এইদিন ওয়েবডেস্ক,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),১৪ সেপ্টেম্বর : সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অবশেষে আজ রবিবার একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হল । এর আগের সপ্তাহে নবম ও দশমের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল । কিন্তু আজকের পরীক্ষায় বিবাহিতা পরীক্ষার্থীদের হাতের নোয়া খোলার ফরমান জারি করাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হল পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা হিন্দু গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে ৷ তীব্র বাদানুবাদের পর ওই পরীক্ষার্থী হাতের নোয়া খুলতে অস্বীকার করেন এবং পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরে যান । তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মাত্র এক মাস বিয়ে হয়েছে আমার। এখন বলছে নোয়া খুলে তবেই পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেওয়া হবে ৷ সধবা মেয়ে সিঁদুর শাখা নোয়া কেন খুলবো ? তাতে পরীক্ষা দেবই না।’ যদিও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার জানান, এমন কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি । তবে এই প্রকার ফরমানে সমালোচনার ঝড় উঠছে ।
প্রসঙ্গত,হিন্দু বাঙালির বিয়েতে শাঁখা-সিঁদুর-নোয়া, পলা আবশ্যক। বাঙালী হিন্দুদের বিয়ে একটা উন্নত সংস্কৃতির ধারক ও সম্পর্কের পবিত্রতার স্মারক । শাঁখা বিয়ের এক বছরের মধ্যে ভেঙে যাওয়াকে অশুভ বলে মনে করা হয় । পলা হল একটি লাল রঙের চুড়ি। যা তৈরি হয় লাল প্রবাল থেকে। প্রবাল সামুদ্রিক প্রাণী। তার জীবাশ্ম থেকেই এই প্রবাল বা পলা তৈরি করা হয়ে থাকে। দুই হাতেই এই পলা পরিধান করা হয়। পলার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হয় যাতে এটি এক বছরের মধ্যে নষ্ট না হয়। শাঁখার মতো পলাও যদি এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায়, তবে তাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয় । নোয়া কথাটা লোহার অপভ্ৰংশ। আসলে লোহা দিয়ে এই চুড়ি তৈরি করা হয়। এটি কেবলমাত্র “বাম” হাতে ধারণ করা হয়। এটি কেউ কেউ, সোনা বা বা রুপা দিয়ে আচ্ছাদন করে বানিয়ে নেন । বিবাহিতা বধূর কাছে নোয়া হল শুভ । শাঁখা-পলা-নোয়ার কিছু দ্রব্যগুন ও রঙের প্রভাব আছে। যা মানুষকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে বলে মনে করা হয় । শুধু তাই নয়, বিয়ের দিন সকালে এই শাঁখা ও পলা কনের মা পড়িয়ে দেন। বিয়ের সময় সিঁদুর পাড়িয়ে দেন স্বামী। আর নোয়া বা লোহার বালা পরিয়ে দেন, কনের শাশুড়ি অর্থাৎ বরের মা। তাই এগুলো তাদের আশীর্বাদের চিহ্ন।
জানা গেছে,আগের পরীক্ষায় বিবাহিতা মহিলাদের শাঁখা-পলা-নোয়া খোলার বিষয়ে কোনো নির্দেশিকা ছিল না । কিন্তু এবারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে থেকেই জানানো হয়েছিল যে শাখা, পলা, নোয়া–সহ কোনো ধাতব সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। কারন হিসাবে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল । আজ কালনা হিন্দু গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে বিবাহিত মেয়েদের হাতের নোয়া-বালা খুলে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে নির্দেশ দেওয়া হলে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয় । কয়েকজন বিবাহিতা তরুনী নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। শুরু হয় তীব্র বাদানুবাদ । শেষে বাকিরা নির্দেশিকা মেনে পরীক্ষার হলে ঢুকলেও একজন বিবাহিতা তরুনী নোয়া-পলা খুলতে অস্বীকার করেন এবং ফিরে যান । এদিকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের এই নতুন নির্দেশিকাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসাবে দেখছেন অনেকে । দেখুন ভিডিও 👇
উল্লেখ্য, আজ রবিবার এসএসসির দ্বিতীয় দফায় একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির মোট ১২,৫০০ (সাড়ে ১২ হাজার) শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় ২,৫০,০০০ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন ।তার মধ্যে কালনা হিন্দু গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে আজ মোট ৩৯৭ জন পরীক্ষার্থীর সেন্টার পড়েছিল ।।