এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ সেপ্টেম্বর : সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অবশেষে গত রবিবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের(এসএসসি) একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয় । কিন্তু ওইদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা হিন্দু গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে “নোয়া-পলা” খোলার ফরমান জারি করাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা রাজ্যে । পরীক্ষা না দিয়েই একজন সদ্য বিবাহিতা তরুনীকে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায় । যদিও রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে যে “বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে মিটে যায়, এবং নোয়া পরেই নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে উনি পরীক্ষা দিয়েছেন” । এদিকে “নোয়া-পলা” খোলার ফরমান জারি করাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ তুলে সরব হচ্ছেন নেটিজেনরা । এখন রাজ্য পুলিশ তাদের সতর্ক করে বলেছে,কালনার স্কুলে “নোয়া” কান্ডে ধর্মকে জড়িয়ে উসকানিমূলক প্রচার’ করলেই ‘আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ ।
প্রসঙ্গত,রবিবার শ্বশুরকে সাথে নিয়ে কালনা হিন্দু গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন বছর পঁচিশের বধূ । কিন্তু তার হাতে “নোয়া” থাকায় পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । গেটে থাকা সিকিউরিটি চেকিং করা লোকজন বধূকে নোয়া খুলে আসার পরামর্শ দিলে শুরু হয় তীব্র বাদানুবাদ ।
তীব্র বাদানুবাদের পর ওই পরীক্ষার্থী হাতের নোয়া খুলতে অস্বীকার করেন এবং পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরে যান । তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘মাত্র এক মাস বিয়ে হয়েছে আমার। এখন বলছে নোয়া খুলে তবেই পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেওয়া হবে । সধবা মেয়ে সিঁদুর শাখা নোয়া কেন খুলবো ? তাতে পরীক্ষা দেবই না।’ প্রতিবাদে সরব হন সাথে যাওয়া বধূর প্রৌঢ় শ্বশুরও।
এদিকে এই ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করতে শুরু করে ৷ বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হলে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সাফাই দিয়ে জানায় যে কেন্দ্র সরকারের নিয়োগের পরীক্ষাতেও কোনো ধাতব বস্তু নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে । গতকাল রাজ্য পুলিশের এক্স-হ্যান্ডেলে এনিয়ে একটি বড়সড় পোস্ট করা হয়েছে । তাতে লেখা হয়েছে,”গত রবিবারের SSC পরীক্ষা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিভ্রান্তিকর প্রচার আমাদের নজরে এসেছে। যেখানে অভিযোগ করা হচ্ছে, বর্ধমানের কালনার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে শাঁখা-পলা-নোয়া পরিহিতা পরীক্ষার্থীনীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর করে যা জানতে পেরেছি, তা এরকম। রাজ্যের অন্যত্রের মতো বর্ধমানের ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের মূল প্রবেশপথে পরীক্ষার্থীদের চেকিংয়ের দায়িত্বে ছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। সেই সংস্থার এক কর্মী এক পরীক্ষার্থীনীকে হলে ঢোকার আগে নোয়া খুলতে বলেন, যেহেতু নোয়াটি ধাতব। পরীক্ষার্থীনী বিষয়টি পরীক্ষাকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে মিটে যায়, এবং নোয়া পরেই নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে উনি পরীক্ষা দেন। পুরো বিষয়টিই একটি বিচ্ছিন্ন ভুল-বোঝাবুঝির ঘটনামাত্র। সব ধর্মেরই প্রচলিত আচরণবিধি সরকারের কাছে সমান সম্মানের। তবু, এর সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে যাঁরা বিভ্রান্তিকর এবং উসকানিমূলক প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপরোক্ত ঘটনাটি ছাড়া রাজ্যের কোথাও আর কেউ এ ধরণের কোনও অভিযোগ কর্তৃপক্ষের কাছে করেননি। যদি কারও সঙ্গে এ ধরণের কিছু ঘটে থাকে, স্থানীয় থানায় জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
যদিও রাজ্য পুলিশের এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে ব্যবহারকারীরা “নোয়া” খোলার ফরমান জারি করার তীব্র সমালোচনা করেছেন ।।

