এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১১ সেপ্টেম্বর : জ্বরজ্বালা,গ্যাসঅম্বল হলে ঠিক আছে । কিন্তু এর বাইরে একটু আধটু মাথা বা পেট ব্যাথা হলেই ‘রেফার টু মেডিকেল কলেজ’ ! ফলে রাত- বিরেতে চরম সমস্যায় পড়তে হয় রোগীর আত্মীয়দের । যদিও হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার পরিকাঠামো নেই যে তা নয় । তার পরেও পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের ৷ এবারে খোদ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ভাতার হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুললো । আজ বৃহস্পতিবার ভাতার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের(বিএমওএইচ) অফিসে এসে কথায় কথায় বর্ধমান হাসপাতালে রেফারের বিরোধিতা ও রোগীর স্বজনদের সাথে মানবিক আচরণসহ ৫ দফা দাবিতে ডেপুটেশন দিলেন । ছিলেন ব্লক সভাপতি বাসুদেব যশ, সহ সভাপতি শুভ্রাংশু বুট, ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি অমিত হুই, যুবনেতা জুলফিকার আলী সহ আরও কয়েকজন প্রতিনিধি ।
উল্লেখ্য, ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অনেক দিন আগেই উন্নীত করা হয়েছে । গত ২৬ আগষ্ট বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে তার আনুষ্ঠানিকভাবে ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । হাসপাতালের শষ্যার সংখ্যা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি । এদিকে ইতিমধ্যেই স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ভবন নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে । কিন্তু নতুন পরিকাঠামোয় চিকিৎসা পরিষেবা এখনো শুরুই হয়নি ।
তৃণমূল সভাপতি বাসুদেব যশের কথায়, ‘ভাতার হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে যথেষ্ট সুনাম আছে । কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে দেখা গেছে । বিশেষ করে এলাকায় প্রায়শই শোনা যায় কথায় কথায় বর্ধমানে রেফার করে দেওয়া হয় রোগীদের । তাই আমরা চাই নাগরিক স্বার্থে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা যেন একটু মানবিক হন ।’ এখানে ভর্তি রেখেই চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হোক বলে তিনি দাবি জানান ।
প্রসঙ্গত,এক সময়ে ভাতার গ্রামীন হাসপাতালে দাঁত, নাক-কান-গলা সহ বিভিন্ন বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা করতেন । ভাতাড় ছাড়াও আশপাশের মন্তেশ্বর,আউশগ্রাম,মঙ্গলকোটসহ একাধিক ব্লক থেকে রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসত ভাতারে ৷ কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের মধ্য গগন থেকেই ভাতার হাসপাতালের অধঃপতন শুরু । তৃণমূল কংগ্রেস এসেও তার পরিবর্তন হয়নি । দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে হাসপাতালের বিকল হওয়া এক্স-রে মেশিন পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করা হয়নি । বিগত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সঙ্ঘমিত্রা ভৌমিকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠলেও রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর কোনো এক অজ্ঞাত কারনে তাকে সরানোর বিষয়ে উৎসাহ দেখায়নি৷ এনিয়ে চাপা ক্ষোভও ছিল এলাকায় । মূলত তার সময়েই ভাতার হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা হয় । কিন্তু পরিষেবার কোনো উন্নতিই হয়নি । বিশেষ করে কথায় কথায় বর্ধমানে রেফার করে দেওয়ায় বিপাকে পড়তে হত রোগীর স্বজনদের । যা এখনো সমান তালে সেই প্রবনতা চলছে বলে অভিযোগ । এদিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীর প্রবল চাপের জন্য রোগীকে ভর্তি করা নিয়ে ঘোর বিপাকে পড়তে হয় এলাকার বাসিন্দাদের ।
ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি শুভ্রাংশু বুট বলেন, ‘ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালের সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা এবং জলাতঙ্ক রোগের টিকাকরণ ইত্যাদি পরিষেবা নিয়ে সুনাম রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিয়ে বিতর্ক উঠছে। এটা কাম্য নয়। আমরা চাই এখানেই জটিল রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হোক । তাতে এলাকাবাসীর হয়রানি কমবে ।’
তবে আজ তৃণমূলের ডেপুটেশনের সময় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকৃতিরঞ্জন সাসমল অফিসে ছিলেন না । মেডিকেল অফিসার ডঃ সুকমল জানার হাতে তারা দাবিপত্রটি তুলে দিয়ে আসেন । তিনি জানিয়েছেন, দাবিপত্রটি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে ।।