এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ সেপ্টেম্বর : গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জলাশয়ে অনামিকা মণ্ডল নামে ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছে । ওই মেধাবী ছাত্রীটি নিমতার ললিত গুপ্ত স্ট্রিটের বাসিন্দা ছিলেন । তার রহস্যময় মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি । উঠছে বিভিন্ন প্রশ্ন । পুলিশের দাবি জিজ্ঞাসাবাদে মৃতার বন্ধুরা জানিয়েছেন, ঝিলপাড়ে বসে মদ্যপান করছিলেন তাঁরা। সাঁতার না জানা সত্ত্বেও অনামিকা মদ্যপ অবস্থায় ঝিলে নেমে তলিয়ে যান। বন্ধুরা চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। সত্যিই কি তাই? নাকি মদের আসরে বচসা বা নিছক মজা করেই ঝিলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল অনামিকাকে? উত্তর পেতে মৃতার বন্ধুদের টানা জেরা করছে তদন্তকারীরা। এদিকে মৃতার পরিবার ও নিমতার ললিত গুপ্ত স্ট্রিটের বাসিন্দারা দাবি করেছেন যে অনামিকা মদ্যপান করতেন না । স্বভাবতই মৃতার সহপাঠীদের দাবি অত্যন্ত সন্দেহজনক বলে মনে করছেন তারা । মৃতার বন্ধুদের টানা জেরা করছে তদন্তকারীরা। সেই সাথে
লালবাজার হোমিসাইড শাখার তত্ত্বাবধানে চলছে ময়নাতদন্ত ।ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার ইনকোয়েস্ট করা হবে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মামলা রুজু হবে।
এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুললেন বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি । তিনি এনিয়ে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্বেগজনক খবর । এক তৃতীয় বর্ষের স্নাতক ছাত্রীকে রহস্যজনক ভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, একটি ছাত্র-সংগঠিত সাংস্কৃতিক উৎসবের সময় তার দেহ ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থিত এক ডোবায় ভাসছিল।
গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় : তাকে হত্যা করার আগে তাকে কি ড্রাগ দেওয়া হয়েছিল এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছিল? কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ চুপ করে আছে কেন?কেন এটিকে একটি “দুর্ঘটনা” হিসাবে একপাশে সরিয়ে রাখা হচ্ছে?’
তিনি আরও লিখেছেন,’আরজি কার মেডিকেল কলেজে এক তরুণীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যার পর এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। কেন বাংলার ক্যাম্পাসে শুধুমাত্র মহিলা পড়ুয়ারা অনিরাপদ?ছাত্র সংগঠন এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলিকে অবশ্যই যথাযথ তদন্তের দাবি জানাতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসন কোনও রকম আড়াল হতে দিতে পারে না।
প্রকৃত ঘটনা না জানা পর্যন্ত আমরা ভুক্তভোগীর নাম বা ছবি প্রকাশ করব না। আমরা আরও আশা করি যে প্রশাসন মৃত্যুর সময় তার মর্যাদা রক্ষা করবে-আর কে কার মামলার বিপরীতে, যেখানে এমনকি পুলিশ কমিশনারও ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ করে মৌলিক শালীনতা লঙ্ঘন করেছিলেন।’ সবশেষে বিজেপি নেত্রী লিখেছেন,’বাংলার ক্যাম্পাসগুলি অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ স্থান হতে হবে-অপরাধের দৃশ্য নয়।’
গতকাল রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা ক্লাবের আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল পার্কিং লটে। সেই অনুষ্ঠানের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় লাইটগুলি অফ রাখা হয়েছিল। তারস্বরে বাজছিল মাইক । অনুষ্ঠান দেখছিলেন ওই ছাত্রী৷ রাত ৯:৫৫ নাগাদ শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য উঠেছিলেন । এরপরই পার্কিং লটের উল্টো দিকে থাকা গভীর ঝিলের জলে তার দেহ ভাসতে দেখা যায় । প্রায় ১০ মিনিট জলে ভাসার পর ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক শুশ্রষার চেষ্টা করা হয়। এরপর পাশেই কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে । কিন্তু তার আগেই ছাত্রীর মৃত্যু হয় ।পুলিশ সূত্রে খবর, রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই মদের আসর বসেছিল। ঘটনাস্থলের কাছ থেকে একটি মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। মৃতার সহপাঠীরা তার মদ্যপানের দাবি করলেও বিশ্বাস করছে ছাত্রীর পরিবার পরিজন । ফলে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে । কোনো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই যে ফুটেজ দেখে মৃত্যুর কারন খুঁজবে পুলিশ । কারন বামপন্থী ও উগ্র বামপন্থী পড়ুয়াদের আপত্তিতেই নাকি কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর সাহস করেনি কর্তৃপক্ষ । যেকারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসা এই পরম্পরা বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর হস্তক্ষেপ করার দাবি উঠছে ।।