এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ সেপ্টেম্বর : শুক্রবার ভর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার কসবার গুলশান কলোনীতে দুষ্কৃতীদের তান্ডবের ঘটনা ঘটেছে । স্কুটিতে চেপে আসা ৬ দুষ্কৃতী প্রকাশ্যে গুলি চালায় বলে অভিযোগ । রাস্তার পাশে দাঁড় করানো বাইক ও পাশের দোকানে ভাঙচুর করে । সেই ভিডিও সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে । ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ।
ভিডিওটি এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি শাসকদলের শ্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর নতুন নামকরণ করে রেখেছেন ‘মাফিয়া-মাস্তান-মার্ডারার’ ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,”মা-মাটি-মানুষ’ এর সরকার এখন শুধু ‘মাফিয়া-মাস্তান-মার্ডারার’-দের সরকারে পরিণত হয়েছে !!! অপরাধীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ বাইপাস সংলগ্ন আনন্দপুর থানা এলাকার গুলশন কলোনি। গতকাল সন্ধ্যায় আচমকাই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, শুরু হয় প্রকাশ্যে গোলাগুলি। ব্যবসায়ীরা হকচকিয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন চটজলদি, এলাকাবাসীরা আতঙ্কে ঘরের দরজায় ছিঁটকানি লাগান। কারা এই ভাবনাহীন বন্দুকবাজ? কি করে পায় এত সাহস? স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকার দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রায়ই তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকে। গতকাল উত্তেজনা চরমে ওঠে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’কলকাতার অপরাধ জগতের ‘অন্ধকূপ’ হলো গুলশান কলোনি! এই কলোনিতে প্রচুর বাংলাদেশী মুসলিমরা এসে ঘাঁটি গেড়েছে। প্রায়শই ভিন্রাজ্যের পুলিশ এসে ওই এলাকায় হানা দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে মাসের পর মাস লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের। কলকাতার একের পর এক অপরাধের ঘটনায় বার বার নাম জড়িয়েছে গুলশান কলোনির। ঘন জনবসতি এবং ঘিঞ্জি এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বেগ এই প্রথম নয়, আগেও একাধিক বার সেই কথা শোনা গিয়েছে পুলিশকর্তাদের মুখেই। কখনও ভরসন্ধ্যায় যুবককে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হচ্ছে, কখনও আবার দুই গোষ্ঠীর বিবাদে প্রকাশ্যেই মুড়ি মুড়কির মতো বোমা-গুলির বৃষ্টি হয়েছে।’
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে লিখেছেন,’সব জেনে শুনেও পুলিশ পরিস্থিতি আনতে কেন ব্যার্থ? কারণ খুব স্পষ্ট – শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর সিন্ডিকেটের লড়াই পুলিশ আটকাতে গেলে পুলিশের শীর্ষকর্তাদের চেয়ার টলে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের গুলশান কলোনির মতো জায়গায় নিরাপদে ঠাঁই দিয়েছে। এদের নাম বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, দলে নিয়ে নিজেদের অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তার করছে, আর সাধারণ নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে।
তাঁর সরকারের অপশাসনের কারণে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন অবাধে খুন, গুলি, বোমাবাজি নিরন্তর চলছে, আর এসবের পিছনে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা। পুলিশ সব কিছু জেনেও নিষ্ক্রিয়, তাই নাগরিক সুরক্ষা বিঘ্নিত, অর্থনীতি অস্তাচলে।’
জানা গেছে,কসবার গুলশান কলোনীর একটি কারখানাকে কেন্দ্র করে দুই দুষ্কৃতী দলের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদ চলছিল । মাঝে মধ্যেই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে । বৃহস্পতিবার একটি গোষ্ঠী এসে কারখানার মালিককে ভয় দেখায়। এরপর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়৷ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ অন্তত তিন রাউন্ড গুলি চলেছে। আহত হয় কারখানার মালিকসহ কয়েকজন । তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম পুলিশ জানতে পেরেছে বলে খবর।
এদিকে কলকাতার এন্টালি থানা এলাকা থেকে অস্ত্র-সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ দুষ্কৃতীকে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এন্টানি থানা এলাকার ক্যানাল রোড ও কনভেন্ট রোডের সংযোগস্থলে আহমেদ হোসেন ওরফে মহম্মদ মধু ও রাজা খান নামে ওই দুই দুষ্কৃতী ধরা পড়ে । রাজা তপসিয়া রোড এলাকার বাসিন্দা।অন্যদিকে, আহমেদ হোসেন আনন্দপুরে গুলশন কলোনির বাসিন্দা। তাদের কাছে একটি একনলা দেশি বন্দুক ও দুটি কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ । তাদের সঙ্গে সঙ্গে গুলশন কলোনির হামলার যোগ আছে কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।।