করি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এটার প্রতিবাদও করেছি ।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, এমন একটি ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। তবে এখনো কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হতো। তারপরও আমরা বিষয়টি খোঁজখবর নিচ্ছি।
কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার পর থেকে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। প্রথমে তাকে শোকজ করা হবে। যদি যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় নুরউদ্দিন খাঁনের মত দুর্নীতিবাজ লোকেরাই বিএনপির সম্পদ৷ তাই তার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা তারা বিশ্বাস করেন না ।।

